দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় চাঁদপুরের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো অস্থানে আছে। জেলায় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও ইভটিজিংসহ সমাজিক অপরাধগুলো নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের জিরো টলারেন্স ভূমিকাও লক্ষ্যণীয়।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, স্থানীয় এমপি, বিভিন্ন রাজনীতিকদল, ব্যবসায়ী ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ এখানকার শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ বর্তমানে এমনটাই মনে করছেন।
তাদের দাবি স্থানয়ী জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কঠোর অবস্থা ও রজনীতিক দলগুলোর মধ্যে একে অপরের সু-সম্পর্ক এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকরের মঝে সম্প্রিতি শক্ত বন্ধনের ফলেই দিনে দিনে চাঁদপুরে এই সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের রয়েছে দৃশ্যমান হচ্ছে।
তবে গেলো বছরের তুলনায় নতুন বছরের প্রথম মাসটি এ জেলা সিকিকোটি মানুষের মাঝে কিছুটা হলে হতাশার রঙ ঢেলে দিয়েছে। বাড়ছে আত্মহত্যা প্রবণতা সাথে হত্যা আর দুর্ঘটনা।
এসবের ফলে ২০১৭ সনের প্রথম মাস জানুয়ারিতেই চাঁদপুরে ১১টি লাশ উদ্ধার হয়েছে ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ট্রেনে কাটা ও সড়ক দুর্ঘটনায় ৩, অজ্ঞাত লাশ ৪, স্বামী কতৃক স্ত্রী হত্যা ১, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা ১, ঘুমন্ত অবস্থায় রহস্যজনক মৃত্যু ১ এবং গলা কেটে হত্যা ১ জন রয়েছে।
এসবের অধিকাংশই অপমৃত্যু হিসেবে নিয়েছে সংশিষ্ট থানা পুলিশ এবং অজ্ঞাত দু’যুবকের লাশের সন্ধান এখানো পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে দেখা যায়, ৩ জানুয়ারি বিকেলে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে কাছে চাঁদপুর থেকে কুমিল্লাগামী ডেমু ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে শফিকুর রহমান (৬৫) নামের এক বৃদ্ধার মর্মান্তি মৃত্যু হয়। নিহত শফিকুর রহমান পুরানবাজার পশ্চিম শ্রীরামদী ছৈয়াল বাড়ির মৃত কালু ছৈয়ালের ছেলে। এ ঘটনার একদিন পর ৪ জানুয়ারি নিহতের পরিচয় সনাক্ত করে রেলওয়ে পুলিশ লাশের ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। এ ব্যাপারে চাঁদপুর রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছিলো।
৭ জানুয়ারি শনিবার সকালে শহরের চেয়ারম্যান ঘাট এলাকা থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারকালে মৃত যুবকের কপালে আঘাতের চিহ্ন ও রক্ত দেখা গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ওই ঘটনায় মডেল থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।
একই দিন সন্ধ্যায় সদর উপজেলার বাগাদী ঘাসিপুর গ্রামে দিনমজুর তাফাজ্জল হোসেন মিজি রহস্যজনক মৃত্যু হয়। তার পরিবারের দাবি সম্পত্তিগত বিরোধের জের ধরে নিহত তাফাজ্ঝল মিজির ছোট ভাই খলিলুর রহমানের স্ত্রী, কথিত শ্যালক ও ছেলে সহ ভারাটে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। শুধু তাই নই তাফজ্জল সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছে বলে অভিযুক্তরা তার লাশ চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ৯ ানুয়ারী দিনমজুর তাফাজ্জলের কলেজ পড়–য়া একমাত্র ছেলে মো. রুবেল মিজি বাদি হয়ে চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম, সাইফুলের কথিত মামা জমির হোসেন সহ ৫ জনকে আসামীকে করে চাঁদপুর মডেল থানার মামলা দায়ের করেছে।
১৩ জানুয়ারি শুক্রবার শহরের দর্জি ঘাটস্থ ডাকাতিয়া নদীর পাড় থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন সকালে স্থানীয়রা ভাসমান অবস্থায় যুবকের লাশ দেখতে পেয়ে মডেল থানা পুলিশকে খবর দেয়। লাশ উদ্ধার করতে আসা মডেল থানার এস আই নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া তখন সাংবাদিকদের জানায়, যুবকের বয়স আনুমানিক ৩০ হবে। তার যুবকের মাথায় ও বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
১১জানুয়ারী মঙ্গলবার রাতে সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুরে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী সালমা বেগমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত স্বামীকে বাবুল খান (৩৫) আটক করেছে।
১৯ জানুয়ারি বুধবার রাতে ৩ কিশোরের বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হামিদ ফকির (৮০) নামের এক বৃদ্ধ পথচারি ও হৃদয় (১৫) নামের মোটসাইকেল আরোহী নিহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মোটরসাইকেলটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে। এ দুর্ঘটনার পর স্থানীয় এলাকাবাসী ওই সময়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে।
২০ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুরে শহরে প্রফেসর পাড়ায় আব্দুল আজিজ নাইহান (১২) নামের এক কিশোর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যাকারী কিশোর মতলব দক্ষিণ উপজেলার মাস্টার বাজার গ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী আইয়ুব আলী তালুকদারের ছেলে। সে চাঁদপুর শহরের গনি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র। নাইহান মায়ের সাথে প্রফেসর পাড়া এলাকাস্থ ইউসিবিএল ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ম্যানেজারের বাস ভবনে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতো।
২৩ জানুয়ারি সোমাবার রাতে শহরের কোড়ালিয়া এলাকায় বসতঘর থেকে সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মরহুম ছফিউল্যাহ ছেলে মো. সুমনের (৫০) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুমনের পরিবার দাবি করে সে নিজের ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে। তবে এলাকাবাশীদের মধ্যে কেউ কেউ বিষয়টি আত্মহত্যা বলছে সন্দেহ করছে।
২৭ জানুয়ারি শুক্রবার সকালে শাহরাস্তি উপজেলার বানিচোঁ বাজারে আনোয়ার উল্যাহ মিয়াজী (৬০) নামে এক পল্লী চিকিৎসকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আনোয়ার ওই উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়নের বানিচোঁ গ্রামের বাসিন্দা। এলাকাবাসী জানায় রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা তার গলাকেটে মরদেহ ঘরের বাইরে ফেলে চলে যায়। ভোরে মানুষ নামাজ পড়েতে যাওয়ার সময় মরদেহ দেখতে পয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
সবশেষ ২৯জানুয়ারি রোববার দুপুরে শহরের ষোলঘর বিটি রোডে অটোবাইক চাপায় জান্নাতুল মাওয়া (৬) নামের এক স্কুল ছাত্রীর করুণ মৃত্যু হয়। জান্নাতুল তরপুরচন্ডী মিজি বাড়ির খোরশেদ মিজির মেয়ে এবং ষোলঘর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির ছাত্রী।
এদিকে অজ্ঞাত দু’যুবকের লাশের বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়ালি উল্যাহ অলি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘অজ্ঞাত দু’ লাশের সন্ধান পেতে আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তবে আমরাদের ধারণা এই লাশ দু’টি চাঁদপুরের নয়।’
প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩: ০০ এএম, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, শুক্রবার
ডিএইচ