ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আযহা মহান আল্লাহর প্রতি অনুগত্যের অনুপম নিদর্শন। পবিত্র এই দিনে পশু কোরবানির মাধ্যমে মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনে সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং আনন্দ-উৎসবের মধ্যেদিয়ে পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আযহা। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ত্যাগের মহিমায় হিংসা-বিদ্বেষ, ভেদাভেদ ও বৈষম্য ভুলে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনার্থে ঈদ উদযাপন করেছে।
২২ অগাস্ট বুধবার ঈদের নামাজ শেষে মহান মালিকের সন্তুষ্টি অর্জনে সামর্থ্যবানরা পশু কোরবানি দিয়েছেন। তবে সামর্থ্যহীনদের মধ্যেও ঈদ-আনন্দের কমতি ছিলো না। তারা স্বাদ ও সামর্থ্যের মধ্যে থেকে দিনকে পালন করছে।
এবার ঈদের দিনে বৃষ্টির অপ্রত্যাশিত সংকেত থাকলে চাঁদপুরে খুব একটা বৃষ্টি হয়নি। কোথাও কোথাও নামাজ শেষে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। তাই অনুকূল পরিবেশ থাকায় সকল প্রকায় পূর্ব প্রস্তুতি অনুযায়ী জেলার কেন্দ্রীয় পৌর ঈদগাহ ময়দানসহ প্রায় সবগুলো ঈদগাহ মাঠেই ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি ঈদগাহ মাঠে ধনী-গরীব নির্বিশেষে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ এককাতাে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
সকল ৮টায় চাঁদপুর শহরের পৌর ঈদগাহ্ মাঠে জেলার প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এই ঈদ জামাতে ইমামতি করেন হাজী শরীয়ত উল্যাহর সপ্তম পুরুষ মাও. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান। নামাজ শেষে মোনাজাতে দেশ ও জাতির সার্বিক মঙ্গল ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়।
নামাজের পূর্বে জেলাবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান ও পৌর মেয়র আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজশ্ব) মো. জামাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানসহ জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও সমাজিক সংগঠনসসহ সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ।
জেলা শহর ছাড়া বিভিন্ন উপজেলার মধ্যে সবচে’ বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে হাজীগঞ্জ বড় মসজিদে। সেখানে দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও জেলার প্রটিতি উপজেলাতে অত্যান্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি ঈদ জামাতেই নামাজ ও মুনাজাত শেষে সবাই একে অপরের সাথে আলিঙ্গন করেছেন। এসময় সকল শত্রুতা ও বৈরিতা ভুলে এক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
চাঁদপুর পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় জেলার প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সকাল সোয়া ৮টায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের ইমামতি ও দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন ঐতিহাসিক পুরাণবাজার জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি ইব্রাহিম খলিল। পৌরসভা আয়োজনে ঈদ জামাতের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন প্যানেল মেয়র ছিদ্দিকুর রহমান ঢালী ও ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী মাঝি।
এছাড়াও চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়াম, গাছতলা দরবার শরীফ, পুরাণবাজারের পূর্ব শ্রীরামদী ৩নং বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ, জাফরাবাদ এমদাদিয়া মাদ্রাসা মাঠ, জাফরাবাদ হাফেজিয়া মাদ্রাসা মাঠ, রঘুনাথপুর হাজী এ করিম খান হাই স্কুল মাঠ, দক্ষিণের বহরিয়া মৌলভিবাড়ি ঈদগাহ মাঠ, ফরাক্কাবাদ, বালিয়া, লক্ষ্মীপুর, বহরিয়া বাজার, রামদাসদী, হরিণা ফেরীঘাট, হরিণাবাজার, রাজার হাট, চান্দ্রা বাজার, আখনের হাট, হরিপুর, মদীনা মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানের ঈদগাহ মাঠে ঈদুল আযহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে দুপুরে গড়িয়ে বিকেল হতেই জেলার একমাত্র পর্যটন এরিয়া শহরের ত্রিনদীর মোহনা, চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ সেতু, পুরাণবাজার-নতুন বাজার সেতু, ডাকাতিয়া নদীসহ নদী কেন্দ্রিক এলাকাগুলোতে ভ্রমণপিপাসুদের ঢল নামে। বিভিন্ন বয়সের মানুষ তাদের পরিবার-পরিজনদের সাথে নিয়ে ঈদ উদযাপনে মেতে উঠেন। এছাড়াও চাঁদপুর শহরতলীতে বেসরকারিভাবে গড়ে উঠা দু’টি পার্কেও দর্শনার্থীদের ভিড় ছিলো চোখে লাগার মতো।
জেলাজুড়ের ঈদের সময়কালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখতে পুলিশ প্রশাসনের কর্মতৎপরতা দেখা গেছে।
প্রতিবেদক:আশিক বিন রহিম