Home / সারাদেশ / সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের চাঁদপুরের বাড়িতে আনন্দের বন্যা
সেনাবাহিনীর প্রধান
ফাইল ছবি

সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের চাঁদপুরের বাড়িতে আনন্দের বন্যা

সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে লে. জেনারেল আজিজ আহমেদকে নিয়োগ দেয়ায় তার নিজ গ্রাম চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার সুলতানাবাদ ইউনিয়নের টরকী গ্রামসহ পুরো চাঁদপুর জেলায় আনন্দের বণ্যা বয়ে যাচ্ছে।

মানুষ একে অপরকে মিষ্টি মুখ করাচ্ছে। আনন্দ প্রকাশ করছে। তাঁকে সেনা প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে এলাকার মানুষ।

২০১৮ সালের শুরুতে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হলেন চাঁদপুর সদরের কৃতী সন্তান ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটওয়ারী। আর একই বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে যিনি নিয়োগ পেলেন তিনিও চাঁদপুর জেলার কৃতি সন্তান। বাংলাদেশের চারটি বাহিনীর মধ্যে দুটি বাহিনীর প্রধানই এখন চাঁদপুরের, এটি যেনো চাঁদপুর জেলাবাসীর জন্যে বিশাল প্রাপ্তি।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫তম প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক লে. জেনারেল আজিজ আহমেদ। আগামী ২৫ জুন বিকেল থেকে জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়ে তিনি বর্তমান সেনা প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের স্থলাভিষিক্ত হবেন।

ওইদিন জেনারেল বেলাল অবসরে যাবেন। নতুন সেনাপ্রধান লে. জেনারেল আজিজকে তিন বছরের জন্যে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গত ১৮ জুন সোমবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) হিসেবে নিয়োগ পান লে. জেনারেল আজিজ। এর আগে ২০১৬ সালের নভেম্বরে বিজিবির মহাপরিচালক থেকে পদোন্নতি পেয়ে তিনি আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি হন। তিনি ২০১২ সালের ৭ মে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি পান। একই বছর ৫ ডিসেম্বর বিজিবির ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পান।

প্রায় চার বছর তিনি বিজিবিপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় ১৮ হাজার নতুন সৈনিক নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের মধ্যে একশ’ নারী সৈনিক; যা বাহিনীর ইতিহাসে প্রথম নজির। সীমান্ত ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানও ছিলেন আজিজ। এর আগে তিনি কুমিল্লা ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

লেঃ জেনারেল আজিজ অষ্টম বিএমএ দীর্ঘদেয়াদি কোর্স শেষে ১৯৮৩ সালের ১০ জুন সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে কমিশন পান। এর আগে তিনি ১৯৮১ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমীতে যোগদান করেন।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে জিএসও-৩ (অপারেশন), পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর, সেনাসদর প্রশিক্ষণ পরিদপ্তরের গ্রেড-২ এবং সেনাসদর, বেতন ও ভাতা পরিদপ্তরের গ্রেড-১ স্টাফ অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ একটি আর্টিলারি ইউনিট, একটি বিজিবি ব্যাটালিয়ন, বিজিবির একটি সেক্টর, স্বতন্ত্র এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেডসহ মোট দুটি আর্টিলারি ব্রিগেড এবং একটি পদাতিক ডিভিশন দক্ষতার সঙ্গে কমান্ড করেন।

আজিজ আহমেদ ১৯৬১ সালের ১ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর পৈত্রিক নিবাস চাঁদপুরে। তাঁর বাবার নাম আবদুল ওয়াদুদ এবং মা রেনুজা বেগম। তাঁর বাবা ওয়াদুদ আহমেদ বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা। তিনি মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করেন নটরডেম কলেজ থেকে।

১৯৮০ সালে কলেজ অব টেক্সটাইল টেকনোলজি থেকে টেক্সটাইল টেকনোলজি বিষয়ে ডিপ্লোমা শেষ করেন। তিনি ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (পাস), ১৯৯৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার অব ডিফেন্স স্টাডিজ ও ২০০৮ সালে এমএসসি (টেকনিক্যাল) এবং একই বছর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ইন বাংলাদেশ থেকে এমবিএ করেন।

এ ছাড়া লে. জেনারেল আজিজ ১৯৮৯-১৯৯০ সালে আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুল, হালিশহর থেকে অফিসার্স গানারি স্টাফ কোর্স এবং ১৯৯২-১৯৯৩ সালে ভারতের স্কুল অব আর্টিলারি থেকে লং গানারি স্টাফ কোর্স (ফিল্ড) করেন। এরপর তিনি মিরপুর ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে ১৯৯৪-১৯৯৫ সালে সাফল্যের সঙ্গে আর্মি স্টাফ কোর্স-১৯ সম্পন্ন করেন।

