জাতীয়

জমির রেজিস্ট্রির ৮ দিনের মধ্যে নামজারি প্রক্রিয়া মন্ত্রীসভায় অনুমোদন

জমির রেজিস্ট্রেশন শেষ হওয়ার আট দিনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারি নিশ্চিত করার প্রক্রিয়ায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।

সফটওয়্যার ব্যবহার করে স্বচ্ছতার সঙ্গে জমির রেজিস্ট্রেশন করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার নামজারি ও রেকর্ড সংশোধন হবে। এসি ল্যান্ডকে বাধ্যতামূলকভাবে সেই জমির রেকর্ড সংশোধন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘জমি রেজিস্ট্রেশন ও নামজারি কার্যক্রম সমন্বয় সাধনের’ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে জানান, এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে রেজিস্ট্রেশন স্বচ্ছ হবে, নামজারি এবং রেকার্ড সংশোধন অটোমেটিক হবে।

এ ছাড়া উত্তরাধীকার সূত্রে জমির মালিকানার বিষয়টিও এই সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আর তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও যেন জমির মালিকানা থেকে বঞ্চিত না হন তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

এই সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা দেশের মানুষ বড় সুবিধা দেবে, নতুন একটা অধ্যায় সৃষ্টি হবে এবং ধারণা যে মামলা-মোকদ্দমা অনেক কমে যাবে।

তিনি বলেন, অনেক দিন থেকে কার্যক্রম চলছিল। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন জমির রেজিস্ট্রেশন ও নিউট্রেশন কীভাবে আরও সহজ করা যায়, মানুষের হয়রানি না হয়, সময় যাতে কম লাগে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দুটি ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করা হয় বলে সমন্বয় করা কষ্টসাধ্য ছিল, এজন্য দীর্ঘসূত্রিতা ছিল। রেজিস্ট্রেশনে কিছুটা অস্পষ্টতা ছিল, যে কোনো জমি যে কেউ গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারত। আবার মিউট্রেশনের ক্ষেত্রের ঝামেলা হতো, দলিল পাওয়া যেত না, এলটি নোটিশ বোঝা যেত না, এ কারণে দীর্ঘদিন এগুলো পড়ে থাকত।

তিনি বলন, এখন থেকে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস এবং এসি ল্যান্ডের অফিসের মধ্যে ইন্টার অপারেটবল সফটওয়্যার থাকবে। বাংলাদেশের সব এসি ল্যান্ড অফিসের চার কোটি ৩০ লাখ রেকর্ডস অফ রাইটস অনলাইনে চলে এসেছে। এখন থেকে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস এবং এসি ল্যান্ড অফিসের একজন আরেকজনের ডাটাবেইজে ঢুকতে পারবে।

সচিব বলেন, যখন কেউ জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য যাবে, সাব-রেজিস্ট্রার আগের মতো সঙ্গে সঙ্গে রেজিস্ট্রি করে দেবে না, অনলাইনে এসি ল্যান্ডের অফিস থেকে রেকর্ড অব রাইটস এর স্ট্যাটাস জানবেন। রেসপন্সিভ সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেই তথ্য জানানো হবে। তখন এসি ল্যান্ডও জানবেন এই তথ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এলটি নোটিশ এমনভাবে লেখা ছিল যে অনেক সময় বোঝা যেত না। এখন ছোট ফরম করে দিয়েছি, সেটা পূরণ করলে সঙ্গে সঙ্গে এসি ল্যান্ডের কাছে চলে যাবে। জমি মিউটেশন করতে গেলে দলিল লাগে।

তিনি আরো বলেন, এতদিন বিধি যেটা ছিল দুটি দলিল করা হতো, যিনি দলিল করতে যান তিনি একটা পান, আরেকটা থাকে সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে। মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত দিয়েছে এখন থেকে তিনটি দলিল করতে হবে। একটা সাব-রেজিস্ট্রার, একটা এনকামমেন্ট এবং আরেকটি এলটি নোটিশের পাশাপাশি এসি ল্যান্ডের কাছে চলে যাবে।

আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, যেহেতু এসি ল্যান্ড দলিল ও এলটি নোটিশ অনলাইনে পেয়ে যাচ্ছেন, এই জমি তার কাছ থেকেই ভেরিফিকেশন করে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে সুতরাং এসি ল্যান্ডের আর কিছুই লাগবে না, ওই সফটওয়্যার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে মিউটেশন সম্পন্ন হবে। কাউকে ডাকতে হবে, পরবর্তীতে নোটিশ দেবেন বা সেও যদি এসে দরখাস্ত দেয় তবে সর্বোচ্চ আট দিনের মধ্যে এসি ল্যান্ড মিউট্রেশন করে দেবেন।

