Home / উপজেলা সংবাদ / কচুয়া / পরিবার থেকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়া স্কুলছাত্রীর করুণ গল্প
পরিবার থেকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়া স্কুলছাত্রীর করুণ গল্প

পরিবার থেকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়া স্কুলছাত্রীর করুণ গল্প

বাবার পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি ও সৎ মা-বোনের অত্যাচারে ৮ মাস ধরে বাড়ি ছাড়া ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রী । বাড়ি ছাড়া হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে কাজের নামে হয়েছে পাশবিক নির্যাতনের শিকার।

মেয়েটিকে চাঁদপুর জেলা ইউনিটি ফর ইউনির্ভাস হিউম্যান রাইটস্ অফ বাংলাদেশ শাখার চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান রনির হাজীগঞ্জ অফিসে নিয়ে আসেন শাহারাস্তি উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি ইব্রাহীম খলিল পাটওয়ারী।

মেয়েটির সাথে আলাপকালে বেরিয়ে আসে নির্যাতন আর অবহেলার ৮ মাসের নির্মম চিত্র।

মেয়েটির পরিচয় জানা যায়, সে কচুয়া উপজেলার ১২নং আশ্রাফপুর ইউনিয়নের চক্রা গ্রামের রতন কাজী বাড়ির মো.সেলিম কাজীর প্রথম স্ত্রী সেলিনা বেগমের দ্বিতীয় মেয়ে শিরিন সীফা সোনিয়া।

বাবা বর্তমানে চট্রগ্রাম রিয়াজউদ্দিন বাজারে কর্মরত। এরই মধ্যে সে বিয়ে করেছে একাধিক। প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক ছেলে, তিন মেয়ে। এদের মধ্যে তার বেড়ে উঠা মেয়েটির।

সৎ মায়ের অত্যাচার ভাই বোনদের উদাসীনতার মাঝে প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষা শেষে জগতপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরই মধ্যে পড়ালেখার খরচ চালাতে গিয়ে মেয়েটির পাঠ্যবই ছিড়ে পেলে সৎ মা শারমিন আক্তার দিপা। ব্ন্ধ হয়ে যায় তার শিক্ষার আলো।

একপর্যায়ে সৎ মায়ের সাথে মেয়েটির মিল না হওয়ায় আশ্রাফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ এলাহী সুভাষ এর কার্যলয়ে বিষয়টি নিয়ে শালিস বসা হয়, সেখানকার সিদ্ধান্তে চেয়ারম্যান নিজেই মেয়েটির পড়ালেখার দায়িত্ব নেন।

পরে চেয়ারম্যান তার গ্রামের বাড়িতে না রেখে, চক্রা কবিরাজ বাড়ির সুজন নামের এক হিন্দু ছেলেকে দিয়ে তার ঢাকার বাসায় পাঠিয়েদেন। সেখানে পড়ালেখা না করিয়ে চেয়ারম্যানের স্ত্রী বাসায় ঝিঁয়ের কাজ করাতো এবং আগত বিভিন্ন ছেলেদের খারাপ নজরে পড়ার অজুহাতে ৩ মাস পর চেয়ারম্যানের স্ত্রী ওই সুজনকে দিয়ে মেয়েটিকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেন।

কিন্তু হিন্দু ছেলে সুজন মেয়েটিকে কচুয়ায় না এনে সিলেট জিন্দাবাজার জহির নামের এক বন্ধুর বাসায় রেখে আসে। সেখানে মেয়েটিকে বিয়ে করার জন্য জহিরের মাধ্যমে হিন্দু ছেলে সুজন প্রস্তাব দেয়। ৩ মাস থাকার পর এক পর্যায় মেয়েটিকে জহিরের কাছে থেকে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে গ্রামের বাড়ি চক্রায় চলে আসে।

কিন্তু সেখানে আসার পর বাবা ও সৎ মা কোন স্থান না দেয়ায় মেয়েটি তার স্কুল বান্ধবী খাদিজার নানি শাহারাস্তি উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়নের সংরক্ষিত ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার রহিমা বেগমের বাসায় আশ্রয় নেয়।

