জাতীয়

ধার-দেনা পরিশোধের পর তেলের দাম কমানো হবে : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ভর্তুকি দেয়া ঋণ পরিশোধের পর প্রয়োজনে ডিজেলের দাম (জ্বালানি তেলের ) কমানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতীয় সংসদে আজ প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদকে তিনি এ তথ্য জানান। বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেট্রোল আমরা কিনি না। আমাদের গ্যাস ফিল্ড থেকে বাই প্রোডাক্ট হিসেবে যে পেট্রোল আসে সেটা আমরা রফতানি করি। ডিজেলের দাম কমানোর বিষয়টা আসছে।

তিনি বলেন, যখন বিশ্ববাজারে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিলো তখন আমরা সাবসিডি দিয়ে কম দামে ডিজেল বিক্রি করেছি। যার ফলে আমাদের পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে হাজার হাজার কোটি টাকা লোন হয়ে গেছে। ৩৮ হাজার কোটি টাকা লোন আসে। ভ্যাট, শুল্ক বাকি। এই প্রথম আমরা কিছুটা সাশ্রয়ী করতে পারছি। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম বেড়েছিলো তখন কিন্তু সংসদ সদস্য এই দাবি করেননি- আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম বেড়েছে আমরাও দাম বাড়াই। সেটা কিন্তু কেউ বলেন না। বরং আমরা যদি ১ টাকা ২ টাকা বাড়িয়েছি সেটার জন্য ভাংচুর স্ট্রাইক এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন যে অবস্থা আছে তাতে আমাদের পেট্রোলিয়াম করপোরেশন কিছু আয় করে ঋণ শোধ করছে। ইতোমধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ শোধ করা হয়েছে। আরো ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে। তারপরও ট্যাক্স রয়েছে, ভ্যাট রয়েছে আমাদের পরিশোধ করতে হবে। এখনও প্রায় ১৫/১৬ হাজার কোটি টাকা আমাদের শোধ করার অপেক্ষা। এত দিন যাবৎ ভর্তুকি দিলাম। যে লোনটা নেওয়া হলো ডিজেল কেনার জন্য সেগুলো যখন পরিশোধ করা হবে তখন ধার দেনা শোধ করার পর প্রয়োজন হলে দাম কমাবো।
তিনি বলেন, জাপান, চায়না, ভারত থেকে শুরু করে ইউরোপিয়ান দেশগুলো দেশে বিনিয়োগ করছে। জাপান এখানে ৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। ভারতও দিচ্ছে। চায়নার আরও বড় বড় অফার আসছে। পৃথিবীর বড় বড় দেশ বাংলাদেশে লাইন দিচ্ছে বিনিয়োগ করার জন্য। তাদের কাছে বাংলাদেশ বিনিয়োগের সবচেয়ে উচু ক্ষেত্র।

পাইপলাইনে বাসায় গ্যাস ব্যবহার নিরুৎসাহিত
পীর ফজলুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাইপলাইনে বাসা-বাড়িতে গ্যাস ব্যবহার আমরা নিরুৎসাহিত করতে চাচ্ছি। সিলিন্ডারে এলপিজি গ্যাস ব্যবহারের জন্য ট্যাক্স কমিয়েছি। বিভিন্ন প্রনোদনা দিচ্ছি। গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যে সব এলাকায় শিল্প স্থাপন হচ্ছে সে সব এলাকায় আমরা গ্যাস সংযোগ দিয়ে যাচ্ছি।

নতুন মন্ত্রী নিয়োগ দেয়ারও পরিকল্পনা নেই

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে ভেঙে দুইটি মন্ত্রণালয় করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই একই সঙ্গে সরকারে নতুন করে কোনো মন্ত্রী নিয়োগ দেয়ারও পরিকল্পনা নেই। কাজী ফিরোজ রশিদের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা জানান।

