চাঁদপুর আল-আমিন একাডেমির প্রবীণ ও সিনিয়র শিক্ষককে মুঠোফোনে গালাগাল, শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে অসাধাচরণ ও গ্রুপিং তৈরির বিষয়ে অভিযুক্ত প্রিন্সিপাল ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) ড. গাফফারকে অব্যহতি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি।
গভর্নিং বডির সদস্য ও বর্তমান টিচার ইনচার্জ মকবুল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তার বিরুদ্ধে শিক্ষদের অনস্থা ও ছাত্রদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গত ২৫ জুন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। শিক্ষকদের সাথে অসাধাচরণ, অর্থ কেলেঙ্কারি, অভিগ্যতা সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগের তদন্তে দোষি সাব্যস্ত হওয়ায় আল আমিন একাডেমীর ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জের পদ থেকে ড. আব্দুল গাফফারকে অব্যহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিলো তদন্ত কমিটির ওই প্রতিবেদনে।
এদিকে অনেকটা চাপের মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ট্রাস্ট আল-আমিন সোসাইটির চেয়ারম্যান ও গভর্নিং বডির সভাপতি ড. গাফফারকে অব্যহতি দিয়ে ঢাকায় তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে চাকরির দেয়ার ব্যবস্থা করছেন এবং আল আমিন একাডেমিতে নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে সাবকে সেনা কর্মকর্তাকে নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
অব্যহতির দীর্ঘসূত্রতার নাটকীয়তার পেছনে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ট্রাস্ট আল-আমিন সোসাইটির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল্লাহর সাথে নাটোর জেলার বাসিন্দা ড. গাফফারের কথিত পারিবারিক সম্পর্ককে দায়ী করেছেন প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক।
অপরদিকে তদন্তে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অব্যহতি ও ছুটিতে থাকা অবস্থায় তার অপছন্দের যেসব শিক্ষককে বদলি ও বেতনভাতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, তাদেরকে স্বপদে বহাল রাখতে সুপারিশ করা হয়।
সাবেক অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শফিকুর রহমান ও অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া।
এর আগে সাবেক ছাত্রদের আন্দোলন ও অধিকাংশ শিক্ষকদের অনাস্থার প্রেক্ষিতে ১৩ এপ্রিলে ট্রাস্ট ও গভর্নিং বডির সভায় তাকে ১ মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। ১ মাস পরেও উদ্ভুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় এ ছুটিকে বহাল রাখা হয়। একই তারিখের ওই সভায় নতুন পদ সৃষ্টিপূর্বক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র শিক্ষক মকবুল আহমেদকে টিচার্স ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এর পর থেকে মূল ক্যাম্পাসসহ বাকি ৩টি শাখায় প্রিন্সিপাল ইনচার্জের পরিবর্তে টিচার্স ইনচার্জ দ্বারা দাফতরিক সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা হয়ে আসছে।
সর্বশেষ এ নিয়ে গত ২৫ জুন ঢাকায় এক সভায় মিলিত হন আল আমিন সোসাইটির নির্বাহী সদস্যরা। একই দিনে আরো একটি সভা করেন আল আমিন একাডেমীর গভর্নিং বডির সদস্যরা। যেখানে প্রিন্সিপাল ইনচার্জের পরিবর্তে গভর্র্নিং বডির সভায় প্রতিনিধিত্বও করেছিলেন টিচার্স ইনচার্জ।
উভয় সভায় ১৯ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে ড. গাফফারের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায়, সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে তাকে প্রিন্সিপাল ইনচার্জ থেকে অব্যহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সে সাথে ইনচার্জের সকল দায়-দায়িত্ব পালন থেকে ড. গাফফারকে বিরত রাখারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে ছুটিতে থাকাকালে তিনি বেশ ক’জন শিক্ষককে শাখাভিত্তিক বদলি, নিয়োগ ও বেতন কর্তন, টিচার্স ইনচার্জকে ডিঙ্গিয়ে শিক্ষকদেরকে নোটিশ প্রেরণসহ একাধিক দাফতরিক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আকস্মিক ড. গাফফার প্রিন্সিপাল চেয়ারে বসে দাফতরিক কার্যক্রম শুরু করেন। এতে করে একইসময়ে দু’পদের (প্রিন্সিপাল ইনচার্জ ও টিচার্স ইনচার্জ)নির্বাহী কার্যক্রম নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে ধু¤্রজাল সৃষ্টি হয়।
এ নিয়ে সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) ড. গাফফার স্বাক্ষরিত টিচার্স মিটিংয়ের একটি নোটিশ শিক্ষকদের কাছে পাঠানো হলে নতুনকরে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন শিক্ষকবৃন্দ।
