Home / সারাদেশ / পদ্মা সেতুতে ২১ জেলায় নবদিগন্ত উন্মোচন হবে
padma

পদ্মা সেতুতে ২১ জেলায় নবদিগন্ত উন্মোচন হবে

পদ্মা সেতু চালু হলে পদ্মা সেতুতে ২১ জেলায় নবদিগন্ত উন্মোচন হবে । রাজধানী ঢাকার সঙ্গে স্থাপিত হবে সরাসরি যোগাযোগ। মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্দর ঘিরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা।

এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক হারে শিল্পায়ন হবে। কর্মসংস্থান হবে লাখ লাখ মানুষের। বিশেষ করে কৃষিতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সেই সঙ্গে ব্যাপক হারে বদলে যাবে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রায় ছয় কোটি মানুষের। এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট সবাই।

শনিবার ২৫ জুন সকালে দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বিশেষ করে খুলনা বিভাগের খুলনা,বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা,নড়াইল, কুষ্টিয়া,মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা; বরিশাল বিভাগের বরিশাল,পিরোজপুর,ভোলা,পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলায় উৎসবের আমেজ বেশি।

এ জেলার মানুষ স্বপ্নে বিভোর। তারা মনে করছেন পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। বিশেষ করে কৃষক তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে এবং অল্প সময়ে কৃষিপণ্য ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো যাবে। ফলে কৃষকের পণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কমে আসবে আনেকখানি।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পাট,পাটজাত পণ্য,চিংড়ি ও কৃষিভিত্তিক শিল্প,গার্মেন্ট ও টেক্সটাইলসহ নানা শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পদ্মা সেতুর সুফল কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গার্মেন্টস শিল্পের প্রসার ঘটলে শিল্প বিপ্লব ঘটবে।

মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও কৃষক নেতা শ্যামল সিংহ রায় বলেন,স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে সবজি নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচবে। দক্ষিণের ২১ জেলার কৃষকেরা দামও ভালো পাবেন।

বর্ষীয়ান এই কৃষক নেতা আরও বলেন,ফেরিঘাটে যানজট এবং বৈরী আবহাওয়ায় যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না অনেক সবজিবাহী যানবাহন। পচনশীল পণ্য হওয়ায় তখন এসব সবজির মান ও দাম দু টিই কমে যায়। লোকসানে পড়তে হয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের দুয়ার উন্মুক্তের পাশাপাশি এ অঞ্চলের কৃষিতে পড়বে ইতিবাচক প্রভাব। সৃষ্টি হবে নবদিগন্তের।

মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য বলছে,প্রতিদিন খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট থেকে রাজধানীতে বিভিন্ন প্রজাতির ১৪৫ থেকে ১৬০ টন মাছ নেয়া হয়। এসব মাছের বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। মাছ জরুরি খাদ্যপণ্য। নির্দিষ্ট সময় পর এটি নষ্ট হয়ে যায়। পদ্মা সেতু চালু হলে মাছের বিপণন ও বাজারজাতকরণ সহজ হবে।

এতে জেলে, মৎস্য চাষি ও ব্যবসায়ীরা বেশি লাভবান হবেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ও বিদেশে মৎস্য পাঠানো সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত হবে। তাতে মাছের অপচয় হ্রাস পাবে। তাছাড়াও সুনীল অর্থনীতি হবে গতিশীল। সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের পরিমাণ বাড়বে। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক আয় বাড়বে মৎস্য খাত থেকে।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সহ সভাপতি হুমায়ুন কবীর বলেন,হিমায়িত চিংড়ি চট্টগ্রামে নেওয়ার পথে অনেক সময় পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যেত। পদ্মা ঘাট পারাপারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে এমনটি হতো। আগে আমাদের রপ্তানি করতে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হতো।

এর ফলে মাছ ফ্রিজার ভ্যানে নিয়ে দু থেকে তিন দিন পর্যন্ত পদ্মা ঘাটে অপেক্ষা করতে হতো। পদ্মা সেতু চালু হলে একদিকে যেমন ভোগান্তি কমবে অন্যদিকে খরচ ও বাঁচবে ব্যবসায়ীদের।

খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মো. মফিদুল ইসলাম টুটুল বাংলানিউজকে বলেন,‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হয়েছে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ২১ জেলায় যোগাযোগের বড় দিগন্ত উন্মোচন হবে। সেতু চালু হলে খুলনা,বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার চিংড়ি মাছ, যশোরের গুড় ও সবজি আর গদখালীর ফুল, বরিশালের ধান ও পানসহ পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি পণ্য ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর পাশাপাশি বিদেশেও দ্রুত রফতানি সম্ভব হবে।

২৪ জুন ২০২২
এজি