বিএনপির নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচেন দলীয় মনোনয়ন (ধানের শীষ) না পেলে চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার সমর্থক ও নিকটাত্মীয়রা।
২০০৬ সালে স্থগিত হওয়া জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন ফাইলিংয়ের দিন ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে বিএনপির নেতাকর্মী, মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। পরের দিন তার সমর্থনে ফরিদগঞ্জ পৌর শহরে ব্যানার পোষ্টার ও তোরণ নির্মান করা হয়েছিলো। সে সময় বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান সাবেক এমপি মরহুম আলমগীর হায়দার খাঁন।
জানা যায়, ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। পরে তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
এ ছাড়া তিনি জাতীয়বাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উপদেষ্টা ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের প্রধান উপদেষ্টা। রাজনীতির মাঠে সক্রিয় এ নেতা বর্তমানে বিএনপির নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য।
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী সংগঠক ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজধানী ঢাকায় বেঙ্গল প্লাটুনের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রেসকোর্স ময়দানে প্রায় লক্ষাধিক মুক্তিযোদ্ধার উপস্থিতিতে মহান স্বাধীনতার স্থপতি, রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভলান্টিয়ার চিপ হিসাবে (গার্ড অব অর্নার) সালাম প্রদর্শন করেন। সে সময় তিনি সারাদেশে ঘুরে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন।
পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সুবাদে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর জিয়াউর রহমানের হ্যাঁ/না ভোটে ঢাকা মহানগর কমিটির কনভেনার ছিলেন এই প্রবীন রাজনীতিবিদ। তিনি তখন ঢাকা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচিত কামান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।
হুসাইন মো. এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর তার প্রথম রাজনৈতিক দল জনদলের তিনি এক নম্বর প্রতিষ্ঠাতা ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দলীয় রাজনৈতিক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। পরে তিনি জাতীয় পাটির কেন্দ্রিয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালে জাতীয় পাটি থেকে চাঁদপুর-৬ (ফরিদগঞ্জ) ও ঢাকা-১০ (রমনা) আসন থেকে মনোনয়ন পান।
কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ১৯৯০ পরবর্তী জাতীয় পার্টির দুঃসময়ে উত্তরবঙ্গে এরশাদ মুক্তি আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পাটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চীপ কর্ডিনেটর ছিলেন তিনি।
এদিকে বিএনপি নেতা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গলের ক’জন সমর্থক এ প্রতিনিধিকে জানান, ‘২০০৬ সালে রাজনৈতিক অঙ্গনের ভেতরের খবর ছিলো সেই সময় বিরোধী দল নির্বাচনে না আসলে অল্ট্রানেটিভ হিসাবে বিভিন্ন ছোট-ছোট দল যেমন- জাতীয় পাটি, জামায়াতে ইসলামী, জাসদ, বাসদ, মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পাটি, জাগপা এবং ইসলামী ফন্ট্র ও স্বতন্ত্রদের নিয়ে একটি বিরোধী দল গঠনের প্রক্রিয়া হয়েছিলো। সেখানে ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল বিরোধী দলের নেতা হিসাবে পার্লামেন্টে থাকবেন এমন একটি গুঞ্জন ছিলো।
পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে নির্বাচন বন্ধ হয়ে সূচনা হয় ওয়ান ইলেভেনের। গ্রেফতার হন দুই নেত্রী। পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে বিএনপির হয়ে দুই নেত্রীর মাইনাস টু ফর্মুলার বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিন তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব, রির্পোটাস ইউনিটি, ফটোজার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন, শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে প্রয়াত বিগ্রেডিয়ার হান্নান শাহ, বিচারপতি আব্দুর রউফ, সাবেক ভিসি মনিরুজ্জামান মিয়া, এমাজ উদ্দিন আহম্মেদ, শিল্পি সাহিত্যিক ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ওয়ান ইলেভেনের কুশিলবদের বিরুদ্ধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য আন্দোলন করেন।
বর্তমানে এখনো তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যে প্রেসক্লাব বেইস সেমিনার সিম্পোজিয়াম ভিত্তিক আন্দোলনে সরব রয়েছেন। এমন অবস্থায় পঞ্চাশর্ধ্ব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল দলীয় কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তারা দাবি করেন’।
এ বিষয়ে ইসমাইল হোসেন বেঙ্গলের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ আমি দেশ ও মানুষের জন্যে রাজনীতি করি। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার প্রশ্নে সর্বপরি দেশের আরাজকতা দূরীকরণে স্বৈরাচারী সরকারের অন্যায়, অত্যাচার, অভিচার রোধে সবসময় সোচ্চার ছিলাম। অতীতে আমি যেমন প্রতিবাদী ছিলাম, এখনও প্রতিবাদী আছি।’
বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কিনা এমন প্রশ্নের কৌশলী জবাবে তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে জাতীয়তাবাদের মূর্ত প্রতীক মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের সহধর্মীনি তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে আমাকে আপোষহীনভাবে যেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, আমি তা নিবো।
দল থেকে মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করবো। দেশনেত্রীর মুক্তির প্রশ্নে আমাকে যদি পার্লামেন্টে যেতে হয় জনগনের মেন্ডেট তখন অপরিহার্য হয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে আমি রাজনৈতিক যেকোন কৌশল অবলম্বন করতে দ্বিধাবোধ করবো না।’
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল রেডিও, টেলিভিশন ও পত্রিকাতে সাংবাদিকতা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের কৃতি সন্তান।
বিশেষ প্রতিবেদন : আতাউর রহমান সোহাগ