নাম পরিচয় ও ঠিকানাহীন মেয়েটি অবশেষে স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছেন। মহা ধুমধামের সঙ্গে তাকে স্বামীর বাড়ি পাঠানো হয়েছে। এ দিনে তিনি তার সঠিক ঠিকানায় পোঁছালো। জীবনের ১৯টি বছর তার কেটেছে বিভিন্ন বেবি হোম, শিশু সদন ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে।
আফরিদা খাতুন নামে এ মেয়েটি এক বছর বয়সে ঠাঁই হয়েছিলো রাজশাহীর বেবি হোমে। ৬ বছর বয়সে তাকে পাঠানো হয় নওগাঁ শিশু পরিবারে। সেখান থেকে যশোর শিশু পরিবার হয়ে টুঙ্গীপাড়া শেখ রাসেল দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে।
মেয়েটি নিজের বাবা বা মায়ের নাম কিছুই জানে না। দেখতে দেখতে বছর পেরিয়েছে শিশু থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে তরুণী বয়সে পা দেয়। তাকে সঠিক জায়গায় পুনর্বাসনের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর ও টুঙ্গীপাড়া উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নেয়।
তারই অংশ হিসেবে শুক্রবার(০১ এপ্রিল) অন্য দশটি বিয়ের মতো সব অনুষ্ঠানিকতা করেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়। সবই দেওয়া হয়েছে পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দুই লাখ টাকা দেনমোহর কাবিন লেখা হয়। অনুষ্ঠানে মেয়ের উকিল বাবা পুনর্বাসন কেন্দ্রের হাউজ প্যারেন্ট মো. কামরুল জামান ঠাকুর। বিয়ে পড়ান মওলানা আব্দুর কাইয়ুম।
এ বিয়ে অনুষ্ঠানে উপহার সামগ্রী দিতে কোনো কিছুর কমতি রাখেনি প্রশাসন। কালার টিভি, ফ্রিজ, ডিনারসেট, সেলাই মেশিন, মুদি দোকানের মালামাল সামগ্রীসহ অন্যান্য গৃহস্থলী পণ্য।
আফরিদা খাতুনের বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে শেখ রাসেল দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নান রঙের পতাকা ও লাল-নীল-বেগুনী রঙের কাগজ কেটে রশিতে টানিয়ে সাজানো হয় পুরো পুনর্বাসন কেন্দ্রটি।
বৃহস্পতিবার( ৩১ মার্চ) গাঁয়ে হলুদ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শুক্রবার (০১ এপ্রিল) দিন-ভর চলে নানা অনুষ্ঠানিকতা। পুনর্বাসন কেন্দ্রটির তিন’শ নিবাসী নতুন আনন্দে মেতে ওঠে। সাউন্ড বক্স বাজিয়ে নেচে-গেয়ে আনন্দ-উল্লাহ করে তারা। শেষ বিকেলে নতুন দম্পতিকে স্থানীয় রীতিতে দুধ-ভাত খাইয়ে সব অনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিদায় জানানো হয়।
আফরিদা খাতুনকে বিয়ে দেওয়া হয় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের নাফিউর আসাদ রুবেলের সঙ্গে। ছেলেটি একজন মুদি দোকানি। বিয়ে অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০০ লোক খাওয়ানো হয়। খাদ্য তালিকায় ছিলো কাচ্চি বিরানী, মুরগীর রোস্ট, ডিম, দই, মিষ্টি ও কোমল পানীয়।
অনুষ্ঠানে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোমিনুর রহমান, টুঙ্গীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শফিউল্লাহ, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সমীর মল্লিক, ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক ফারহানা নাসরিণসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও আশাশুনি উপজেলার বরের এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কনে আফরিদা তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তার দাম্পত্য জীবনে সবার দোয়া ও আশির্বাদ কামনা করেন।
আফরিদার স্বামী নাফিউর আসাদ রুবেল তার স্ত্রীকে নিয়ে আগামী দিনে একটি সুন্দর ন্বপ্ন দেখার অঙ্গীকার নিয়ে বলেন, ‘সে (আফরিদা) জীবনে কিছুই পাইনি। না ছিলো কোনো পরিচয়, না ছিলো কোনো সুখ-সাচ্ছন্দ্য। আমি ওকে একটি নতুন ঠিকানা দিয়েছি, সেখানে সে সুখে থাকবে, ভাল থাকবে।’
সহকারী পরিচালক ফারহানা নাসরিন বলেন, ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানে নিয়মানুযায়ী মেয়েটির আর এখানে থাকার সুযোগ ছিলো না। তাকে আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পুনর্বাসনের চেষ্টা করেছি। যেহেতু তার বিয়ের বয়স হয়েছে, তাই তাকে পাত্রস্থ করার মাধ্যমে পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। মেয়েটির স্বামীকে পুনর্বাসন করার জন্যও সহযোগিতা করা হয়েছে। এতে নতুন দম্পতি সুখে-শান্তি থাকতে পারবে।
গোপালগঞ্জ জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সমীর মল্লিক বলেন, আট-দশটা মেয়ের যেমন বিয়ে হয়, আমরা তেমন অনুষ্ঠানিকতা করে তার বিয়ে দিয়েছি। আমরা আনুষ্ঠানিকতার কমতি রাখিনি। যাতে সে মনে না করে তার মা-বাবা নেই!
টুঙ্গীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মো. শফিউল্লাহ বলেন, টুঙ্গীপাড়া উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদপ্তর মেয়েটির একটি নতুন ঠিকানা দিতে পেরে আনন্দিত। এই নতুন দম্পতি যাতে সুখে থাকতে পারে। তার জন্য আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আগামীতেও আমরা খবর রাখবো ও সব ধরনের সহযোগিতার চেষ্টা করব। (বাংলানিউজ)
: আপডেট ৭:০৬ এএম, ২ মার্চ ২০১৬, শনিবার
ডিএইচ