পরে রহিমা বেগমের মেয়ে সালমার ঢাকার বাসায় রাখেন। সেখানে ১ মাস থাকার পর ঢাকার উত্তরায় সালমার বাসুরের স্ত্রী রিমের বাসায় রাখে। সেখানেও প্রায় ২মাস থাকার পর মেয়েটির গ্রামের জসিম নামের বড় ভাইয়ের সাথে দেখা হয়।

পরে জসিম মেয়েটিকে তার বাসায় নিয়ে আসে এবং স্ত্রীর বিউটি পার্লারের কাজ দেয়। সেখানে সেখান থেকে পালিয়ে নিজ বাড়িতে পুনরায় ফিরে আসে।

মেয়েটির পরিবার যায়গা না দেওয়ায় গত ২৫ মার্চ পাশ্ববর্তী শাহারাস্তি উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বাহার বাবুলের ঘরের সামনে বসে থাকে।

বাবুলের স্ত্রী হাসনা বেগম মেয়েটির কথা শুনে শাহারাস্তি উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি ইব্রাহীম খলিল পাটওয়ারীর বাসায় আশ্রয় নেয়।

বর্তমানে মেয়েটি ওই নেতার বাসায় আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে। আশ্রয়দানকারী ইব্রাহীম খলিল মেয়েটির বাবা সেলিম কাজীর সাথে যোগাযোগ করলে বাবা তার সম্পর্কে কোন দায়-দায়িত্ব নিতে রাজি হননি।

ওই নেতা উপায়ন্ত না পেয়ে চাঁদপুর জেলা ইউনিটি ফর ইউনির্ভাস হিউম্যান রাইটস অফ বাংলাদেশ শাখার চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান রনির হাজীগঞ্জ অফিসে মেয়েটিকে নিয়ে আসেন।

উভয় পক্ষ মিলে গত ২৯ মার্চ চাঁদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে মেয়েটিকে নিয়ে আসেন। সেখানে মেয়েটির কথা শুনে তার বাবাকে আসার নির্দেশ দেওয়া হলেও আসবে বলে এখনো মেয়েটি পথ চেয়ে আছে।

মেয়েটি মন্তব্যে কান্না সুরে বলেন, ‘আমি গত ৮ মাসে বিভিন্ন যায়গায় বিভিন্ন ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। এখন সব ভুলে অন্য আট দশ জন মেয়ের মত আমিও পড়াশুনা করতে চাই। কিন্তু সে কিভাবে পড়াশুনা করবো আমার পরিবার আমাকে আশ্রয় দিচ্ছে না।’

মেয়েটির বাবা সেলিম কাজীর সাথে যোগাযোগ করলে সে বলেন, ‘সে আমার মেয়ে নয়, আমার অবাধ্য হয়ে সে বেপরোয়া চলাফেরা করছে, আমি তাকে ছিনতে রাজি না।’

এ বিষয়ে মেয়েটিকে প্রথম আশ্রয়দানকারী কচুয়া ১২ নং আশ্রাফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ এলাহী সুভাষের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অমি এমন ঘটনার সাথে জড়িত নই। এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

চাঁদপুর জেলা ইউনিটি ফর ইউনির্ভাস হিউম্যান রাইটস অফ বাংলাদেশ শাখার চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান রনি বলেন, ‘আমার কাছে মেয়েটিকে নিয়ে আসার পর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে মেয়েটিকে নিয়ে যাই। তিনি মেয়েটির কথা শুনার পর সোমবার পুণরায় তাঁর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন এবং মেয়েটির বাবাকে ওই দিন হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।’

কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জগতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহাজাহান শিশির বলেন, ‘মেয়েটির বিষয়টি শুনেছি এর সাথে জড়িত চেয়ারম্যান দায়িত্ব অবহেলা করে তার উপর নির্মম অত্যাচার হয়েছে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া ঠিক হবে না। এরইমধ্যে আমি স্থানীয় এমপি ড.মহিউদ্দিন খান আলমগীর স্যারকে অবগতি করেছি। প্রয়োজনে পুলিশ সুপারের সাথে এ বিষয়ে কথা বলবো।’

প্রতিবেদক- জহিরুল ইসলাম জয়
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১২: ১০ এএম, ৪ এপ্রিল ২০১৭, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Leave a Reply