নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে চায় দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি।
একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে দলটি ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আলোচনার ওপর জোর দিচ্ছে। বিএনপি প্রাথমিকভাবে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে ভূমিকা রাখতে চায়।
জানা গেছে, সুযোগ পেলে বিএনপি সার্চ কমিটিতে দলের প্রতিনিধি দেবে। এমনকি নির্বাচন কমিশনের জন্য সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নামের তালিকাও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করার কথা ভাবছে দলটি।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে তাদের দাবি উপেক্ষা করা হলে প্রয়োজনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথেও নামবে। এই মুহূর্তে বিএনপি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে দলের অবস্থান নির্ধারণকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। খুব শিগগিরই দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এই বিষয়ে দলের অবস্থান ও করণীয় নির্ধারণ করবেন।
বর্তমান কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। তাই সাংবিধানিকভাবে এই সময়ের মধ্যেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগে এবারো সার্চ কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমকে আভাস দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এরপরই সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপি তাদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের সরকারি উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা করে বিএনপি এ বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জনমতের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে বলেছেন, নির্বাচন পরিচালনা করবে সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। সেই নির্বাচন কমিশন গঠন করবে আপনাদের নির্বাচিত সার্চ কমিটি নয়, জনগণের নির্বাচিত সার্চ কমিটি। জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। অন্যথায় যে উদ্যোগই গ্রহণ করেন না কেন জনগণ সমর্থন করবে না। এর বাইরে অন্য কোনো উদ্যোগ নিলে দেশের জনগণ তা মেনে নেবে না বলেও সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
কয়েক দিন ধরে দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বলেন, সার্চ কমিটির নামে যে তামাশা হচ্ছে, সেই তামাশা বন্ধ করতে হবে। সার্চ কমিটি দিয়ে কী হবে, তা আমাদের ভালোই জানা আছে। আমরা বলতে চাই, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধান বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে আমাদের কোনো একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
এ দিকে সৌদি বাদশার রাজকীয় অতিথি হিসেবে পবিত্র হজ পালন শেষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে শনিবার রাত ৯টা ১০ মিনিটে প্রথমবারের মতো গুলশানে নিজের কার্যালয়ে আসেন তিনি।
এ সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তাকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর মির্জা ফখরুলসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শওকত মাহমুদ, কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহাসহ অন্য নেতারা দেশের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে চেয়ারপার্সনকে অবহিত করেন।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ছাড়াও চেয়ারপার্সনের সঙ্গে দলের সিনিয়র নেতারা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়েও আলোচনা করেছেন।
গুলশান কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপার্সন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা পালনের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন না করলে দলের অবস্থান কি হবে তা নিয়েও নিজেদের মধ্যে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে আমাদের দলের চেয়ারপার্সন দলের সর্বোচ্চ ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকবেন।
সেখানে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েই আলোচনা হবে। দলীয় ফোরামে আলোচনার পর জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও তিনি আলোচনা করবেন। এরপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নতুন নির্বাচন আদায়ের বিষয়ে আমাদের করণীয় নির্ধারিত হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর এক সদস্য জানান, দল ও জোট ছাড়াও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি নিয়ে আমাদের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও আলোচনা করতে পারেন।
জানা গেছে, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে ক্ষমতাসীনদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার বিষয়টিও বিবেচনায় রেখেছে বিএনপি। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের সার্বিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদেরও অবহিত করবে বিএনপি। (মানবকণ্ঠ)