মতলব উত্তরে বিক্রি হয়ে যাওয়া নবজাতক অবশেষ মায়ের কোলে

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় বিক্রি হয়ে যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করে তার প্রকৃত মায়ের কাছে হস্তান্তর করেছে উপজেলা প্রশাসন। শিশু উদ্ধারে সার্বিকভাবে তত্ত্বাবাবধান করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) গাজী শরিফুল হাসান।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত অবধি উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) গাজী শরিফুল হাসান,সহকারী কমিশনার (ভূমি) হেদায়েত উল্লাহ ও মতলব উত্তর থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ বলেন, উপজেলা প্রশাসনের তৎপরতায় উপজেলার ষাটনল ইউনিয়ন হতে জনৈক শীমলা আক্তারের কাছ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় উভয় পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা পারস্পরিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরল বিশ্বাসে উক্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। বর্তমানে তারা উভয়পক্ষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মুচলেকা প্রদানের মাধ্যমে শিশুটিকে তার প্রকৃত মায়ের কাছে হস্তান্তর করে।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাজী শরিফুল হাসান তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে শিশুর মায়ের কাছে নগদ ৫ হাজার টাকা তুলে দেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ েেহদায়েত উল্লাহ, মতলব উত্তর থানা পুলিশের সদস্যগণ ও স্থানীয় জনসাধারণ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গাজী শরিফুল হাসান জানান, শিশু উদ্ধার এর ক্ষেত্রে জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা পাওয়া গেছে। শিশুটি উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।

উল্লেখ্য, মতলব উত্তরের কলাকান্দা ইউনিয়নের হানিরপাড় গ্রামের দিনমজুর মোঃ আলমের স্ত্রী তামান্না বেগমের প্রসবব্যথা উঠলে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ২৬ জানুয়ারি ছেংগারচর পালস্ এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনে পুত্রসন্তান জন্ম দেন তামান্না। ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থাকেন তিনি। রিলিজের সময় ক্লিনিকের বিল আসে ২৬ হাজার টাকা। তবে এ বিল ১২ হাজার রাখা হয়েছে বলে জানান পালস্ এইড হাসপাতালে ।

ওই টাকা পরিশোধ করার সামর্থ্য ছিল না তামান্না বেগমের। এ অবস্থায় ছেংগারচর বাজারের কাউসার নামে এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেন। কিন্তু সন্তান বিক্রির পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন মা। অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পড়ে প্রতিদন কাঁদছিলেন ওই মা।

হাসপাতালে ব্যবস্থাপক লিমন সিকদার বলেন,তামান্না নামে রোগী যে মন্তব্য করছে তা সম্পন্ন বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। উনি যেদিন অপারেশন করার জন্য আসছেন,সেটিন উনার পক্ষে কথা বলছে ওনার মা ও খালা। ওনার মা এবং খালা টাকা পয়সার ব্যাপারে কোনো কথা কথা এরকমভাবে বলেনি যে আমরা টাকা পয়সা দিতে পারবনা। যদি দিতে বাচ্চা বিক্রি করে দিতে হবে। এই রকম কোনো কথা আমাদের বলেনি। আমাদের বিল পরিশোধ দিয়ে অপারেশনের তিন দিন পর। যে সময়ে রিলিজ হয়েছে। আর পরশু আসে অপারেশনের ৭ দিন পরে সেলাই কাটার জন্য।মা ও বাচ্চা সুস্থ ভালো আছে নাকি তাও জিজ্ঞাসা করেছি। সিজারিয়ান অপারেশন আমাদে এই হাসপাতালে হয়েছে। কিন্তু বাচ্চা বিক্রির বিষয়টি আমাদের জানা নেই।

এ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় খবর প্রচারিত হলে প্রশাসনের নজরে আসে। ফলে মতলব উত্তর উপজেলা প্রশাসন বিক্রি হয়ে যাওয়া শিশু সন্তানকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক

Share