কাজী ফিরোজ রশিদ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রীদের ‘যোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, এই মন্ত্রণালয়ে যারা এ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের কারও এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা নেই। মন্ত্রীরা পর্যটন এলাকায় যানও না, খোঁজ-খবরও রাখেন না। তাই এই মন্ত্রণালয়কে ভেঙে বিমান এবং পর্যটন দুইটি আলাদা মন্ত্রণালয় করে দুইজন মন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হবে কী-না?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা মন্ত্রী হয়েছেন, তারা যে কাজ করছেন না তা নয়। আগে থেকেই কারও অভিজ্ঞতা থাকে না, আপনি এমপি হয়েছেন, আপনার আগে থেকে এমপির অভিজ্ঞতা ছিল না। কাজ করতে করতেই অভিজ্ঞতা হয়। মন্ত্রীরা কাজ করছেন বলেই আমি এতো কিছুর উত্তর দিতে পারছি।

নতুন মন্ত্রণালয়ের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ভেঙে নতুন মন্ত্রণালয় করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। নতুন করে মন্ত্রী নিয়োগ করাও পরিকল্পনা নেই।

আইএসের অস্তিত্ব নেই
শফিকুল ইসলাম শিমুলের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কতিপয় সংগঠন ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করলেও এদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর কোন অস্তিত্ব নেই। আওয়ামী লীগ সরকার যে কোন ধরণের জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নীতিতে বিশ্বাস করে। যে কোন জঙ্গীবাদকে দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলায় বদ্ধপরিকর।

জঙ্গীবাদ মোকাবেলাসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় মহাসড়ককে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সমূহের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে জেলা পুলিশ এবং হাইওয়ে পুলিশ পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করছে। নাশকতামূলক ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিষয়ে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য যাচাই পূর্বক এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে।

২০১৬ সালে প্রবাসী সিআইপির মর্যাদা ৫ গুণ বৃদ্ধি হবে
সেলিনা বেগমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ১৯৭৬ সাল থেকে জানুয়ারি ২০১৬ পর্যন্ত মোট ৯৭ লাখ ৬২ হাজার ৬৮৫ জন বাংলাদেশী কর্মী বিএমইটি এর ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে গমন করেছেন। এর মধ্যে বর্তমান সরকারের ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিএমইটির ছাড়পত্র নিয়ে বাংলাদেশী ৩৪ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৮ জন কর্মী বিদেশে গমন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী জানান, বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীগণ প্রতি বছর বিপুল অংকের রেমিট্যান্স প্রেরণ করেন। ২০১৫ সালে মোট রেমিটেন্সের পরিমাণ প্রায় ১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাঁদের এ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতি বছর সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রদানকারী নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রবাসী কর্মীকে কমার্শিয়াল ইমপট্যান্ট পারসন (সিআইপি) মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
তিনি বলেন, বিগত ২০১৪ সালের জন্য সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রেরণকারী হিসেবে ১০ জন প্রবাসী বাংলাদেশীকে সিআইপি নির্বাচন করা হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে ১০ জনের স্থলে ৫০ জনকে সিআইপি মর্যাদা দেওয়া হবে। সিআইপি মর্যাদা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা তাদের কার্ড ব্যবহার করে সচিবালয়ে প্রবেশ, ব্যবসায়িক ভ্রমনে বিমান, রেল ও নৌপথে আসন সংরক্ষণের সুযোগ পান। এছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চাইলে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সমান সুযোগ পান। দেশে বিদেশে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বৈঠক করতে পারেন। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বাংলাদেশ মিশনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ লাভ করেন।

প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশী কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত শ্রম উইং এর সংখ্যা ১৬ থেকে ২৮-এ উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়াও যে সকল দেশে ১০ হাজারের বেশী বাংলাদেশী কর্মী রয়েছে, সে সকল দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে পর্যায়ক্রমে শ্রম উইং চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। (নয়াদিগন্ত)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট ০৭:০৭ এএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ

Share