দ্রব্যমূল্য কমাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ দশ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে আসন্ন বাজেটে। নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের দাম কমিয়ে কীভাবে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া যায় সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে টিসিবির ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা, খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রি (ওএমএস) এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১৫ টাকা মূল্যে চাল বিক্রি কার্যক্রমে উপকারভোগী বাড়ানোর ঘোষণা আসবে নতুন বাজেটে। এর পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনে চলতি বাজেটে যেসব নির্দেশনা রয়েছে সেগুলো আগামী বাজেটে বহাল রাখা হবে। এজন্য অপেক্ষাকৃত অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নতুন বাজার অনুসন্ধানের পাশাপাশি নতুন নতুন পণ্য রপ্তানি বাড়াতে জোর দেয়া হয়েছে। বুধবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের রূপরেখা তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা ভালো আছে এ মর্মে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন তিনি।
বৈঠকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কৌশল নির্ধারণসহ আরও যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) বাস্তবায়ন হার বাড়াতে মনিটরিং জোরদার করা,কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়া, এজন্য হুন্ডি প্রতিরোধ করে বৈধপথে রেমিটেন্স আহরণ বাড়ানো, গ্রাম হবে শহর এই উদ্যোগ এগিয়ে নিতে গ্রামীণ উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া।
এছাড়া কর না বাড়িয়ে কর আদায়ের আওতা বাড়ানো এবং নিয়মিত করদাতাদের হয়রানি বন্ধ, সব ধরনের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে ভর্তুকি বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ জ্বালানি তেল ও গ্যাসে ভর্তুকি ব্যয় কমিয়ে আনা, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং এ লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাত এগিয়ে নেওয়া, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো চলমান বৈশ্বিক সংকট মাথায় রেখে সব ধরনের নিজস্ব উৎপাদন বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ ও ধীরে ধীরে নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট বাস্তবায়ন করা।
চলমান বৈশ্বিক সংকটের কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে সরকার ঋণ নিলেও ভবিষ্যতে ঋণ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট বাস্তবায়নের বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনায় রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের আয় বাড়াতে হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, কর না বাড়িয়ে কীভাবে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় অর্থমন্ত্রীর পাশাপাশি এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান সংস্থাটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
স্বল্পোন্নত বা এলডিসি থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে যাওয়ার পর ভবিষ্যতে রাজস্ব আদায়ের ওপর কি ধরনের চাপ আসতে পারে সে বিষয়টিও তুলে ধরেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তবে তিনি জানান, রাজস্ব আদায়ে সরকারের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা পূরণ করতে সক্ষম হবে এনবিআর। রাজস্ব আদায় বাড়াতে কর হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এনবিআরও মনে করে, ভ্যাট ফাঁকি রোধ এবং কর প্রদানে সক্ষম এরকম করদাতাদের করনেটে নিয়ে আসা সম্ভব হলে রাজস্ব আদায় কয়েকগুণ বাড়বে। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বাজেট বাস্তবায়নে বিদেশী ঋণ কিংবা অন্য উৎস থেকে টাকা ধার করার প্রয়োজন হবে না।
কয়েক মাস ধরে দেশে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তি। এজন্য সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কারণে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের আমদানি সহজীকরণের পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে বৈঠকে। আগামী বাজেটে সব ধরনের ভোগ্য ও নিত্যপণ্য আমদানিতে শুল্ককর ও ভ্যাট ছাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে এখনো কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কি নির্দেশনা দিবেন সেজন্য তার সঙ্গে বাজেট নিয়ে এনবিআরের পৃথক আরেকটি বৈঠক হবে।
এদিকে আগামী রবিবার গণভবনে বেলা ১১টায় এনবিআরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ওই বৈঠকে আগামী বাজেটে রাজস্ব আদায়ে সংস্থার পরিকল্পনা তুলে ধরবেন। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছে অর্থবিভাগ।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের অফিসে মহার্ঘ্যভাতা কিংবা নতুন পে-স্কেল নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করলেও নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করা হচ্ছে না। এছাড়া সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত নতুন কোনো পে- স্কেল বা মহার্ঘ্যভাতা দেয়া হচ্ছে না। তবে অন্য একটি সূত্র দাবি করেছে, পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর। রাজনৈতিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত এলে এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে সরকার।
এছাড়া সরকারি পর্যায়ে মহার্ঘ্যভাতা দেয়া হলে বেসরকারি খাতে এর কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সে বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। এ কারণে সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ্যভাতার বিষয়ে বাজেটে নির্দেশনা থাকবে না বলে জানা গেছে। আগামি ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেটের আকার হতে পারে ৭ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার মতো। তবে শেষ মুহূর্তে বাজেটের আকার কিছুটা কমতে বা বাড়তে পারে।
চাঁদপুর টাইমস
১২ মে ২০২৩
এজি