Saturday, May 23, 2015 07:48:39 PM
রফিকুজ্জামান রণি :
জগৎবিখ্যাত নাট্যজন সফোক্লিস এবং শেক্সপিয়ারের নাটকই স্মরণ করিয়ে দেয়, শুধুমাত্র আনন্দ-উল্লাসের জন্যেই নাটক সৃষ্টি হয় না। যদি কোনো কিছুর নাম দেয়া হতো সমাজের আতসী-আয়না তাহলে বোধহয় নাটকের নামটাই সর্বাগ্রে উচ্চারিত হতো। সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বচিন্তার ছায়াপাতই নাটকের প্রধান ও প্রাতঃস্মরণীয় ক্ষেত্রঘর। বাংলাদেশের মুনির চৌধুরী, সেলিম আল দীন, মমতাজউদ্দিন আহমেদসহ অসংখ্য প্রণম্য নাট্যরচয়িতার দিকে তাকালেই প্রমাণ মেলে হাসি-ঠাট্টা, কান্নাকাটি ও দ্রোহ-উল্লাসের আদতেও ঘাসের সাপের মতো নাটকের ভেতরে লুকিয়ে থাকে গভীরতম এক বস্তু। সমাজ-রাষ্ট্র, অন্তর্জাতিক অঙ্গনের দুঃখ, দুর্দশা, আনন্দ-বেদনার দৃশ্যলীলাই নাটকের ভেতরে ঝলক দিয়ে ওঠে। নাটকই হচ্ছে সমাজ সভ্যতার প্রতিবিম্ব, সময়ের প্রতিনিধি। কেবল হাসি-ঠাট্টার রঙ্গমঞ্চে জন্ম নেয়া কোনো শিল্পই বেশিদিন স্থায়িত্ব লাভ করতে পারে না। সমাজ বাস্তবতাকে উপজীব্য করে রচিত সৃষ্টিকর্মই বেঁচে থাকে অনন্তকাল, এগিয়ে যায় কাল ছেড়ে কালান্তরে।
সম্প্রতি চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চায়ন হয়েছে বিক্ষিপ্ত চিত্রসজ্জিত সমাজসচেতনমূলক একটি চমৎকার নাটক। সংকেত। চাঁদপুরের সুপরিচিত নাট্যজন জসীম মেহেদী রচিত সংকেত নাটকটি প্রযোজনা করেছে রংধনু সংস্কৃতিক সংগঠন। পুরো নাটকটিই ছোট ছোট অংশে ভাগ করা। সাদামাটা আর চিরায়ত বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নাটকটি রচনা ও উপস্থাপনা করা হয়েছে। শৈল্পিক উপস্থাপনা এবং সৃষ্টির মাধুর্য চোখে পড়ার মতো। খ-খ- চিত্রাভিনয়ের মধ্যই সমাজের চিরকালীন দৃশ্যপট এবং বিদ্যমান ক্ষতচিহ্ন চোখের সামনে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। নগণ্য হরিজন গোষ্ঠী, আমরা যাদের মেথর কিংবা ঝাড়–দার বলে গালি ঝাড়ি। রুক্ষ আচরণ করি হররোজ। দেখামাত্রই মুখ সরিয়ে নেই ঘৃণায়। আশ্চর্য! তারাই কিন্তু আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে মনের স্বস্তি ফিরিয়ে দেয়। দূর করে দেয় ক্লান্তির কালিমা। যারাই সুন্দর পরিবেশ উপহার দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে অথচ তাদেরই দেহসৌষ্ঠব দেখে আমাদের মুখে থু-থু চলে আসে! এমনই বৈষম্য আচরণের চমৎকার ফুটে ওঠেছে সংকেত নাটকে। তাছাড়া নেশা দ্রব্যের প্রভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়া মানবসমাজের হালচিত্র আর আবেগের তাড়নায় মারাত্মক ভুলপথে ধাবিত হওয়ার ইঙ্গিতও নাটকের বিশেষ অংশে চোখে ধরা পড়ে। নেশাগ্রস্ত মানুষের পরিবারের অসহায়ত্বের পাশাপাশি পতিতাবৃত্তির ভয়ঙ্কর প্রতিচ্ছবিও নাটকটির মধ্যে সুন্দরভাবে ফুটে ওঠেছে। ফুটে ওঠছে প্রতাপ-প্রতিপত্তির জন্যে মানুষের নানামাত্রিক প্রতারণার প্রতিচিত্র।
তবে মাইক্রোফোন আর শব্দতরঙ্গের দুর্বল ব্যবস্থাপনা, দৃশ্যসূচির পূর্বাংশে মঞ্চাগত কথকের একেবারেই সাদামাটা ও আকর্ষণহীন বলার ঢং নাটকটির কিছুটা হলেও অঙ্গহানী করেছে। এরবাইরেও অভিনয়ের ক্ষেত্রে কারো কারো সাবলীলতা খুইয়ে ফেলতেও দেখেছি। সে যাইহোক। রংধনু সাংস্কৃতিক সংগঠনটি নতুন একটি সংগঠন। ভুলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। তাই তাদের ক্ষুদ্রায়ু সংসারের মধ্যে কিছুটা টানাপোড়ন তো থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে স্বল্পায়ু একটি সংগঠন হিসেবে তাদের উপস্থাপনা মুগ্ধ করার মতোÑএটা অস্বাীকার করার কারণ নেই। নাটকের থিম আর রচনাকলাও বেশ চমৎকার। সমালোচনার অবকাশ থাকলেও নাটকটির মধ্যে দর্শক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন বলে ধারণা করি। নাটকে শিরোনামও সংকেত হওয়ার যথার্থতা পাওয়া যায় যায় বাস্তবতার সুনিপুণ ইঙ্গিতময়তার দিকে দৃষ্টিপাত করলে।
সংকেত নাটককে অভিনয় করেছেন যথাক্রমে, ফরজানা (সোনাই), শামিম, (কালা), দীপা (জনাব ভানু), মোক্তার হোসেন পাটওয়ারী, (রশিদ সর্দার), চেরাগ আলী (জীবন), মতি (রকিব), কাশেম (বাপ্পী), হাশেম মাতাব্বর (মোক্তার), ডাক্তার, (ইমরান), জয়নাল (হোসাইন), হাবিব (রায়হান), ভদ্রলোক (ফারদীন, বৌদি (সাগর), নেশাখোর (মাহবুব ও সুজন)। নাটকটি রচনা করেছেন কবি জসীম মেহেদী, নির্দেশনা দিয়েছেন মেহেদী হাসান জীবন।
লেখক পরিচিতি : রফিকুজ্জামান রণি, সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক চাঁদপুর বার্তা, চাঁদপুর। মোবাইল : ০১৮২৮৫৫৯০৯৩, ০১৯২৪৬৮৫২৯৩।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫
নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে লাইক দিন : www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।