লে. জেনারেল আজিজ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে ইরাক-কুয়েতে পর্যবেক্ষক এবং ২০০৫-২০০৬ সালে সুদানে জাতিসংঘ মিশনে ফোর্স কমান্ডারের সামরিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সিঙ্গাপুর, ভারত, কুয়েত, সৌদি আরব, ইরাক, সাইপ্রাস, ফিজি, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, চায়না, হংকং, সুদান, কেনিয়া, উগান্ডা, বাহরাইন এবং মালয়েশিয়া ভ্রমণ করেছেন।

তাঁর স্ত্রী দিলশাদ নাহার আজিজ একজন গৃহিণী। ব্যক্তিগত জীবনে তিন ছেলের জনক লে. জেনারেল আজিজ গলফ খেলতে বিশেষ উৎসাহী। অবসরে তিনি বই পড়েন।

এদিকে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী প্রধান আজিজ আহমেদের পৈত্রিক বাড়ি মতলব উত্তর উপজেলার টারকী গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম এমনকি পুরো মতলব উত্তরে চলছে আনন্দ আর উল্লাস। সব শ্রেণীর মানুষ যেনো আনন্দে উদ্বেলিত। তাদের যেনো খুশির সীমা নেই।

তাঁর গ্রামের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আজিজ আহমেদের নিজ গ্রামসহ পুরো উপজেলায় যেনো আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। এলাকার সব শ্রেণীর মানুষের চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস। তাঁর নিজ গ্রামে গিয়ে কথা হয় কিছু মানুষের সাথে।

তাঁর বাল্যবন্ধু আব্দুল আউয়াল বলেন, শৈশব থেকেই আজিজ ছিলো এক অসাধারণ মানুষ। তার আচরণে মুগ্ধ করে সকলকে। তিনি সবসময় এলাকার মানুষের উন্নয়নে ব্যাপক সহায়তা করেছেন। এলাকায় মসজিদ, কবরস্থান, রাস্তা করেছেন নিজ অর্থায়নে।

মতিন সরকার বলেন, আজিজ সাহেব ব্যক্তি হিসেবে অসাধারণ। তাঁর মতো মানুষ এলাকায় থাকাতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তিনি সেনপ্রধান হওয়ায় আমরা গর্বিত।

এলাকায় বেড়াতে আসা হাজী আহম্মেদ জানান, আমি যতোবার এ এলাকায় এসেছি ততোবারই ওনার সুনাম শুনেছি। কথা হয় তাঁর বাড়ির কয়েকজনের সাথে। তাঁর বড় চাচী রেনু বেগম বলেন, শৈশব থেকেই আজিজ সবার থেকে আলাদা ছিলো।

সে সবসময় নিজের থেকে অপরকে নিয়ে ভাবতেন। কীভাবে মানুষের উপকার করা যায় সেটা ছিলো তার ভাবনা। সে সেনাপ্রধান হওয়ায় আমি খুব আনন্দিত। ছোট চাচী বলেন, আমি খুব আনন্দিত আমার বাড়ির ছেলে আজ সেনাপ্রধান। আমার দেখা মতে তার হাত ধরে এলাকার অনেক দুঃস্থ-এতিম ছেলের চাকুরি হয়েছে।

কথা হয় কিছু দুঃস্থ-এতিম লোকদের সাথে, যারা চাকুুরি পেয়েছেন নয়া এই সেনাপ্রধানের কল্যাণে। অসহায় গোলাম হোসেনের মা বলেন, আমি খুব অসহায় ছিলাম, আমার ছেলে চাকুরি পাওয়ার পর এখন আমরা অনেক ভালো আছি।

পিতাহারা মৌসুমী আক্তারের মা জ্যোৎস্না বেগম বলেন, অসহায় আর দরিদ্রতা নিয়ে কিছুতেই নিজের সংসার চালাতে পারছিলাম না। আজিজ সাহেব আমার মেয়েকে চাকুরি দেয়। এখন আমি মেয়ের বেতনের টাকা দিয়ে ভালো করেই সংসার চালাতে পারছি।

পিতাহারা সজিবের মা শামসুন্নাহার বলেন, একটা সময় ছিলো যখন খুব কষ্টে নিজের সংসার চালাতাম। আজিজ সাহেবের সহায়তায় আমার ছেলে চাকুরি পাওয়ার পর আল্লার রহমতে ভালোই আছি। এলাকার সকল মানুষ তাঁর জন্যে দোয়া করেন এবং তাঁর দীর্ঘ হায়াত কামনা করেন।

প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন- শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম

Leave a Reply