চাঁদপুর

নাব্যতা সঙ্কটে চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌ-রুটে ফেরি চলাচল ব্যহত

নাব্যতা সঙ্কটে চাঁদপুর মেঘনায় আটকে যাচ্ছে ফেরি। ঘাটে ভিড়তে পারছে না যাত্রীবাহী লঞ্চ। আনলোডে গাড়ি নিয়ে ফেরি চলাচল করছে। যে কোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিস।

জানা যায়, শরীয়তপুর পয়েন্টের বেড়াচাক্কী ও চাঁদপুর পয়েন্টের লক্ষ্মীরচর এলাকায় বর্ষার পানি কমতে না কমতে চর-ডুবোচর জেগে উঠেছে। যতই দিন যাচ্ছে এসব এলাকাগুলোতে নাব্যতা সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

গত একমাস ধরে শরীয়তপুর-নরসিংহপুর ফেরি লঞ্চঘাটে কোনো লঞ্চ ভিড়তে পারছে না। লক্ষ্মীর চরের মাথায় ঈদগাহ ফেরিঘাট-চাঁদপুর-ঢাকা নৌ-রুটের যাত্রী উঠানামা করে লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এতে যাত্রী সাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঘাটে লঞ্চ ভিড়তে পারছে না। নৌকার সাহায্যে যাত্রীরা লঞ্চে ওঠানামা করছে।

অপরদিকে চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিসের ব্যবস্থাপক ও বিআইডব্লিউটিসির কমার্শিয়াল ম্যানেজার ইমরান খান রুহান চাঁদপুর টাইমসকে জানিয়েছেন, ‘গেল সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস থেকেই মেঘনা নদীর বেড়াচাক্কী ও লক্ষ্মীর চর নামক স্থান দিয়ে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দেয়। কয়েকবার গাড়ি ও যাত্রী নিয়ে ফেরি আটকেও যায়। জোয়ারে তা রক্ষা পায়।’

তিনি আরো জানান, চাঁদপুর-হরিণা লক্ষ্মীরচর-আলুবাজার এই ফেরি সার্ভিসের ১০ কিলোমিটার নৌ-পথ রয়েছে। এর মধ্যে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার এলাকার মেঘনা নদীতে রয়েছে নাব্যতা সঙ্কট। ৩টি ফেরি এখন চলাচল করছে। ধারণ ক্ষমতার অর্ধেকেরও কম গাড়ি নিয়ে ফেরিগুলোকে যাতায়াত করতে হয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ৫ থেকে ৬টি ট্রাক ও ২টি খুলনাগামী যাত্রী নিয়ে ফেরী কলমীলতা চাঁদপুর থেকে ছেড়ে যায়।

বেশি যানবাহন নিয়ে ফেরিগুলো চলাচল করতে পারছে না। নদীতে ড্রেজিং কাজ চললেও ডুবুচরগুলো ভেসে উঠছে যার ফলে ফেরি চলাচল বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএর গাড়ি পার্কিং স্থানে চাঁদপুর হয়ে দক্ষিণাললগামী কয়েক’শ পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়ে রয়েছে। এ কারণে ফেরি সঙ্কট না থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত গাড়ি বহন করতে না পরায় দুই পাড়ে গাড়ি আটকে পড়াটা স্বাভাবিক।

হরিণা ও ঈদগাহ ফেরিঘাটে সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে দু’পাড়ের অনেক গাড়ি নদী পারাপার হতে পারছে না। বেরাচাক্কি ও লক্ষ্মীর চরের মুখেই বিরাট ডুবোচর। জোয়ারের উপর নিভর করে ফেরি কলমিলতা, ফেরি কেতকী ও কস্তুরী এ তিনটি ফেরি এ রূটে চলাচল করছে। ফেরি চলাচলের জন্য ন্যূনতম ৭ ফুট গভীরতার পানির প্রয়োজন। বেড়াচাক্কী ও লক্ষ্মীরচর স্থান দিয়ে পানি আছে ৪ ফুট। শুষ্ক মওসুমের সামনের দিনগুলোতে এ সঙ্কট আরও বাড়বে।

অপর একটি সূত্রে জানা যায়, নৌ মন্ত্রণালয় চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিস স্বাভাবিক রাখার জন্যে শুষ্ক মওসুমের আগেভাগেই ফেরি চলাচলের নৌ-চ্যানেলে ড্রেজিং করার জন্যে দু’টি ড্রেজার প্রেরণ করে। বিআইডব্লিউটিএ-এর ড্রেজিং বিভাগ ড্রেজিং কাজটি সরাসরি মনিটরিং করছে।

এদিকে গত ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ঈদগাহ ফেরিঘাটে ড্রেজার দু’টি খনন কাজ শুরু করলেও ঈদগাহ-নরসিংহপুর ফেরি নৌ-চ্যানেলের মুখের গভীরতা ফিরিয়ে আনতে পারেনি।

প্রতিবছরই শুল্ক মওসুমে ড্রেজিং করা হয়। কিন্তু নাব্যতা সঙ্কট কমছে না বরং বাড়ছেই। এ পরিস্থিতি কত দিন চলতে থাকবে জিজ্ঞাসা এ পথে আসা পরিবহন শ্রমিক ও পরিবহনের যাত্রী সাধারণের।

চরম ভোগান্তির শিকার হলেও ভুক্তভোগীদের দুর্দশা নিরসন হচ্ছে না। গত ১৫ বছরেও স্বাভাবিক হতে পারেনি ফেরি যাতায়াত কার্যক্রম। পরিবহন শ্রমিক ব্যবসায়ী ও যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি যেনো নিত্য সঙ্গী।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও এই ফেরি সার্ভিসের বিষয়ে উদাসীন। এখন পর্যন্ত রো-রো ফেরি এ রুটে দেয়া হয়নি।

পুরানো তিনটি মাঝারি আকারের ফেরি এখন চলাচল করছে। তার ওপর ফেরি নৌ-চ্যানেলে নাব্যতা সঙ্কটে ফেরি আটকা পড়ায় সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের ২৫ এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করেন।

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৬:০০ এএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৬, শনিবার
ডিএইচ

About The Author

প্রতিবেদক- শরীফুল ইসলাম
Share