শিক্ষার মান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই শিক্ষাক্রম বা শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়। তবে শিক্ষার্থীদের নতুন পদ্ধতিতে অভ্যস্ত করার জন্য যেসব শিক্ষকের প্রয়োজন হয়, তাদেরও নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা চাই। এবার নতুন বছরের শুরুতেই প্রথম,ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে যে পাঠ্যবই পড়ানো শুরু হবে,তা রচিত হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী।
পর্যায়ক্রমে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত এ শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন ও সামষ্টিক পরীক্ষা উভয়ই থাকবে। এখনকার মতো নবম-দশম শ্রেণির লেখাপড়ার ওপর এসএসসি পরীক্ষা হবে না। কেবল দশম শ্রেণির পাঠের ওপর এসএসসি হবে। এইচএসসি পরীক্ষাও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির লেখাপড়ার ওপর হবে না।
একাদশ ও দ্বাদশে দু’টি পাবলিক পরীক্ষা হবে এবং এ দু’য়ের ভিত্তিতে দেয়া হবে শিক্ষার্থীদের ফল। অর্থাৎ অতীতের শিক্ষণ,শিখন ও মূল্যায়ন পদ্ধতির সঙ্গে মিল নেই নতুন পদ্ধতির।
প্রশ্ন হলো নতুন এ শিক্ষাক্রমের ওপর রচিত পাঠ্যবই অনুযায়ী শিক্ষা প্রদানে শিক্ষকরা কতটা প্রস্তুত? প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নতুন বছর সমাগত হলেও শিক্ষকদের এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ পর্যাপ্ত নয়,বলা যায়-নামমাত্র।
কারণ, পৌনে ২ লাখ শিক্ষককে অনলাইনে এক ঘণ্টার‘ওরিয়েন্টেশন’ দেয়া শুরু হলেও সার্ভার জটিলতার কারণে এটি শেষ করতে পেরেছেন মাত্র ৭৫ হাজারের মতো শিক্ষক। এরপর শিক্ষকদের ছয় ঘণ্টার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে উপজেলা পর্যায়ে। এটুকু প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষকদের পক্ষে একেবারেই নতুন ‘অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই’ কতটা সফলতার সঙ্গে পাঠদান সম্ভব হবে, সেটা এক বড় প্রশ্ন।
আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, ২০০৮ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে যে সৃজনশীল পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছিল, আজ ১৪ বছর পরও শিক্ষকদের একটি বড় অংশ তা বোঝে না। সংশয়ের জায়গাটি এখানেই।
তাই নতুন পদ্ধতি ও নতুন পাঠ্যবই অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান সম্পর্কে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেয়ার বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদানের পদ্ধতি নিয়ে ইতঃপূর্বে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। এক পদ্ধতি চালুর কিছুদিন পর অন্য পদ্ধতি আনা হয়েছে।
এভাবে শিক্ষার্থীরা একধরনের ‘গিনিপিগে’ পরিণত হয়েছে। এর মাশুল দিতে হচ্ছে তাদের। তাই নতুন যে কোনো পদ্ধতি চালুর আগে সেই পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষকদের সম্যক প্রশিক্ষণ ও জ্ঞানদান করা প্রয়োজন। সরকার সেদিকে দৃষ্টি দেবে,এটাই কাম্য।
৩০ ডিসেম্বর ২০২২
এজি