এ বিষয়ে একাধিক শিক্ষক জানান, টিচার্স ইনচার্জ দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ছুটিতে থাকা প্রিন্সিপাল ইনচার্জ কিভাবে শিক্ষকদেরকে নোটিশ পাঠাতে পারেন, তা তাদের বোধগম্য নয়। তবে চাকরি হারানোর ভয়ে কেউ গণমাধ্যমের কাছে নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এর আগে গত ৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির ৪টি শাখায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র প্রতি নানা অনিয়ম ও খারাপ আচরণের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ ও ক্লাস বর্জন করে শিক্ষার্থীরা। সে সময় একাডেমীর প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাওওই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে।
আন্দোলন মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানের ২১০ শিক্ষক-কর্মচারির মধ্যে ১২ জন ছাড়া বাকি ১৯৮ জন সবাই অনাস্থা জানিয়ে ড. গাফফারের পদত্যাগ দাবি করে স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন (স্মারকলিপিটি প্রতিবেদকের সংরক্ষণে রয়েছে)।
ওই কপিতে শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ অধ্যক্ষের স্বজনপ্রীতি, আচরণ ও অযোগ্যতাকে দায়ী করে লিখিত বক্তব্য দেয়াসহ অনাস্থা প্রকাশ করেছেন।
পরবর্তীতে ড. গাফফারের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা যাচাই ও একাডেমির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাবেক অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
ড. গাফফারকে আনুষ্ঠানিক অব্যহতি দেয়ার পূর্বে ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অভ্যন্তরিন অবস্থা নিয়ে অনুসন্ধান করেছে চাঁদপুর টাইমস।
অনুসন্ধানের প্রথমেই শনিবার (১৪ জুলাই) দুপুর ১টায় আল আমিন একাডেমীতে গিয়ে দেখা যায়, ছুটিতে পাঠানো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. গাফফার পূণরায় একাডেমীর অধ্যক্ষের চেয়ারে দায়িত্ব পালন করছেন। আর তাই একাডেমীর কোনো বিষয়ে ছাত্র-শিক্ষক অনেকেই গণমাধ্যমের কাছে স্বাভাবিকভাবে মুখ খুলতে রাজি হননি।
বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ড. গাফফার অফিস কক্ষে বসে সিসিটিভি ফুটেজে নজরদারি করছেন, প্রতিষ্ঠানে বাইরের কে আসছেন, বা শিক্ষকরা অন্য কারো সাথে কথা বলেন কিনা। তাই তারা প্রতিষ্ঠানে থেকে বাইরের কারো সাথে কথা বলতে রাজি হননি।
অধ্যক্ষের রুমে প্রবেশ করেও এর প্রমাণ মিলে। প্রতিবেদকের সাথে কথা বলা অবস্থায়ও ড. গাফফারকে বেশিরভাগ সময়েই সিসিটিভি ফুটেজের দিকে নজর রাখতে দেখা গেছে।
অব্যহতি প্রসঙ্গে ড. গাফফার জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তার বিরুদ্ধে একটি চক্র এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তিনি জানান, ‘স্বাভাবিকভাবে তাঁর ছুটি শেষ হওয়ার পর থেকে পূর্বের ন্যায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানের সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে।’
বেতন কর্তনের বিষয়টি অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯ এপ্রিল একাডেমীর গুনরাজদী ক্যাম্পাস ছাত্রদের আন্দোলনকালে সেখানকার শিক্ষক (বর্তমানে বাবুরহাট ক্যাম্পাসে কর্মরত) আব্দুল মোতালেবের দোকানে হামলা ও ভাংচুর হয়। ওই ঘটনার ১ মাস পর মোতালেব নিজে বাদি হয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং-৩৪ তাং-১৯/০৫/১৮ ইং।
ঘটনার পরপরই মামলা না হয়ে ১ মাস পর মামলাটি দায়ের হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. গাফফার ভিন্ন কৌশল হিসেবে মোতালেবকে মামলাটি করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। যাতে করে তার বিরুদ্ধে ওই ক্যাম্পাসের যেসকল শিক্ষক অনাস্থা জানিয়েছে, তাদেরকে এ মামলায় জড়িয়ে নিজ বাধ্যগত করতে সক্ষম হন। অনুসন্ধানে এমন বেশ কিছু অভিযোগের তথ্য প্রমান মিলেছে।
এদিকে মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, একই ক্যাম্পাসে গড়ে তোলা আল আমিন সোসাইটির প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত আরেক প্রতিষ্ঠান আল আমিন মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. কামরুল ইসলামকে প্রধান আসামী করে ৫জন শিক্ষক, ৩ ছাত্র ও ১ কর্মচারীসহ মোট ৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করা হয়।
পরবর্তী সময়ে রমজান মাসে প্রতিষ্ঠান ছুটিকালীন(১৫ মে-২২ জুন) সময়ে ২৮ মে শিক্ষক মো. জাকির হোসেন কে এ মামলায় আটক করে পুলিশ। পরে ছুটিকালিন সময়ের মধ্যেই (১২ জুন) জাকির জামিনে বের হয়ে আসেন এবং প্রতিষ্ঠান খোলার পর যথা নিয়মে তার উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। শিক্ষক হাজিরা খাতায় প্রমাণিত।
