চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় ৯ বছরের শিশু মারজানকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সেলিম বেপারী (২২)কে আটক করা হয়েছে। চাঁদপুর ডিবি পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে গাজীপুর জেলার টঙ্গী এলাকা থেকে তাকে আটক করেছে।
চাঁদপুর ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭ সাল। বিকেল অনুমান সাড়ে ৫টা । স্থানীয় মুকশেদ হাওলাদারের ১ ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে স্থানীয় চর কোড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্রী মারজানকে ১০০ টাকা দিয়ে ঈশানবালা বাজারে পাঠায় তার মা।
বাজারে যাওয়ার পথে স্থানীয় চৌকিদার নান্নু মিয়া মারজানের মুখ চেপে ধরে জনৈক নাসির সর্দারের পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে সে’সহ ৪জন নরপশু জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে। মারজানের গোপনাঙ্গে রক্তের ধারা বয়ে যায়। জ্ঞান হারায় মারজান। জ্ঞান ফিরলে ঘটনা প্রকাশ হয়ে যাবে- এই আশঙ্কায় ৪ পাষন্ড নরপশু গলা টিপে হত্যা করে মারজানকে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত শুরু হলেও মেয়ে বাড়ি ফিরে না আসায় সবাই এদিক-সেদিক খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। এক পর্যায়ে মৃত মারজানের উলঙ্গ প্রাণহীন দেহ পাওয়া যায় হাইমচর থানার ঈশানবালা এলাকায় মারজানের বাড়ির অদূরে নদীর পাড়ে। ধর্ষক ও হত্যাকরীরা এলাকার সুবিধাবাদী মহলের যোগসাজসে সুকৌশলে মারজানকে জ্বীনে মেরেছে বলে প্রচার করে।মারজানের মৃতদেহ দাফন করা হয় স্থানীয় কবর স্থানে।
কিন্তু হতভাগী মারজনের মা-বাবার মন কিছুতেই সায় দেয় না যে, তাদের আচঁলের নিধি মারজানকে জ্বীনে মেরেছে। মনকে কোনভাবেই বুঝ দিতে না পেরে মারজানের বাবা ১০ জানুয়ারি, ২০১৮ সালে ঈশানবালার দ্বীন ইসলাম হাওলাদারের ছেলে জালাল মিয়া হাওলাদার (২১) , কাদির বেপারীর ছেলে সিদ্দীক (২২) ও শফিক উল্লাহ বেপারীর ছেলে সেলিম গংদের আসামী করে মামলা করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদপুর এর আদালতে।
আদালত হাইমচর থানার ওসিকে সরাসরি মামলা রজুর আদেশ দিলে হাইমচর থানায় মামলা (নং ৪, তারিখ ১৬/০১/১৮ইং ধারা -৩০২/৩৭৬/২০১/৩৪/১০৯ দঃবিঃ) রুজু হয়। তদন্তভার দেওয়া হয় হাইমচর থানার এসআই সুমন মিয়াকে।
এক বছরেও মামলাটির তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি না হওয়ায় পুলিশ সুপার মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করেন। আইও নিয়োগ করা হয় ডিবির এসআই শামীম আহম্মদকে। এসআই শামীম বদলী সূত্রে অন্যত্র গেলে ১০/০২/২০২০ইং এসআই রেজাউলকে মামলার তদন্ত ভার দেয়া হয়।
এক মাসের মাথায় এসআই রেজাউল মামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত এজাহার বহির্ভূত আসামী নান্নু চৌকিদারকে গ্রেফতার করেন শরীয়তপুর থেকে। জিজ্ঞাসাবাদে নান্নু সে নিজে’সহ এজাহার নামীয় ৩ আসামী মারজানকে নারকীয়ভাবে ধর্ষন ও হত্যার লোমহর্ষক বিবণে দেয় এবং আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।
ওসি রনজিত বড়ুয়া বলেন, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার) এর দিকনির্দেশনা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমানের সার্বিক সহযোগিতায় আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৭ জুন বেলা ২টার সময় গাজীপুর মেট্রোপলিটনের টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকায় এসআই রেজাউল করিমসহ সঙ্গীয় ফোর্স এজাহার নামীয় অন্যতম আসামী মোঃ সেলিম বেপারী (২২) , পিতা- শফিউল্লাহ বেপারী, সাং-সুরুজ সরকার কান্দি, চরবাও, ঈশানবালা , থানা- হাইমচর জেলা- চাঁদপুরকে গ্রেফতার করা হয়। সেলিমকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে প্রেরণ করা হবে।
প্রতিবেদক : আশিক বিন রহিম, ৭ জুন ২০২০