আরও পড়ুন- শিক্ষানীতি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার : শিক্ষামন্ত্রী

দেশের সব জমির রেজিস্ট্রেশন আর্কাইভ করার জন্য সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দুই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৭টি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা দেখেছি এটা খুব ভালোভাবে কাজ করছে। নামজারির জন্য আলাদা কোনো আবেদন করতে হবে না। আট দিনের মধ্যে নামজারি হয়ে যাবে। এসবের ম্যানুয়াল কপিও দেওয়া হবে। আমরা দেখছি জমির রেজিস্ট্রেশন করলেও অনেকে নামজারি করেন না।

এক বছরের কম সময়ের মধ্যে পুরো দেশে এই কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে হাতে লেখা যেসব তথ্য সেগুলো খু্ব পরিস্কার ছিল না। সাব-রেজিস্ট্রার নিজেও রেকর্ড অব রাইটস নিয়ে ক্লিয়ার থাকতেন না। আপনি যে কোনো দলিল নিয়ে রেজিস্ট্রশন করতে চাইলেই করে দিতেন কিন্তু এখন আর সে পারবে না। রেকর্ডস অব রাইটস দেখে তারপর তফসিলটা সফটওয়্যারের ইনপুট দিতে হবে। আগে ভেরিফিকেশনের কোনো সিস্টম না থাকায় যে কোনো জমি রেজিস্ট্রেশন করে দিতে পারত।

সচিব আরো বলেন, অনেকে রেজিস্ট্রেশন করে নামজারি করলেও রেকর্ড সংশোধন করেন না। এখন এসি ল্যান্ডের দায়িত্ব থাকবে মাসিক প্রতিবেদন দেবে এসিডি রেভিনিউ এবং ইউএনওর কাছে কতটি নামজারি হলো এবং কতটি রেকর্ড সংশোধন হলো। রেকর্ড সংশোধন করাটা এসি ল্যান্ডের দায়িত্ব হলেও অনেক ক্ষেত্রে তারা করতেন না। এখন লালকালি দিয়ে এসি ল্যান্ডকে রেকর্ড সংশোধন করতে হবে। আগে দলিল পেত না বলে অনেক সময় (নামজারি না করেও) বেঁচে যেতেন এখন আর সেটা হবে না।

এতদিন নামজারি করলেও ৫০-৬০ শতাংশই রেকর্ড সংশোধন করতেন না বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

উত্তরাধীকার সূত্রে জমির কে কতটুকু অংশ পাবে সেটাও এই সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আনোয়ারুল বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও যাতে বাবা-মায়ের জমি থেকে বঞ্চিত না নয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময় পর পর তহসিলদারদের রিপোর্ট দিতে হবে তার এলাকায় কোন লোক মারা গেছেন।

পয়সা ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কোনো কাজ হয় না বলে প্রচলিত আছে, এমন তথ্য জানানোর পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন সেই স্কোপ নেই। রেকর্ড কারেকশন পর্যন্ত কোনো স্কোপ নেই। করাপশনটা কমিয়ে নিয়ে আসব। বেচাকেনা যেখানে যে মাত্র সাব-রেজিস্ট্রর এসি ল্যান্ডের কাছে এন্ট্রি দিয়ে দেবেন এই জমির রেকর্ড অব রাইটস-এর স্ট্যাটাস কি, তখন তো আর দেরি করতে পারবেন না। কারণ জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে রিপোর্ট দেবে। এসি ল্যান্ডও দেরি করতে পারবেন না। ধরা পড়ে যাবেন। ৭৫ শতাংশ দুর্নীতি স্টেটওয়েতে কমে যাবে।

সচিব আরো বলেন, আমাদের হিসাব হলো, জমিকে কেন্দ্র করেই ৭৫ শতাংশ মামলা হয়। এটা হয়ে গেলে ৫০ শতাংশ মামলা কমে যাবে। মানুষের জীবনযাত্রাও অনেকটা কমফোর্ট হয়ে যাবে, জমিজমা নিয়ে যে একটা টেনশন বা আনক্লিয়ার একটা সিনারিও এটা থেকে তারা মুক্তি পাবেন। তহসিলদারের কোনো সম্পৃকতা আর থাকছে না।

Share