পুবাকাশে উদিত হয়েছে নতুন সূর্য। তার আভা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে কুয়াশার চাদর ভেদ করে। আজকের সূর্যোদয় নিয়ে এসেছে নতুন বারতা, নতুন স্বপ্ন। ২০২৪ সালের যত যত না পাওয়া, যত ভুল, হতাশা, দুঃখ, গ্লানি মুছে দিয়ে আজ শুরু হবে নতুন উদ্যমে সফলতার পানে এগিয়ে চলা। আজ ২০২৫ সালের এই প্রথম সূর্যোদয়ে আছে অন্ধকার কেটে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়।
সকালে খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের সূর্যোদয় হলেও মঙ্গলবার রাত ১২টায় ঘড়ির কাঁটা শূন্যের ঘর অতিক্রমের সঙ্গে সঙ্গেই গণনা শুরু হয়েছে নতুন বছরের। নতুন বছর মানেই নতুন প্রত্যাশা। উদ্যম আর সাহস নিয়ে আবারও পথচলা শুরু করা।
খ্রিষ্টীয় নতুন বছর-২০২৫ উপলক্ষ্যে দেশবাসী এবং প্রবাসী বাঙালিসহ বিশ্ববাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এক বাণীতে তিনি বলেন, নতুনের আগমনী বার্তা আমাদের উদ্বেলিত করে, নব উদ্যমে সুন্দর আগামীর পথচলার জন্য অনুপ্রেরণা জোগায়। নতুন বছরের এই মাহেন্দ্রক্ষণে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উন্নতির নতুন শিখরে আরোহণে অঙ্গীকারবদ্ধ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার লাখো শহিদের রক্ত ও জুলাই-আগস্টের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অর্জিত স্বাধীনতাকে সর্বদা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করছে। আমরা দেশকে ভালোবাসব, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করব এবং যে কোনো সন্ত্রাসবাদকে প্রতিহত করব।
নতুন বছরে মানুষে-মানুষে সম্প্রীতি, সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও জোরদার হোক এই কামনা করে তিনি বলেন, খ্রিষ্টীয় নতুন বছর ২০২৫ সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কূটনীতিসহ নানা কারণে ২০২৫ একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। সামাজিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতিসহ সব ক্ষেত্রে দেশ আরও এগিয়ে যাবে-এমন প্রত্যাশা সবার। গত বছর যে আশা নিয়ে পথচলা শুরু হয়েছিল তার অনেকখানি হয়তো পূরণ হয়নি। কিন্তু তাতে কি, নতুন উদ্যম নিয়ে এগিয়ে গেলে সাফল্য আসবেই। আজকের দিনে দেশবাসীর এ প্রত্যয়।
২০২৪-এ অনেক প্রত্যাশা নিয়ে দেশের মানুষ বছর শুরু করলেও নানা কারণে তার অনেকটাই পূর্ণ হয়নি। তবে ২০২৪-এর গণঅভুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র শাসন ব্যবস্থার বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে দেশকে পুনরায় গঠনের এক মহান সুযোগ এসেছে জাতির জন্য। মানুষের কথা বলার অধিকার ফিরে এসেছে। ভোটের অধিকার নিশ্চিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে দেশের মানুষ নতুন এক সুশাসনের অপেক্ষা করছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে আগামী নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে সেই বিষয়ে বলা হয়েছে। নির্বাচনের আগে দেশের নানা সেক্টরে সংস্কারের বিষয়ে আবারও জোরালোভাবে সংকল্প ব্যক্ত করা হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ সব মিলিয়ে এক সুদিনের অপেক্ষায় আছে। যেখানে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুর্নীতি কমবে, মানুষের সব অধিকার সংরক্ষিত হবে। সর্বোপরি মানুষের উন্নতি হবে, দেশ এগিয়ে যাবে।
দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার বিষয়ে বারবার তুলে ধরছে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষও চান ভোটের অধিকার ফিরে আসুক। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। যার মধ্য দিয়ে অতীতের সব ভুলভ্রান্তি মুছে দিয়ে নতুনভাবে এগিয়ে চলবে বাংলাদেশ।
২০২৪-এ দেশের অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেছে। ব্যাংক খাতে বয়ে গেছে ভয়ংকর ঝড়। দেশের মানুষের প্রত্যাশা-অর্থনৈতিক খাতের সব সূচক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে। স্থায়ীভাবে ফিরে আসবে সব শ্রেণির মানুষের সচ্ছলতা। উন্নতি হবে জীবনমানের। মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় মাত্রায় নেমে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম হাতের নাগালে আসবে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের আরেকটি বড় নিয়ামক বিনিয়োগ। দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ। যার সঙ্গে অর্থনীতির চাকা আরও সচল হওয়ার পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয় জড়িত। ২০২৫ সালে বিনিয়োগ বেড়ে নতুন নতুন আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে-এমন আশাবাদ দেশের মানুষের।
২০২৫ সালে প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও বৃদ্ধি এবং প্রবাসীদের আয় বাড়ানো, আরও রেমিট্যান্স আনার বিষয়ে নানা উদ্যোগ প্রত্যাশা করে মানুষ।
রাজনৈতিক হানাহানি, সংঘাত, লড়াই, সহিংসতা চান না দেশের মানুষ। সবার প্রত্যাশা- স্থিতিশীল রাজনৈতিক, সামাজিক অবস্থার মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত হবে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, আবাসনসহ মৌলিক চাহিদা পূরণের নানা জায়গায় দেশে আজও অরাজকতা বিরাজমান। দেশবাসী চান এসব অরাজকতা বন্ধ হয়ে প্রকৃতপক্ষেই দেশে শান্তি, স্বস্তি ফিরবে। প্রকৃতপক্ষেই উন্নত আর সমৃদ্ধশালী দেশ হবে বাংলাদেশ।
চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/১ জানুয়ারি ২০২৫