চাঁদপুর শহরের পুরাণ বাজার এমদাদিয়া মাদরাসা সংলগ্ন মেঘনা নদীর পাড়ে শনিবার (২ ডিসেম্বর) আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে প্রথমবারের মতো চাঁদপুরে তবলিগ জামায়াতের তিন দিনব্যাপি ইজতেমা।
ধর্মীয় উদ্দীপনা ও ভাবগাম্ভীর্য পূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে চাঁদপুরে তাবলীগ জামাতের ইজতেমার দ্বিতীয়দিন শুক্রবার (১ নভেম্বর) অতিবাহিত হয়েছে। জুমার নামাজে প্রায় কয়েক লক্ষাধিক মুসল্লির ‘আল্লাহ’ ধ্বনিতে মুখরিত হয় পুরানবাজার এমদাদিয়া মাদরাসা সংলগ্ন চাঁদপুর মেঘনা নদীরপাড়। এ অঞ্চলের বৃহত্তম জামাত অনুষ্ঠিত হয় বাদ জুমা।
ভোর থেকে ইজতেমায় অংশ নেওয়া মুসল্লিরা ছাড়াও শহরসহ আশপাশ উপজেলার হাজার হাজার মুসলমান এ জামাতে শরীক হন। দিনভর মুসলমানরা স্বাচ্ছন্দে তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিদের বয়ান শুনেন। মশগুল ছিলেন এবাদত বন্দেগীতে।
এদিকে দেশীয় মানুষের সাথে অংশ নিয়েছে, বিদেশী মুসল্লিরা। একই সঙ্গে কাতারে শরীক হয়ে নামাজ আদায় করার মধ্যমে বেশি সাওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে সকলের মধ্য দেখা গেছে ব্যাকুলতা। জুমার জামাতে ইমামতি করেন ঢাকার কাকরাইল মসজিদের খতীব হাফেজ মাওলানা যুবায়ের।
বিশ্ব ইজতিমার তত্ত্বাবধানে এ বছর প্রথমবারের মতো চাঁদপুরে জেলা পর্যায়ে তাবলীগ জামাতের এ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শহরের পুরানবাজার জাফরাবাদ মেঘনা নদীরপাড়ে তিনদিন ব্যাপি অনুষ্ঠিত ইজতিমা। শনিবার আখেরি মোনাজাতে প্রায় ৪ লক্ষাধিক মুসল্লিদের সমাগম থাকতে পারে বলে জানান আয়োজকরা।
আমন্ত্রিত বিদেশী অতিথিদের থাকার জন্যে আলাদা প্যান্ডেল রয়েছে। এছাড়া মুসল্লিদের গোসল, ওযুর ব্যবস্থা এবং ৮শ’ টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। টঙ্গী ইজতিমা মাঠের ন্যায় এ মাঠেও ৮টি উপজেলার ৮৯টি ইউনিয়ন থেকে আগত মুসল্লিদের জন্যে আলাদাভাবে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহসহ মুসল্লিদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
আগত মুসল্লিদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তাবলিগের নিজস্ব শতাধীন সাথীদের পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে র্যাব, পুলিশ, ডিবি ও ডিএসবির প্রায় ৪ শতাধীক নিরাপত্তা সদস্য ইজতেমা মাঠে।
ইজতেমা মাঠে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে পুরো মাঠের নিরাপত্তা তদারকি করবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে ইজতিমার প্রথম ও ২য় দিনে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবু নঈম পাটওয়ারী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওচমনা গণি পাটওয়ারী অন্যান্যরা ইজতিমা মাঠ পরিদর্শন করেন।
সেখানে তারা ১ম দিন আছরের নামাজ আদায় করেন এবং ২য় দিন জুম্মার নামাজ আদায় করে ইজতিমায় আগত দেশী-বিদেশি মেহমানদের খোঁজ-খবর নেন ও তাদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। পরে নিজেরা অন্যান্য মুসল্লিদের সাথে শরীক হয়ে ইমান ও আমলের বয়ান শোনেন।
অপরদিকে ২৮ নভেম্বর বুধবার সকাল থেকে ইজতিমা মাঠে চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলা, পৌরসভার, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, গ্রাম, পাড়া-মহল্লা থেকে দল বেঁধে মুসল্লিদের যে ঢল নেমেছে তা আজও অব্যাহত রয়েছে। নদী ও সড়ক পথে প্রতিদিনই হাজার হাজার মুসল্লি ইজতিমা মাঠে সরিক হচ্ছেন। এছড়াও জেলার বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকেও বহু মুসল্লি সরিক হয়েছেন।
এর থেকে বাদ যায়নি বিদেশী মুসল্লিরাও। দেশের বাইরে ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মরক্ক, যুক্তরাজ্য থেকেও প্রচুর ধর্মপ্রাণ বিদেশী মেহমান উপস্থিত হয়েছেন। এতে করে জাফরাবাদ এলাকার মেঘনা নদীর তীরে যেনো তিল ধারণের জায়াগা অবশিষ্ট থাকছে না। যে ইজতিমা মাঠ এবং মাঠের বাইরে যে যেখানে পারছেন- সেখানেই অবস্থান নিয়ে মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনে দুনিয়া ও আখেরাতের বয়ান শুনছেন।
এ পর্যন্ত আগত মুসল্লির মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তবে মহিউদ্দিন নামের একজন অভিভাকের অনুরোধে তার ছেলে শহরের আ. করিম পাটওরী বাড়ির জৈনক মরহুম বাহাউদ্দিন নয়নের জানাযা বাদ জোহর ইজতিমা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।
আগত মুসল্লিরা জানায়, আমরা মহান আল্লাহ্’র মেহনত করতে এখানে এসেছি। আমাদের কোনো প্রকার কষ্ট হচ্ছে না। সবাই আল্লাহ্ আল্লাহ্, লা-ইলাহা ইল্লাললাহ্ জিকিরে মধ্যে মসগুল।
ইজতিমার প্রধান সমন্বয়কারী মাওলানা আব্দুর রশীদ জানান, শনিবার (২ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্য আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি জানান কাকরাইল মারকাসের কোন মুরব্বী মোনাজাত পরিচালনা করবেন তা পরামর্শ করে ঠিক করা হবে।
প্রসঙ্গত, বিশ্ব ইজতিমার তত্ত্বাবধানে এই প্রথমবারের মতো চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার জাফরাবাদ এমদাদিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন মেঘনা নদী তীরে ৪০ একর জমিতে ইজতিমার প্যান্ডেল তৈরির করা হয়েছে। ইজতিমা মাঠে আমন্ত্রিত বিদেশি অতিথিসহ সকল মুসল্লিদের থাকার জন্যে আলাদা প্যান্ডেল ও আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৮ : ৪৫ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