Home / জাতীয় / রাজনীতি / নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বিএনপি
নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বিএনপি

নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বিএনপি

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বিএনপি। দল পুনর্গঠন, দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণ, কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি, জাতীয় সংলাপ, নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-গ্রেফতার, আগাম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদায়, দলীয় কর্মপরিকল্পনাসহ নানা সমীকরণ এখন দলটিতে।

শারীরিক চিকিৎসা শেষে দুই মাসের বেশী সময় পর শনিবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি গুলশান অফিসে বসেন। এ সময় জ্যেষ্ঠ নেতারা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। দীর্ঘদিন পর তাকে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন দলের নেতা-কর্মীরা।

পরেরদিন বুধবার রাতে তিনি দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। রাত ৯টার দিকে বৈঠক শুরু হয়ে ১১টা ১০ মিনিট পর্যন্ত চলে।

বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, উপদেষ্টা ওসমান ফারুক, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, এম এ কাইয়ুম, শামসুজ্জামান দুদু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন।

পরে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও মুখপাত্র ডা. আসাদুজ্জামান রিপন জানান, ‘বৈঠকে সবাই পৌরসভা নির্বাচনে যাওয়া ও না যাওয়ার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন। সবাই খোলামেলা আলোচনা করেছেন। সবার বক্তব্যের নোট নেওয়া হয়েছে। এগুলো লিখিত আকারে চেয়ারপারসনকে দেওয়া হবে। বৈঠকে দলীয় চেয়ারপারসনকে পৌর নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া পরে বিষয়টি জানাবেন।’

দল পুনর্গঠন, দলীয় কাউন্সিলসহ দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘দেশের চলমান সংকট মোকাবিলায় নেত্রী নিশ্চয়ই একটা চিন্তা করেছেন। এটা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) জাতীয় সংলাপের ডাক দিয়েছেন। সুশীলসমাজ, দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে সংকট উত্তরণে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এটা বাস্তবায়নে নিশ্চয়ই তিনি আবারও আনুষ্ঠানিকভাবে ডাক দিবেন।’

এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে তিনি ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সন্ধ্যায় সফররত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও তার বৈঠক হয়।

দলের মধ্যমসারির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সব কিছু ঘোষণা দিয়ে ঠিক করা যায় না। কিছু বিষয় আছে, যা নেত্রীর একক সিদ্ধান্তে করতে হবে। পরিস্থিতির বিবেচনায় পরিকল্পনা করতে হবে, বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেতা-কর্মীদের। আশা করি সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা বিবেচনায় নিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে দাবী আদায়ে নেত্রী আগামী দিনে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০০৯ সালে বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। দলের একজন পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব নেই। এভাবে একটি দল চলতে পারে না। পর পর দুইবার আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছি আমরা। এভাবে চলতে থাকলে বিএনপির অস্তিত্ব নিয়ে টান দেবে। সরকারের জুলুম-নির্যাতনের কারণে জনগণ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। সেই সুযোগ বিএনপিকে কাজে লাগতে হবে।’

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘চিকিৎসা নিয়ে নেত্রী দেশে ফিরেছেন। দুই-এক দিনের মধ্যে তিনি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করবেন।’

দলীয় প্রতীকে ৩০ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। অবশ্যই আমরা পৌর নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। সেটা নির্ভর করে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের আচরণের ওপর। নেত্রী দলের সিনিয়র সদস্যদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন।’

‘৫ জানুয়ারিকে আমরা কালো দিবস হিসেবে বলে থাকি, ওই দিনটিকে ঘিরেও বিএনপির কর্মসূচি আসতে পারে। সব কিছুই আলোচনার মাধ্যমে নেত্রী সিদ্ধান্ত নিবেন।’ বলেন সাবেক এই ছাত্রনেতা।

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান বলেন, ‘প্রতিটি জেলায় কাউন্সিলের মাধ্যমে দল (বিএনপি) পুনর্গঠনের কাজ চলছে। নেত্রী দেশে ফিরেছেন এখন গতিটা আরও বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ম্যাডাম দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের দিন-তারিখ নির্ধারণ করবেন।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের দফতর সম্পাদক মো. আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ‘নেত্রী দেশে ফিরেছেন। স্বাভাবিকভাবেই আমরা উজ্জীবিত। আগামী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দল পুনর্গঠনের পাশাপাশি সক্রিয় আন্দোলনের ডাক দিবেন।’

‘গত দিনে যারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন তাদের নেতৃত্বে এনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনকে সফলতা দিকে নিয়ে যাবে।’ বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৫:০৮ পিএম,  ২৭ নভেম্বর ২০১৫,  শুক্রবার

এমআরআর