যতদিন থাকবো চাঁদপুরকে মনে ধারণ করেই কাজ করবো : নবাগত জেলা প্রশাসক

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেছেন, আমি চাইবো আপনাদের সামনে চাঁদপুরকে সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠিত করে দিতে। আমি চেষ্টা করবো একটি সু-শাসনের প্রশাসন আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে। সবসময় চেষ্টা করবো ভালো ব্যাক্তিত্ব নিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিতে।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নবাগত জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন এর সাথে সাংবাদিকবৃন্দের মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আপনাদের কি কি সমস্যা এটি জানতে হবে। এতদিন আপনাদের সমস্যাগুলো কি কারণে সমাধান হলো না কিংবা কি কারণে সমাধান করতে পারলো না এসব কারণ আমার জানতে হবে। একটি সরকার পরিবর্তন হলে এক ঘরোনা থেকে অন্য ঘরোনার শিক্ষা হয়। সরকার যে আসুক সাংবাদিকদের নিয়ে সবাই বসে। আমি মনে করি জেলার প্রকৃত চিত্রটা সবার আগে আপনাদের কাছ থেকেই পাওয়া যাবে। সে জন্যই আপনাদের সাথে এই মতবিনিময়।

ডিসি বলেন, আপনাদের কাছে থেকে একটি কথা এসেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল বিষয় কী। ওইটাই যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আপনাদের যে চাওয়া তা পুরন হয়ে যাবে। আর এই চাওয়া বাস্তবায়ন করা খুবই সহজ বিষয় নয়। কারণ দীর্ঘদিন আমরা একটি কাঠামোর মধ্যে ছিলাম। এটি আমাদের সমাজে, রাষ্ট্রে এমনকি পরিবারে ছিলো।

তিনি বলেন, আপনারা আজকে অনেক বিষয়ে তাৎক্ষনিক জবাব চেয়েছেন, এগুলো এখনই উত্তর দেয়া ঠিক হবে না। এটি আপনারাও বুঝেন। কিন্তু আমি একটি জিনিস কথা দিতে পারি, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে তাদের চাকরি কোটা নিয়ে আন্দোলন শুরু হলো, তারপর এটি শুরু হলো সমাজ এবং রাষ্ট্রের বৈষম্য নিয়ে। তখন ছাত্রদের সাথে সারাদেশের জনতা যুক্ত হলো। পরে এটি রাষ্ট্রের বৈষম্য নিয়ে আন্দোলন করে সফল হয়েছে। সেখানে একটি সরকারের পতন হয়েছে। এখন অন্তবর্তী সরকারে যারা আছে, আমরা যারা আছি, আপনারা যারা আছেন, এখন আমাদের কাজ হচ্ছে কিভাবে একটি ন্যয় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবো।

ডিসি বলেন, চাকরি করতে গিয়ে দেখেছি অনেকেই সাংবাদিকদের কাছ থেকে দূরে থাকেন। আমিও এমন। কিন্তু আমি যতবার বিপদে পড়েছি, ততবারই সাংবাদিকরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। তারাই আমার সবচাইতে ভালো বন্ধু। এটির কারণ আছে, অসৎ সাংবাদিকদেরকে আমি নিজেও পছন্দ করি না। তারা আমার কাছে ভিড়তেও পারবে না। কিন্তু যখনই দেখেছে আমার মধ্যে সততা ও ন্যয় আছে, তখনই দেখেছি সাংবাদিকরা আমার কাজে সহযোগিতা করেছে। আমি আপনাদের কথা দিতে চাই, কিন্তু কতটুকু পারবো জানিনা। যতটুকু কাজ করবো সততা নিয়ে করবো। ন্যয় এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবো।

মোহসীন উদ্দিন বলেন, আমাকে সরকার জেলা প্রশাসক বানিয়েছেন আমি পদ নিয়ে বসে থাকবো না। আমি এখানে এসেছি কাজ করার জন্য, যতদিন থাকবো চাঁদপুরকে মনে ধারণ করেই কাজ করবো। স্বাভাবিক গতিতে কাজর কবো বিষয়টি এমন নয়। আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করবো, আপনারা যেসব চাওয়া ও পরিবর্তনের কথা বলেছেন। এগুলো খুব দ্রুত করা সম্ভব না। আপনারাও পারবেন না।

তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে শ্রদ্ধা করি এ জন্য, তারা আমাদের দেশকে এমন একটি স্থানে এনে দিয়েছেন, যেখান থেকে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়বো। আপনারা পুলিশ ও প্রশাসন নিয়ে সংস্কারের কথা বলেছেন। কিন্তু আরো আছে। আমরা সব জায়গায় সংস্কার করবো। আমরা একটি ন্যয় ভিত্তিক সমাজ গড়ার জন্য সবাই মিলে কাজ করবো।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, আমার সাথে যতই কাজ করবেন, ততই আমাকে পছন্দ করবেন। অনেক সময় কথা বললে চিনতে পারবো না। কারণ আমি একা আপনারা অনেকজন। সবাইকে মনে রাখা সম্ভব নয়, আমাকে একটু সময় দিতে হবে। আমার অফিসে এসে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে না। সরাসরি আমার কাছে চলে আসবেন। যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ মিটিং না থাকে। আমি জানি একজন সাংবাদিক আমার কাছে তথ্য নিতে এসেছে কাজ করার জন্য। আপনাকে বসিয়ে রেখে আমার কোন লাভ হবে না। আমার কাছে অনুমতি নেয়া লাগবে না। যে কোন সময় আসতে পারবেনা।

সাংবাদিকদের কথার সূত্র ধরে জেলা প্রশাসক বলেন, আপনারা ইলিশ ব্র্যান্ডিং, চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ, বালু উত্তোলন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ, শহরে যানজট ইত্যাদির বিষয় তুলে ধরেছেন। এসব বিষয়গুলো আমরা অনুধাবন করি, এগুলোর উন্নয়ন হওয়া দরকার। কিন্তু নানা কারণে এসব কাজগুলো করতে পারি না। আমরা যাদুকর নই। আমাদেরও পদ্ধতি মেনে ধাপে ধাপে কাজ করতে হয়। আমাদেরকে একটু সময় দেন, কিভাবে আমরা আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারি।

সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য দেন চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমন, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাড. ইকবাল বিন বাশার, দৈনিক চাঁদপুর দিগন্তের সম্পাদক ও প্রকাশক অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বিএম হান্নান, ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল রুশদী, রহিম বাদশা, লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর ও দৈনিক প্রভাতি কাগজের সম্পাদক ও প্রকাশক আবদুল আউয়াল রুবেল, সাপ্তাহিক চাঁদপুর সকাল পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন লিটন, প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম, দৈনিক আলোকিত চাঁদপুর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক জাকির হোসেন, দৈনিক চাঁদপুর প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ইব্রাহিম রনি, এনটিভির জেলা প্রতিনিধি শরীফুল ইসলাম ও দৈনিক চাঁদপুর দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক ইলিয়াছ পাটওয়ারী।

মতবিনিময় সভার শুরুতে নবাগত জেলা প্রশাসক উপস্থিত সর্বস্তরের সাংবাদিকদের সাথে পরিচিত হন এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জাননো হয়।

প্রতিবেদক: মুহাম্মদ বাদশা ভূঁইয়া, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Share