ধূমপান নয় শব্দটি ধূমটান!

‎Wednesday, ‎08 ‎July, ‎2015  08:13:00 PM

ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান
‘ধূমপান’ শব্দটি ‘ধূম’ এবং ‘পান’ শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে গঠিত। ধূম হলো ‘ধোঁয়া’ বা বাষ্পের প্রতিশব্দ। যেহেতু তামাক জাতীয় পদার্থের ধোঁয়া গ্রহণ করা হয় তাই একে ‘ধোঁয়া পান’ করা অসম্ভব সে হিসেবে ধূমপান শব্দটি ভুল ।

শুধুমাত্র তরল পদার্থ পান করা সম্ভব ।ধূমপান হচ্ছে তামাজাতীয় দ্রব্যাদি বিশেষ উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে শ্বাসের সাথে তার ধোয়া শরীরে গ্রহণের প্রক্রিয়া। সাধারণ যেকোনো দ্রব্যের পোড়ানো ধোঁয়া শ্বাসের সাথে প্রবেশ করলে তাকে ধূমপান বলা গেলেও মূলত তামাক জাতীয় দ্রব্যাদির পোড়া ধোঁয়া গ্রহণকেই ধূমপান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ধূমপান এর সঠিক নাম হবে “ধূমটান”.বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিকগণসহ মোটামুটি সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত যে, ধূমপান যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্যান্সার সহ নানা রোগের অন্যতম প্রধান কারণ এবং ধারক ও বাহক।গবেষণায় দেখা গেছে সিগারেটের ধূমপানে নিকোটিনসহ ৫৬টি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বিরাজমান।

২০১০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে বিশ্বের ১৯২টি দেশে পরিচালিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিজে ধূমপান না করলেও অন্যের ধূমটানের (পরোক্ষ ধূমপান) প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৬,০০,০০০ মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে ১,৬৫,০০০-ই হলো শিশু। শিশুরা পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নিউমোনিয়া ও অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়ে।

এছাড়া পরোক্ষ ধূমটানের কারণে হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার সহ শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগও দেখা দেয়। গবেষণায়ও এও বেরিয়ে এসেছে যে, পরোক্ষ ধূমপান পুরুষের তুলনায় নারীর উপর বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৮১,০০০ নারী মৃত্যুবরণ করেন।

এর আগে ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে পরিচালিত এজাতীয় আরেকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিলো যে, পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ৪০% শিশু, ৩৩% অধূমপায়ী পুরুষ এবং ৩৫% অধূমপায়ী নারী রয়েছেন। তাতে এও ফুটে ওঠে যে, পরোক্ষ ধূমটানের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির স্বীকার হচ্ছেন ইউরোপ ও এশিয়ার মানুষ । আমাদের মনুষ্য জীবনে অনেক কারনে ধূমটান যূক্ত হয়ে গেছে। এর বাইরে অবস্থান করতে পারেন না, এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি।

অর্থাৎ ধূমটান করেন এমন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। অধুমপায়ী মানুষের সংখ্যা অনেক কম। তবে এই ব্যপারে এখন আর খুলে বলতে হয় না যে, ধূমটান করলে কী কী ক্ষতি হয়। সবাই জানেন। শুধু কিছু জরুরী পদক্ষেপের কারনে এই কাজ থেকে বিরত থাকা যাচ্ছে না। অনেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন যে কোন ভাবেই যদি এই ধূমটান থেকে বিরত থাকা যায়।

ধূমটান একটি বাজে অভ্যাস অথচ অধিকাংশ মানুষ এর সাথে যুক্ত। অভ্যাস যদি না হতো তবে একে বাদ দেয়া সহজ ছিল। তার পরেও ধূমটান থেকে বিরত থাকার বেশ কিছু জরুরী টিপস বদলে দিতে পারে আপনার জীবন।

সদিচ্ছা:

নিজেকে ধূমটান থেকে বিরত রাখার জন্য সদিচ্ছা থাকাটা একেবারেই জরুরী। তবে এই সদিচ্ছা থাকলেও অনেকেই তা থেকে দু্রে থাকতে পারেন না। তাই যে কোন ভাবেই হোক নিজেকে এই অভ্যাস থেকে মুক্তি দেবার জন্য দৃড় প্রত্যয় ব্যাক্ত করতে হবে। অনেকেই মনে করেন ধূমটান একটি অহেতুক তৃপ্তির যোগান দেয়।

বিকল্প:

অনেকেই বিকল্প হিসাবে খোজেন বিভিন্ন ধরনের মাদক জাতীয় কিছু। ভুল আপনি মাদকের সাথে নিজেকে জড়িয়ে লাভবান না হয়ে আরো খারাপের দিকেই যাবেন। আমি ধূমটানের বিকল্প হিসাবে চা কফি কিংবা উপাদেয় জুস এসব পান করার কথা বলব। কারন আপনি যদি কিছু না কিছু পান করেন আর খুব বেশি চিন্তা না করেন তবে নিকোটিনের নেশা ভুলে যেতে পারেন।

ব্যস্ততা বাড়ানো:

ব্যস্ততা বাড়ানো আপনার জন্য অনেকটাই কাজের হবে বলে আমি মনে করি। ব্যস্ত হয়ে উঠলেই আপনি ভুলে যেতে পারেন নিকোটিনের সেই বাড়তি লাভ। তবে কাজের ফাঁকে সব সময় মুখ রোচক খাবার খাওয়া উচিত। সেসব মুখ রোচক খাবার ভুলিয়ে দেবে আপনার নিকোটিনের নেশা।

নিজেকে ধূমটান থেকে বিরত রাখার উপায় অনেক। তবে নিজে ঠিক না হলে তেমন কোন লাভ নেই। বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডা দেয়ার ফলাফল হচ্ছে ধূমটান প্রারম্ভিক পর্ব। তাই সেই বন্ধুদের সাথে কিছুদিন না মিশে দেখুন যারা করেন।

এত কিছু যা করেছেন তার সব কিছুর মুলে দুটো বিষয় কাজ করবে, এক- আপনি একটি কাজ করতে পেরেছেন, ধূমটান মুক্ত জীবন। দুই- আপনি বাড়তি অর্থ অপচয় থেকে মুক্ত হতে পেরেছেন। এই দুটি তৃপ্তির কাছে আমার মনে হয় না ধূমটান জিতবে।

লেখকঃ
সহকারী অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান,বক্ষব্যাধি
এম এইচ শমরিতা হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা।

Share