জলবায়ু ইস্যুতে ধনী দেশগুলোর ভূমিকাকে ‘দুঃখজনক’ হিসাবে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী দেশগুলো জোরালো বক্তব্য দিলেও পরিস্থিতির গুরুত্বের সঙ্গে তাদের কার্যক্রম সংগতিপূর্ণ নয়।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের (ইউএনজিএ) ফাঁকে শুক্রবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, তারা (ধনী দেশগুলো) কোনো কাজ করে না। তারা শুধু কথা বলে। অথচ তারাই এ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। এ ইস্যুতে তাদের এগিয়ে আসা উচিত। কিন্তু আমরা তাদের দিক থেকে সেই ধরনের কোনো সাড়া পাচ্ছি না। এটাই দুঃখজনক।
তিনি বলেন, ধনী দেশগুলো আরও ধনী হতে চায়। তারা অন্যদের নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়। তিনি বলেন, আমরা চাই তহবিলটি আরও বড় করা হোক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে আমরা উন্নত দেশগুলার কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি না। ধনী দেশগুলো ২০২৪ সাল পর্যন্ত শুধু ক্ষয়ক্ষতির ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য সম্মত হয়েছে।
শেখ হাসিনার বক্তব্যের সঙ্গে সংযোজন করে এএফপি মন্তব্য করেছে-জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে ঘন জনবসতিপূর্ণ ডেলটা ও নিম্নাঞ্চলীয় বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশ খুবই সামান্য পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করে।
প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করে টিকে থাকার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করতে ২০২০ সাল নাগাদ বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চাওয়া হয়।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার মতে, ওই বছর বেসরকারি মাধ্যমসহ ৮৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। নভেম্বরে মিসরে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনটি সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে, তা হলো ধনী দেশগুলো অভিযোজন ও প্রশমন ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির জন্যও অর্থ দিতে হবে কি না।
রোহিঙ্গা ইস্যু: সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতক্ষণ রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে আছে, আমরা মনে করি, এটি আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু ধৈর্য ক্ষীণ হয়ে আসছে।’ তিনি বলেন, স্থানীয় জনগণকে যথেষ্ট ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। আমি বলব না যে তারা ক্ষুব্ধ, তবে তারা অস্বস্তিবোধ করছে। ‘সব বোঝাই আমাদের ওপর এসে পড়ছে। এটাই সমস্যা’ উল্লেখ করেন
প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তাদের খোলা জায়গা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কেউ যদি তাদের নিতে চায়, তারা নিতে পারে।
এএফপির মন্তব্য-কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গা সংকট থেকে ধনী দেশগুলোর মনোযোগ সরে গেছে। বাংলাদেশ পশ্চিমের যে নিষ্ক্রিয়তা দেখছে তাতে কেবল জলবায়ুই একমাত্র ইস্যু নয়।
রোহিঙ্গা সংকট আরেকটি বড় সমস্যা। এতে বলা হয়, সহিংসতার কারণে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশকে বিশ্ব অভিনন্দন জানিয়েছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারি ও বর্তমানে চলা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে মনোযোগ সরে গেছে।