কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালির কবি, বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অমর কবি। প্রতি বছর আমাদের দেশে তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনায় উদযাপিত হয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধু কবি নজরুলকে ছাত্রজীবন থেকেই ভালোবাসতেন।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে প্রত্যাবর্তনের পর রাষ্ট্রীয় নানা কাজে ও যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গঠনের আত্মনিয়োগ করেন। সে সময় আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রীসভায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের রচিত ‘জাতীয় সঙ্গীত’,বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের রচিত সেনাবাহিনীর ম্যাচিং সঙ্গীত বা‘ রণসঙ্গীত ’-চল্ চল্ চল্ ’- মন্ত্রীসভায় অনুমোদন লাভ করে।
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকার কবির প্রতি সম্মানার্থে এ সিদ্ধান্ত নেন। আরও বলা হয় কবি দীর্ঘদিন অসুস্থ অবস্থায় কলকাতায় আছেন। এ জন্যে তাঁকে কিছুদিনের জন্যে ঢাকায় এনে সেবা যত্ম করা হবে এবং দেশের অপাময় জনসাধারণ কবিকে দেখাতেও পারবেন। তাই বাংলাদেশে আনা হয়। বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে যোগাযোগ করে কবিকে বাংলাদেশে আনায় সিদ্ধান্ত নেন। সম্ভবত : বঙ্গবন্ধুর দ্বারাই সম্ভব হয়েছে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে টেলিফোনে বিষয়টির সমাধান এভাবে আনা। তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী মতিউর রহমান ও আ’লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা সরোয়ার সর্বোপরি কবিকে দেশের আনার ব্যাপারে পশ্চিম বঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রােেয়র সাথে বৈঠক করে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন।
তারিখ নির্ধারণ হলো ১৯৭২ সালের ২৪ মে। ভোর রাতে কলকাতার সিআইটি বিল্ডিং এর ফ্ল্যাট- ৪, ব্লক এল , ক্রিস্টেফার রোডের বাসা থেকে সবার অগোচরে কবিকে কলকাতার দমদম বিমান বন্দরে আনামাত্রই বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ বিমানে তুলে তৎকালীন ঢাকা বিমান বন্দরে নিয়ে আসা হয়।
পূর্ব সিদ্বান্ত মতে আগের দিন ভোর রাতে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করে বাংলাদেশের এয়ার লাইনের ঐ বিশেষ বিমানে করে কবিকে নিয়ে আসা হয়। এর সাথে ছিলেন কবির দু’পুত্র সব্যসাচী কাজী ও অনিরুদ্ধ কাজী ও তার স্ত্রী কল্যাণী কাজী। আরও ছিলেনÑকবির নাতনি খিলখিল কাজী ও মিষ্টি কাজী। ছিলেন- কবির দু’সেবক কুশা সাউ ও কটি সাউ।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর আবাসিক এলাকায় ২৮ নম্বর সড়কের ৩৩০,বি বাড়িটি কবির জন্য ঠিক করে রাখা হয়। ঐদিন বিকেলে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুননেসা মুজিব কবির ঐ বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন।
কাজী নজরুর ইসলামকে ঢাকায় আনা ও তাঁর জন্য সরকারিভাবে বাড়ি প্রদান, মেডিকেল বোর্ড গঠন,কবি ও তাঁর পরিবারের ভরণ-পোষণ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান,পরবর্তীতে পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা,১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট উপাধি-এ সবই বঙ্গবন্ধুর একান্ত আগ্রহ ও নির্দেশ করা হয়েছে।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলেন-বিদ্রোহীকবি,গণমানুষের কবি,বাঙালির কবি, জয় বাংলার কবি। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়-কবি নজরুল‘পূর্ণ অভিনন্দন’ কবিতায় (যাত্রার গান কাব্যের অর্ন্তভূক্ত) লিখেছেন, বাংলা বাঙালির হউক। বাংলার জয় হোক। বাঙালির জয় হোক। আর বঙ্গবন্ধু শ্লোগান দিয়েছেন ‘জয় বাংলা’।
তিনি ঐ কবিতা থেকেই বোধ হয় ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানটি বাঙালির জন্যে এনেছেন বা দিয়েছেন। আজ দু’জনই বেঁচে নেই। কিন্তু আছে নজরুলের বাংলাদেশ ; বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। আছে বাঙালি,আছে ও থাকবে বঙ্গবন্ধুর শ্লোগান ‘জয় বাংলা’।
‘জয় বাংলা’জাতীয় স্লোগান,মন্ত্রিসভায় অনুমোদন
‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক এ অনুমোদন দেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশের সব সাংবিধানিক কর্মচারী,সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব অনুষ্ঠানে জাতীয় স্লোগান হিসেবে জয় বাংলা স্লোগান দিতে হবে।

তথ্যসূত্র: চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তরের সচিত্র বাংলাদেশ নামক মাসিক পত্রিকায় মে ২০১৮ সংখ্যায় অনুপম হায়াৎ রচিত -নবারুণ ও সচিত্র মাসিক পত্রিকা,ডা.আনিস আহমেদের সম্পাদনায়‘কাজী নজরুলের জীবনী’ এবংওয়েবসাইড থেকে সংগৃহীত ছবি)
লেখক : আবদুল গনি,সাবেক শিক্ষক,সাংবাদিক ও সাধারণ সম্পাদক,নজরুল গবেষণা পরিষদ,চাঁদপুর।
২০.২.২০২২
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur