আশিক বিন রহিম | আপডেট: ০৯:৪২ অপরাহ্ণ, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫, রোববার
সপ্তমবারের মতো অনুষ্ঠিত চতুরঙ্গ জিপিএইচ ইস্পাত ইলিশ উৎসবের ৬ষ্ঠ দিনের কার্যক্রম শনিবার জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘জেগে উঠো মাটির টানে’ শ্লোগানকে ধারণ করে অনুষ্ঠিত ইলিশ উৎসবে ৫ম দিনেও শিশু-কিশোরদের নিয়ে সংঙ্গীত প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা ও গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
বিকেল ৩টায় ইলিশ বিষয়ক প্রীতি বিতর্ক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ৬ষ্ঠ দিনের কার্যক্রম।
সন্ধ্যায় আলোচনা পর্বে দৈনিক চাঁদপুর সংবাদের সম্পাদক ও প্রকাশক প্রফেসর আবদুর রহমানকে সংবর্ধনা জানানো হয়।
আলোচনা পর্বে উৎসবের আহ্বায়ক রোটা. কাজী শাহাদাতের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, “চাঁদপুরের চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠন ইলিশ নিয়ে প্রতিবছর সঠিক সময়ে উৎসবের আয়োজন করে থাকে। যে ইলিশ বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে পৃথিবী বিখ্যাত হয়েছে। চাঁদপুরকে একসময় বলা হতো ইস্টান গেট অব ইন্ডিয়া। তখন চাঁদপুর থেকে রেলপথে মালামাল ইন্ডিয়া যেতো। সেই থেকে চাঁদপুর জেলা নদীবন্দর হিসেবে খ্যাত ছিলো, আর ইলিশের জন্য চাঁদপুর সুখ্যাতি পেয়েছে। আমি পৃথিবীর অনেক দেশের মাছ খেয়েছি কিন্তু আমরা কাছে মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু মাছ হচ্ছে ইলিশ। ইলিশ মাছ আমাদের গর্ব, ইলিশ মাছের কারণে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে পরিচিতি পেয়েছি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে কান্ট্রি ডিরেক্টর ইলিশ খেয়ে প্রশংসা করেছেন। ব্যক্তিগতভাবেও ইলিশের জন্য আমি অনেক সম্মান পেয়েছি, যা আমি অনুভব করি।”
তিনি আরো বলেন, “আমি নদী পাড়ের ছেলে হিসেবে ইলিশের অনেক গল্প জানি। একটা সময় প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেতো বলে অনেকে ইলিশ খেতো না। প্রতিটি মৌসুমে বাড়ি বাড়ি ইলিশের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়তো। অনেকেই বাড়িতে ইলিশ লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করতো। অথচ এখন আর সেই ইলিশ নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সরকার ইলিশ রক্ষার জন্যে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করে আসছে। জাতীয় পর্যায়ে চাঁদপুরে ইলিশ সংরক্ষণ ক্যাম্পেইন করা হয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু প্রস্তাবনা রেখেছি। আমি বলেছিলাম জেলেদের শুধু মাত্র চাউল না দিয়ে যেনো নগদ টাকা দেয়া হয়। আমরা ছোটবেলায় জাটকা চিনতাম না। কারণ তখন কারেন্ট জাল ছিলো না। কারেন্ট জালের কারণে শুধুমাত্র ইলিশ নয় আমাদের দেশীয় প্রজাতির মাছ ধ্বংস হচ্ছে। কারেন্ট জাল দিয়ে পাখি নিধন করা হচ্ছে। সরকার এবার কারেন্ট জাল নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের ৬ জেলাতে ইলিশ পাওয়া যায়, কিন্তু একমাত্র চাঁদপুরেই ইলিশ উৎসব করা হয়। তাই এই উৎসব জাতীয় উৎসবে রূপান্তর হলেই দেশের সব জনগণ জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় সচেতন হবে।”
চতুরঙ্গের মহা-সচিব হারুন আল রশীদের পরিচালনায় প্রধান অলোচকের বক্তব্যে বহুল প্রচারিত দৈনিক চাঁদপুর প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক প্রফেসর ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, চাঁদপুরের শতকরা ৭০ ভাগ ইলিশ বাজারে উঠে না। কারণ এসব ইলিশ বাজারে ভালো মূল্য পাওয়া যায় না বলে। অভয়াশ্রম চলাকালে জেলেদের শুধুমাত্র চাউল দেয়া হয়।
এখানে প্রশ্ন থেকে যায়, জেলেরা শুধুই কি চাল খাবে? সরকার জেলেদের সঠিক সময়ে ভিজিএফ কার্ডের চাউল দিচ্ছে না। এসব বিষয়ে সরকারের ভেবে দেখতে হবে। চাঁদপুরে একটি স্বতন্ত্র ইলিশ গবেষণা কেন্দ্র প্রয়োজন। ইলিশ নিয়ে এখনকার মৎস্য গবেষকরা ইলিশ নিয়ে ভালো ধারণা রাখে না।
সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যে দৈনিক চাঁদপুর সংবাদের সম্পাদক ও প্রকাশক আব্দুর রহমান বলেন, “আজ আমি চতুরঙ্গ ইলিশ উৎসবের পক্ষ থেকে যে সম্মান পেলাম তাতে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। জেগে উঠো মাটির টানে এই শ্লোগান নিয়ে চতুরঙ্গের ইলিশ উৎসব আজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে সারা বাংলাদেশে ঢেউ তুলেছে। আমি বিশ্বাস করি এই উৎসব একদিন জাতীয় উৎসবে রূপ নেবে। ইলিশের সাথে চাঁদপুরের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। ইলিশ শুধু চাঁদপুরের গর্ব নয়; ইলিশ বাংলাাদেশের জাতীয় মাছ। অথচ আমরা এই ইলিশকে রক্ষা করতে পারছি না। আমার অনুরোধ, আগামীতে মৃত জাটকা নয়, নদীতেই জীবিত জাটকা রক্ষা করতে হবে। যে কোনো সম্মান মানুষের চলার পথকে শাণিত করে। এই সম্মান আমার সৎ পথে চলার জন্য আমাকে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ করবে।”
আলোচনা ও গুণীজন সংবর্ধনা শেষে অগ্নিবীণা সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ নৃত্যানুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। সবশেষে সংঙ্গীত পরিবেশন করে চতুরঙ্গের শিল্পীরা।
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