জাতীয়

নতুন নৌ-প্রধান হলেন কুমিল্লার কৃতি সন্তান শাহীন ইকবাল

নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে কুমিল্লার সন্তান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল। তাকে ভাইস অ্যাডমিরাল পদে পদোন্নতি দিয়ে নৌবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

তিনি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ছোটনা গ্রামের কৃতি সন্তান। তিনি কুমিল্লার দ্বিতীয় কৃতিসন্তান যিনি নৌবাহিনীর প্রধান হলেন। এর আগে কুমিল্লার বরুড়ার উপজেলার কৃতিসন্তান এরিয়ার এডমিরাল আবু তাহের নৌবাহিনীর প্রধানের পদে আসীন হয়েছিলেন। এরিয়ার এডমিরাল (অবঃ) আবু তাহের এখন কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে ১৮ জুলাই শনিবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠায় আন্তঃবাহিনী সংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর)।

প্রজ্ঞাপনের বরাত দিয়ে আইএসপিআর আরও জানায়, রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবালকে আগামী ২৫ জুলাই থেকে ভাইস অ্যাডমিরাল পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। ওই সময় থেকে প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানদের আইন-২০১৮ অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই পর্যন্ত, তিন বছরের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো।

গত সাত মাস ধরে নৌ সদরে সহকারী নৌ প্রধান (অপারেশান্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন শাহীন ইকবাল। তিনি নৌবাহিনী প্রধান পদে অ্যাডমিরাল আবু মোজাফফর মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব চৌধুরীর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন।

আবু মোজাফফর মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব চৌধুরী ২৫ জুলাই চাকরির মেয়াদ পূর্ণ করে অবসর প্রস্তুতি ছুটিতে (এলপিআর) যাচ্ছেন বলে আলাদা এক আদেশের জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

কুমিল্লার সন্তান নব নিযুক্ত নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ১৯৮০ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১৯৮২ সালের ০১ ডিসেম্বর এক্সিকিউটিভ শাখায় কমিশন লাভ করেন।

তাঁর দীর্ঘ এবং সুপরিচিত ৪০ বছরের কর্মজীবনে তিনি সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর পেশাদারিত্ব, সততা ও একনিষ্ঠতার জন্য তিনি নৌবাহিনীর সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও নাবিকগণের নিকট সুপরিচিত।

তিনি নৌবাহিনী ফ্রিগেটসহ সকল শ্রেণির জাহাজ ও গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি কমান্ড করেছেন। এছাড়াও তিনি নৌ সদরে সহকারী নৌ প্রধান (অপারেশান্স), সহকারী নৌ প্রধান (পার্সোনেল), পরিচালক নৌ অপারেশান্স, পরিচালক নৌ গোয়েন্দা, চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার, খুলনা নৌ অঞ্চলের অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সাথে পালন করেন।

চাকরি জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সর্বোচ্চ নেতৃত্বের গুণাবলী, সুদূর প্রসারী চিন্তা ভাবনা, আন্তরিকতা ও সততার ছাপ রেখেছেন।

দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ ও সামরিক কৌশলগত শিক্ষা অর্জন করেছেন। তিনি প্রতিটি প্রশিক্ষণে উচ্চতর গ্রেডিং অর্জন এবং কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় নৌবাহিনী প্রধান এর নিকট হতে সর্বোচ্চ প্রশংসা প্রাপ্তসহ নানা ধরনের সম্মানে ভূষিত হন।

তিনি যুক্তরাষ্ট্র হতে নেভাল স্টাফ কোর্স, মেরিটাইম কম্পোনেন্ট কমান্ডার ফ্ল্যাগ অফিসার কোর্স, ইন্টারন্যাশনাল সারফেস ওয়ারফেয়ার কোর্স, ভারত হতে এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার কোর্স এবং মিরপুর ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ হতে এনডিসি কোর্সসহ দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ অত্যন্ত সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন।

চাকরি জীবনে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিশেষ অবদান রাখেন।

২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন শাহীন ইকবাল।

পরে ২০১৩ সালে খুলনা নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার এর দায়িত্ব পালনকালে তিনি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিচারক ও বিশ্লেষক দলের সাথে কাজ করেন এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন।

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের স্থানীয় ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, মিয়ানমার-টেকনাফ মাদক এবং মানব পাচার রোধে বিশেষ অবদান রাখাসহ জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অত্যন্ত সফলতার সাথে পালন করেন।

২০১৭ সালে বলপূর্বক বাস্তচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পুর্নবাসনের জন্য ভাসান চর প্রকল্পের বাস্তবায়নে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল অন্যতম মূখ্য ভূমিকা পালন করেন।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে প্রকল্পের পরিকল্পনা, তদারকি ও বাস্তবায়ন কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা মোতাবেক প্রকল্প সূচনার মাত্র ১০ মাসের মধ্যে এক লক্ষ রোহিঙ্গাদের জন্য একটি প্রত্যন্ত দ্বীপকে বাসযোগ্য করে তোলার মাধ্যমে তিনি সর্বমহলের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন।

বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল আন্তর্জাতিক মেরিটাইম পরিমন্ডলে একাধিকবার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।

তিনি যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ভারত, সৌদি আরব, কুয়েত এবং কাতার সহ বিভিন্ন দেশে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও সামরিক প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল তার অসামান্য একাডেমিক সাফল্য ও পেশাদারিত্বের জন্য নৌবাহিনীর সর্বোচ্চ পদক (এনবিপি) এবং নৌ উৎকর্ষ পদক (এনইউপি) তে ভূষিত হন।

ব্যক্তি জীবনে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল কুমিল্লার এক সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ছোটনা গ্রামে। তাঁর বাবা ছোটনা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা প্রয়াত মো. আফজাল হোসেন।

পারিবারিক জীবনে শাহীন ইকবাল মিসেস মনিরা রওশন আক্তার এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র ছেলে মুনতাসির মামুন নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে কর্মরত এবং তার স্ত্রী UNFPA তে গবেষক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

পারিবারিক জীবনে নৌপ্রধান মোহম্মদ শাহীন ইকবাল মিলন ৫ ভাইবোনের মাঝে চতুর্থ। বড় ভাই কর্নেল (অবঃ) জাফর ইকবাল, মেজো ভাই শামীম আহাম্মদ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও ছোটো ভাই খোকন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার।

রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবালের বিস্তৃত অভিজ্ঞতা, সাধারন জীবন যাপন এবং অসাধারন নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা নৌবাহিনীর সর্বস্তরের সদস্যদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আরো সমৃদ্ধ হবে বলে সকলের প্রত্যাশা।

মোহাম্মদ শাহীন ইকবালের নৌপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় সামাজি সংগঠন ঐতিহ্য কুমিল্লাসহ কুমিল্লাবাসী অভিনন্দন জানিয়েছে।

প্রতিবেদক:জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ১৯ জুলাই ২০২০

Share