কিন্তু স্কুল ছুটি থাকা সত্ত্বেও অনুপস্থিতির কারণ দেখিয়ে ওই শিক্ষকের ১৬ দিনের বেতন বাবদ ৬ হাজার টাকা কর্তন করেন ড. গাফফার।
শিক্ষক জাকিরের কারাগারে থাকা সময়কালটি প্রতিষ্ঠানের ছুটিকালিন সময়ের মধ্যে ছিলো এবং জেলে থাকার কারণেই ড. গাফফার বেতন কর্তন করেছেন বলে গুনরাজদী ক্যাম্পাসের বর্তমান ইনচার্জ ফেরদৌসি সুলতানা নিশ্চিত করেছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষক মো. জাকির হোসাইন জানান, দোকানে হামলার ঘটনায় আমি জড়িত না থাকা সত্তেও আমাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। আর এ মামলায় আমাকে স্কুল ছুটিকালিন সময়ে আটক করা হয়। প্রতিষ্ঠানের কার্যদিবসে আমার কোনো অনুপস্থিতি নেই। তার পরেও ১৬ দিন অনুপস্থিত থাকার অজুহাতে আমার বেতন থেকে ৬ হাজার টাকা কর্তন করা হয়। যা আমি গভর্নিং বডি ও সোসাইটির চেয়ারম্যানকেও জানিয়েছি। তার পরেও কোনো সুরহা পাইনি।
শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠান ছুটিকালীন সময়ে কোনো মামলায় জেল খাটলে কর্তৃপক্ষ তার বেতন কর্তন করতে পারে কি না? তা জানতে কথা হয় চাঁদপুর জজকোর্টের সিনিয়র আইনজীবি মো. নঈমুল ইসলামারে সাথে।
তিনি চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায়ে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত বেতন কর্তন করার আইনগতকোনো বিধান নেই।’
আরেক অভিযোগে জানা যায়, ৮ জুলাই সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. মুরাদ হোসেনের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের পছন্দের ব্যক্তি সহকারী শিক্ষক পিএমএম জামালকে কোনো প্রকার নোটিশ ও গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত ছাড়াই দু’জন সিনিয়র শিক্ষক ডিঙ্গিয়ে ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন ড. গাফফার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গেলো বছরের নভেম্বরে ১৯ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর মাথা ন্যাড়া করার বিষয়ে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে পিএম জামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। এতে করে তিনি প্রতিষ্ঠানে বিতর্কিত হয়ে ওঠেন এবং ছাত্র-অভিভাবকদের মাঝে বেশ সমালোচিত হন। সিনিয়র শিক্ষকদের ডিঙ্গিয়ে এ ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রধান নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে পিএমএম জামাল বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষকের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এ পদে আমাকে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে বলেই দায়িত্ব পালন করছি। আমি দায়িত্ব নিতে চাইনি, ক্লাসের পাশাপাশি এটি আমার জন্যে অতিরিক্ত দায়িত্ব।
একাধিক সূত্রেতদন্ত কমিটির রিপোর্টে ড. গাফফারের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারি, নিয়োগের সময় সনদ জালিয়াতিসহ বেশ কিছু অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান সাবেক অধ্যক্ষ ও সোসাইটির (ট্রাস্ট) সদস্য মাহবুবুর রহমান জানান, ‘২৫ জুন ২০১৮ তারিখে আমার নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আল-আমিন সোসাইটির মিটিংয়ে দাখিল করা হয়েছে। তদন্তে প্রিন্সিপাল ইনচার্জ ড. গাফফারের সনদ জালিয়াতির বিষয়টিও উঠে এসেছে। এছাড়া নানা অভিযোগের বিস্তারিত তথ্য প্রমাণাদি হস্তান্তরসহ প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে ট্রাস্টের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
অব্যহতির সিদ্ধান্তের পরেও ড. গাফফার নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক কাজ করছেন কিভাবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি বর্তমানে আল আমিন একাডেমীর কোনো দায়িত্বে নেই, এটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তথা গভর্নিং বডি ভালো বলতে পারবে।’
এদিকে একই তারিখে গভর্নিং বডিরও একটি সভা হয়। সেই সভায়ও ড. গাফফারকে অব্যহতির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গভর্নিং বডির একাধিক সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ড. গাফফারকে নিয়োগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা চেয়ে ভাইস প্রিন্সিপাল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। ওই সময় ড. গাফফার নিয়োগ ফাইলে ও ইন্টারভিউ বোর্ডে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা হিসেবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সনদ দাখিল করেন। তদন্ত কমিটির নিকট দেয়া তথ্যে ও চাঁদপুর টাইমস প্রতিনিধি দলের অনুসন্ধানে ড. গাফফারের সেসব অভিজ্ঞতা সনদ জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে।
