Home / আন্তর্জাতিক / আন্তর্জাতিক নদী দিবস আজ
নদী

আন্তর্জাতিক নদী দিবস আজ

নদীর দূষণ নিয়ে আলোচনা অনেক দিনের। সেই দূষণ বন্ধে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছেন পরিবেশবাদীরা। সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে তা খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না। একদিকে দূষণের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, অন্যদিকে দখল দূষণের হার বেড়েই চলছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণা করে তাকে রক্ষার কথা বলা হলেও এখনো দখল-দূষণে বিপর্যস্ত রয়ে গেছে ঢাকার আশেপাশের চার নদীসহ দেশের বেশিরভাগ নদী।

পরিবেশবাদীরা মনে করেন,ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর অবস্থা সবচেয়ে বেশি বেহাল। দূষণ রোধে কঠোর না হওয়ায় নদীগুলো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। এমন এক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে পালিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সোমবার ১৪ মার্চ পালন করা হবে দিবসটি।

১৯৯৭ সালের ব্রাজিলে কুরিতিবা শহরে এক সমাবেশ থেকে নদীর প্রতি দায়বদ্ধতা মনে করিয়ে দিতে এ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে একত্র হয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। তাইওয়ান, ব্রাজিল, চিলি, আর্জেন্টিনা,থাইল্যান্ড, রাশিয়া, ফ্রান্স,সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ওই সম্মেলনে অংশ নেন প্রতিনিধিরা। সম্মেলন থেকেই ১৪ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস’ পালনের ঘোষণা দেয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াটার কিপারস বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, দূষণের কারণে নদীগুলোতে কোনও জীববৈচিত্র নেই বললেই চলে। জীবন্ত সত্তার জীববৈচিত্রই এখন হুমকির মুখে। নদীগুলোর খালগুলো প্রায় সব ভরাট হয়ে গেছে। দখল করে তা বাঁধ দিয়ে স্থায়ী করা হচ্ছে। এতে উজান থেকে পানি এলে তা বের হয়ে যাবার জায়গাও ব্লক হয়ে যাচ্ছে। এসব বন্ধ করা না গেলে নদীর জীবন্ত সত্তা রক্ষা করা যাবে না।

তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবেশবাদীরা দীর্ঘদিন ধরেই নদীকে বাঁচাতে কাজ করছি। এই কাজ আরও বেগবান হচ্ছে বলে আমি মনে করি। সম্প্রতি আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে আমরা স্থানীয় প্রতিনিধিদের যুক্ত করছি। তারাও দূষণ রোধে ভূমিকা রাখার আগ্রহ দেখিয়েছেন। আসলে নদীর দূষণ একক প্রচেষ্টা রোধ করা সম্ভব নয়। সবাই সমন্বিত উদ্যোগেই এটি করতে হবে। তবে এখন যে হারে দূষণ বাড়ছে তাতে দ্রুত কঠোর উদ্যোগ না নিলে নদীগুলো আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে।’

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান হাওলাদার বলেন, নদী রক্ষা কমিশনকে ক্ষমতা দিয়েছে আদালত। সেটির উপর ভিত্তি করেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কাজ এগিয়ে যাচ্ছিলো কমিশন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান এখানে উল্লেখযোগ্য। আগে দখলদারদের কোনও তালিকাই ছিল না। এখন তালিকা আছে। অনেক দখলদার উচ্ছেদ হয়েছে। কিন্তু সেই গতি এখন কিছুটা কমে গেছে।

তিনি বলেন, ‘এখন তালিকা হাতেই আছে। প্রভাবশালীদের অনেকেই নদী দখল করে বহাল তবিয়তে আছেন। বেশিরভাগই বড় কোম্পানি। এদের বিরুদ্ধে শক্ত আইনের প্রয়োগে যেতে হবে সংস্থাগুলোকে। পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।’

দিবসটি উপলক্ষে সোমবার বুড়িগঙ্গা ব্রিজ এর নিচে (বসিলা পুরাতন বিদ্যালয় মাঠ সংলগ্ন) ‘নদীকে নদীর মত রাখার দাবিতে’ প্রতীকী কাগজের নৌকা ও কলার ভেলা ভাসানো কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করবেন জাতীয় নদী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড.মুজিবুর রহমান হাওলাদার। অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় নদী জোটের আহবায়ক শারমীন মুরশিদ, বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, গ্রীন ভয়েসের মূখ্য সমন্বয়ক ও বাপার যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপস এর পরিচালক ও বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জমান মজুমদার, বাপার যুগ্ম সম্পাদক হাসান ইউসুফ খান, জাতীয় নদী জোটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাইদা রোক্সানা খান এবং অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা।

১৪ মার্চ ২০২২
এজি