Home / শিক্ষাঙ্গন / নতুন শিক্ষাবর্ষের ৯৬ % পাঠ্যবই ছাপা সম্পন্ন
book fair

নতুন শিক্ষাবর্ষের ৯৬ % পাঠ্যবই ছাপা সম্পন্ন

অসাধু ব্যবসায়ীদের নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও ইতোমধ্যে নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রায় ৯৬ শতাংশ পাঠ্যবই ছাপা সম্পন্ন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড । নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর এক মাস আগেই পাঠ্যপুস্তক উৎসবের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংস্থাটি। দেশের সব উপজেলায় বিনামূল্যের পাঠ্যবই পৌঁছে গেছে।
শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই সারাদেশের শিক্ষার্থীদের হাতে চার রঙের চকচকে পাঠ্যবই।

জানা যায় , সরকার ২০২০ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ৪ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ৩৫ কোটি ৩১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৫৪ ছবি ছাপছে। ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বইয়ের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩৪ কোটি কপি বই ছেপে উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করেছে এনসিটিবি।

বাকি প্রায় ৮০ লাখ কপি বইয়ের মধ্যে ৬০ লাখ কপি ছাপা হলেও কাগজ ও ছাপার মান ভালো না হওয়ায় সেগুলো গ্রহণ করছে না এনসিটিবি। মানহীন এসব বই গ্রহণ করতে ছাপাখানার মালিকরা ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওপর। তবে এনসিটিবি বইয়ের মান রক্ষায় কঠোর অবস্থানে। শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নিয়মিত পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিতরণ কাজ তদারক করছেন বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক প্রফেসর জিয়াউল হক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৯৬.০৩ % বইয়ের ছাপা শেষ। বাকি বইয়ের মধ্যে প্রাথমিক স্তরের ৫৫ লাখ কপি বইয়ের মধ্যে বাফার স্টকের ৫ % বইও রয়েছে। এসব বই কিছুটা দেরিতে গেলেও সমস্যা নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাহিদার শতভাগ বই উপজেলা পর্যায়ে চলে গেছে।’

এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, দরপত্রের শর্তানুযায়ী ১১ নভেম্বরের মধ্যে সব বই ছাপার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৫-২০টি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে বই নিতে পারেনি। কেউ কেউ পাঠ্যপুস্তকে নিম্ন মানের কাগজ, কালি ও অন্য উপকরণও ব্যবহার করেছে। মুদ্রণশিল্প সমিতির এক শীর্ষ নেতার প্রতিষ্ঠানে নিম্ন মানের কাগজে ছাপা হওয়া ৩০ লাখ কপি বই গ্রহণ করতে এনসিটিবির ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। অপর একটি প্রতিষ্ঠানের কাছেও ৩০ লাখ কপি বই আটকে রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের প্রায় ৫৫ লাখ কপি এবং মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ২৩ লাখ কপি বই ছাপা বাকি রয়েছে বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘যারা নির্ধারিত সময়ে বই দিতে পারেনি তাদের ওই লটের বইয়ের টাকার (মূল্য) ওপর ১০ % হারে জরিমানা দিতে হবে। কেউ মাফ পাবে না। আর নিম্ন মানের একটি বইও এনসিটিবি গ্রহণ করবে না। বইয়ের মানের ক্ষেত্রে কারও সঙ্গে আপোষও করা হচ্ছে না।’

আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ কোটি ৫৪ লাখ দুই হাজার ৩৭৫ কপি এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার ১৭৯ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।

আগামি ১ জানুয়ারি সারাদেশে একযোগে ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ আয়োজন করে এসব বই নতুন সব স্কুলে বিতরণ করা হবে। এতো বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেয়ার উদাহরণ বিশে^র আর কোনো দেশে নেই। এদিক দিয়ে বাংলাদেশ একটি অনন্য নজির স্থাপন করেছে।

এবার বিনামূল্যে পাঠ্যবই ছাপাতে সরকারের ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের বই ছাপাতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা এবং মাধ্যমিক স্তরসহ অন্য বই ছাপাতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা। মুদ্রণ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে গত বছর পাঠ্যবই ছাপাতে সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হয়েছিল বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এবার সিন্ডিকেট কিছুটা ভেঙে দেয়া হয়েছে । এতে সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা সাশ্রয়ও হচ্ছে।

২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকেই সরকার ধারাবাহিক সাফল্য হিসেবে নতুন বছরের শুরুতেই সারাদেশের শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করে আসছে। ২০১৯ পর্যন্ত মোট ২৯৬ কোটি সাত লাখ ৮৯ হাজার ১৭২টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রতি বছর সরকারের বিশাল এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ শিক্ষাবর্ষে নিম্ন মানের কাগজে পাঠ্যবই ছাপার শুরুতে অসাধু মুদ্রাকররা বেপরোয়া তৎপরতা শুরু করেছিল। এবার কাগজের মূল্য প্রতি টনে প্রায় ২০ হাজার টাকা কমলেও এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী নিম্ন মানের কাগজে বই ছাপার চেষ্টা থেকে পিছু হটেনি।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক দরপত্রে বিদেশি প্রতিষ্ঠান ঠেকাতে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কমমূল্যে প্রাথমিক স্তরের সব বই ছাপার কাজ বাগিয়ে নেয় দেশীয় মুদ্রাকররা। এর ফলে এবার বিদেশের কোন প্রতিষ্ঠান পাঠ্যবই মুদ্রণের কাজ পায়নি। গত ৪-৫ বছর ধরে বিদেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বই মুদ্রণের কাজ পেয়ে আসছিল। এতে পুরো কাজটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়েছিল। বইয়ের মানও ভালো হয়েছিল। আবার দেশীয় ছাপাখানার শিল্পের সম্প্রসারণও হয়েছে।

বিদেশি প্রতিষ্ঠান ঠেকিয়ে দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠানই এবার কম দামে কেনা নিম্ন মানের কাগজে বই ছেপে লাভ পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ তৎপরতা ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেয় এনসিটিবি। তারা অনেক প্রতিষ্ঠানের বিপুলসংখ্যক বই ধ্বংস করে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কেনা কাগজ বাতিল ঘোষণা করা হয়। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেক কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। অনেক প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করারও পদক্ষেপ নিচ্ছে সংস্থাটি।

উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ২০২০ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের বইয়ের মান যাচাইয়ের কাজ পেয়েছে ‘কন্টিনেন্টাল ইনস্পেকশন বিডি লি.’ এবং মাধ্যমিক স্তরের বইয়ের মান যাচাইয়ের কাজ পেয়েছে ‘মেসার্স ব্যুরো ভেরিটাস’। এই দু’টি প্রতিষ্ঠান পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বই ছাপার কাগজ অনুমোদন দেয়। তিন শতাধিক ছাপাখানা ২০২০ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের কাজ পায়।

বার্তা কক্ষ , ৩ ডিসেম্বর ২০১৯