তিনি ঢাকার দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে ০১/০১/২০০৬ থেকে ৩০/০৫/২০১৪ খ্রী: পর্যন্ত প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলেন বলে তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ধানমন্ডি কলেজের দেয়া অভিজ্ঞতার সনদেরও কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। অভিজ্ঞতার সনদ দেয়া অপর প্রতিষ্ঠান পুটিয়া ইসলামিয়া কলেজ নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের হদিস পাওয়া যায়নি। তবে পুটিয়া ইসলামীয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান মেলে। ওই প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রিন্সিপাল মো. আব্বাস আলী চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ড. গাফফার নামের কোনো ব্যক্তি সেখানে শিক্ষকতা করেননি।
অনুসন্ধানের তথ্যমতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিজ্ঞতা সনদ জালিয়াতির বিষয়টি আল আমিন একাডেমী কর্তৃপক্ষের সাথে সুস্পষ্ট প্রতারণা করা হয়েছে।
সনদ জালিয়াতি বিষয়ে আইনি বিধান কি? তা জানতে কথা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মো. গোলাম রহমান ভুঁইয়ার সাথে। তিনি জানান, ‘এ বিষয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিধিমালা অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারেন। তাছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের অধিনেও অভিযুক্ত ব্যক্তি দণ্ডিত হবেন।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ড. গাফ্ফার সোসাইটি ও গভর্নিং বডির বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, ‘আমাকে অব্যহতি দেয়ার বিষয়টি অপপ্রচার। আমাকে অব্যহতির বিষয়ে কোনো চিঠি দেয়া হয়নি। সনদ নিয়ে অভিযোগের বিষয়টিও সত্য নয়। আমি ছুটি শেষে আমার অবস্থানে থেকে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।’
আল-আমিন সোসাইটির জয়েন্ট সেক্রেটারী কাজী নিজামুল হক জানান, ‘আল-আমিন একাডেমি কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়, এ সম্পদ চাঁদপুরবাসীর। আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো ছাত্র ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করবো না। তবে আপনারা যারা সাংবাদিক, তারা অনেক গভীর থেকে তথ্য তুলে আনতে পারেন। আপনারা যা সত্য তাই প্রকাশ করবেন। তবে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হবে, এমন তথ্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকলে, চাঁদপুরবাসী ও প্রতিষ্ঠানের মঙ্গল হবে।’
এ বিষয়ে আল-আমিন সোসাইটি ও প্রতিষ্ঠান গভর্নিং বডির সভাপতি প্রফেসর আব্দুল্লাহ জানান, ‘আল-আমিন একাডেমি চাঁদপুরবাসীর কল্যাণেই করা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষক ও ছাত্রদের রাজনীতি পছন্দ করি না। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ ও ট্রাস্ট যে কোনো কল্যাণমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণে পিছপা হবো না। তবে কোনো মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, সংশোধন হওয়ার সুযোগও থাকা উচিত। আবার কাউকে বাদ দেয়া যাবে না, এমনটিও নয়।’
সনদ জালিয়াতি বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর আবদুল্লাহ অনেকটা এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ওই সময় ড. গাফফারকে যারা নিয়োগ দিয়েছে, তারা (গভর্নিং বডি) বিষয়টি ভালো বলতে পারবে, এ দায় তাদের। যদিও গভর্নিং বডির সভাপতি তিনি নিজেই।
সনদ জালিয়াতি বিষয়ে সরকারের শিক্ষা বিভাগের কোনো ব্যবস’া গ্রহণের সুযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে চাঁদপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শফি উদ্দিন জানান, ‘ট্রাস্ট পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এক ধরণের স্বায়ত্তশাসিত। এসব প্রতিষ্ঠানের যে কোনো সিদ্ধান্ত ট্রাস্ট‘ই নিয়ে থাকে। যেহেতু আল আমিন একাডেমীর প্রিন্সিপাল পদটি এমপিওভুক্ত না, তাই এটি দেখার দায়িত্বও আমাদের নয়।সুতরাং এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিতে হলে তারাই নিবে।’
(এ প্রতিবেদন সংক্রান্ত সকল তথ্য ও প্রমাণদি চাঁদপুর টাইমসের সংরক্ষণে রয়েছে)
অনুসন্ধান- চাঁদপুর টাইমস প্রতিনিধিদল