আন্তর্জাতিক

নাতিকে গুলি থেকে বাঁচিয়ে নিজে মরলেন বশির

গুলিতে ঝাঁঝরা বৃদ্ধের নিথর দেহ পড়ে ছিল রাস্তায়। ছোট্ট শিশু তার বুকের উপরে বসে অঝোরে কেঁদেছে। রক্তে মেখে যাওয়া দাদুর দেহ আর তার নাতির কান্নার ছবি ইন্টারনেটে ঘুরছে।

ভাইরাল হয়ে গেছে নাতির ভিডিও। কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতকামীদের সংঘর্ষের খবরটা সে কারণে অন্যসব দিনের চেয়ে আলাদা হয়ে ঝাঁকিয়ে দিয়েছে সারা ভারতকে।

পুলিশ বলছে, ৬৫ বছরের বশির আহমেদ খান ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামীদের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে মারা গেছেন। ওই সংঘর্ষেই নিহত হয়েছেন সিআরপি-র হেড কনস্টেবল দীপচন্দ বর্মা।

বশিরের নাতির নাম আয়াদ। ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ তাকে উদ্ধারের খবর জানাতেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা।

তিনি বলেছেন, রক্তাক্ত কাশ্মীরের প্রতিটি ঘটনাই আজ প্রচারের হাতিয়ার। তিন বছরের শিশুও। বিকেলের মধ্যেই সেই ছবি নিয়ে জাতীয় স্তরে বিতর্ক বাঁধিয়েছেন বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র।

আয়াদ ও তার দাদুর ওই ছবি টুইট করে সম্বিত ক্যাপশন দিয়েছেন, পুলিৎজার-প্রেমীরা?? তার তির বিরোধীদের দিকেই। ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পরে অবরুদ্ধ কাশ্মীরের ছবি তুলে তিন চিত্রসাংবাদিক পুলিৎজার পুরস্কার পাওয়ায় তাদের অভিনন্দন জানিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তএনা সম্বিতই বিরোধীদের আক্রমণ করেছিলেন। আজ নাম-না করে তিনি রাহুলদের জবাব চেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু অসহায়-আতঙ্কগ্রস্ত শিশুটির ছবি সেই কাজে ব্যবহার করে সমাজমাধ্যমে তীব্র নিন্দার মুখেও পড়েছেন।

‘সমস্ত সীমা পেরিয়ে যাওয়া’ সম্বিতকে বয়কটের ডাক উঠেছে। অভিনেত্রী দিয়া মির্জা বিজেপির এই মুখপাত্রের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়েছেন, আপনার মধ্যে কি একবিন্দু মায়াদয়া নেই?

আয়াদের দাদু শ্রীনগরের বাসিন্দা বশির ছিলেন নির্মাণ সংস্থার ঠিকাদার। বুধবার সকালে ব্যবসার কাজে গাড়ি চালিয়ে সোপোরে যাচ্ছিলেন তিনি। ঘণ্টা দুয়েকের পথ। সঙ্গে নিয়েছিলেন বছর তিনেকের নাতিকে। উত্তর কাশ্মীরের বারামুলা জেলায় ‘আপেলের শহর’ সোপোর।

সেখানেই যে গতকাল সিআরপি-র সঙ্গে স্বাধীনতাকামীদের ধুন্ধুমার লড়াই লেগেছে, দাদু-নাতি জানবে কী করে!

পুলিশ বলছে, সকাল ৮টা নাগাদ সোপোরে সিআরপি-র টহলদার জওয়ানদের লক্ষ্য করে গুলি ছুটে আসে একটি মসজিদের চিলেকোঠা থেকে। লড়াই লেগে যায়। আর সেই লড়াইয়ের মধ্যেই এসে পড়ে বশিরের গাড়ি।

প্রথমে গাড়ি ঘোরাতে চেয়েছিলেন বশির। কিন্তু পারেননি। নাতিকে আঁকড়ে গাড়ি থেকে নেমে আড়াল খুঁজছিলেন। তখনই ঠিক কোন দিক থেকে গুলি ছুটে এসে তার শরীর ফুঁড়ে দিয়েছিল, জানা যায়নি। মরতে মরতেও আয়াদকে জড়িয়ে রেখেছিলেন বশির। আঁচড় লাগেনি নাতির গায়ে।

ক্রমশ স্বাধীনতাকামীরা পিছু হটেছে। মসজিদে গিয়ে দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পেলেও কোনো স্বাধীনতাকামীকে হাতে পায়নি সিআরপি। জখম হয়েছেন তিন জওয়ান ভোয়া রাজেশ, দীপক পাটিল, নীলেশ চৌডে।

কিন্তু খবর ছড়িয়ে পড়তেই মাথাচাড়া দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ। গত সপ্তাহেও অনন্তনাগে সেনা-স্বাধীনতাকামী সংঘর্ষে ছয় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আজ বশিরের ছেলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন, তার বাবাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে গুলি করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।

যার পাল্টা বিবৃতি দিয়ে সিআরপি-র এডিজি জুলফিকার হাসান বলেছেন, ওই ব্যক্তিকে স্বাধীনতাকামীরা মেরেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমান্তের ওপার থেকে এসব কথা ছড়ানো হচ্ছে। কেউ ভাবেনি স্বাধীনতাকামীরা ধর্মীয় স্থাপনাতেও ঘাঁটি গাড়বে। -আনন্দবাজার

বার্তা কক্ষ,২ জুলাই ২০২০

Share