ফরিদগঞ্জ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবহ ফরিদগঞ্জ পাইকপাড়া উবির ইতিহাস

১৯৩৯-১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবহ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পাইকপাড়া ইউ.জি. উচ্চ বিদ্যালয়।

দুটি যুদ্ধেরই প্রশিক্ষন ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিলো এই বিদ্যালয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দু’শতাধিক নেপালী সৈন্য ব্রিটিশদের পক্ষ নিয়ে ৬ মাস এই বিদ্যালয়ের বর্তমান পুরাতন ভবনে ক্যাম্প করে অবস্থান করেছিলো।

অপরদিকে ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষন ক্যাম্প হিসাবে স্কুলটির ওই একই ভবন ব্যবহার করা হয়।
শত বছরের অধিক সময় ধরে ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তরাঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বিদ্যালয়টি। গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে দিচ্ছে শিক্ষার আলো। জমিদার বাবু গোবিন্দ চন্দ্র বসু ১৯১৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন । বর্তমানে বিদ্যালয়টির মোট সম্পত্তির পরিমান ৬ একর ৩৫ শতাংশ। এই সম্পত্তির অধিকাংশই দান করেন শিক্ষানুরাগী ওই ব্যক্তি।

বিদ্যালয়ের বিগত কয়েক বছরের এস এস সি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষন করে দেখা যায়, ২০১২ সালে ১৪ জন এ প্লাস সহ ৯৬.৯৪ শতাংশ, ২০১৩ সালে ৩টি এ প্লাসসহ ৯৯.০৫ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৮৫.৪৭, ২০১৫ সালে ৬৮.৩৩ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৮৭.৫০ শতাংশ ও ২০১৭ সালে ৬৯.৩৫ শতাংশ সফলতার সহীত উর্ত্তীণ হয়।

অপরদিকে জেএসসিতে ২০১২ সালে ৯৫.০৮ শতাংশ, ২০১৩ সালে ৯৪.৬২ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৮৮.১৯ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৮৯.৫৭ শতাংশ ও ২০১৬ সালে ৭৮.৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাসে করে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৬ একর ৩৫ শতাংশ সম্পত্তির মধ্যে নিষ্কন্টক সম্পত্তির পরিমান ৪ একর ১৫ শতক। সম্পত্তির অন্যান দাতারা হচ্ছেন গফুর মাস্টার, ও হেদায়েত উল্ল্যাহ নামে দু’শিক্ষানুরাগী। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকালে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রমের মাধ্যমে শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালে শুরু হয় নবম শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম।
দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা হয় পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও অসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক শেখ মো. আব্দুর রবের সাথে। তিনি নিজেও ছিলেন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সদস্য। মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক।

প্রবীণ এ শিক্ষক চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সময় আমি বয়সে ছোট ছিলাম। তখন বিদ্যালয়ের এই ভবনটিতে একটি ক্যাম্প তৈরি করেছিলো নেপালী সৈন্য বাহিনী। তারা গুরখা সৈন্য হিসাবে পরিচিত ছিলো।’

কতসংখ্যক সৈন্য ছিলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দু’শতাধিক সৈন্য ব্রিটিশদের পক্ষ নিয়ে এখানে অবস্থান করেছিলো।’

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্প সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ক্যাম্পের দায়িত্ব ছিলেন হাজীগঞ্জ উপজেলার অলিপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক পাঠান। এখান থেকেই পরিকল্পনা হতো যুদ্ধের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে।

বিদ্যালয়ের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা শেষে বিদ্যালয়ের অন্যান বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান আরো উন্নত হওয়া প্রয়োজন। বিদ্যালয় থেকে অনেকেই সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করলেও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে উল্লেখযোগ্য কিছুই করেনি।

স্থানীয়রা বলেন, ‘বিদ্যালয়ের যে বিশাল সম্পত্তি রয়েছে তার দিকে নজর পড়েছে প্রভাবশালীদের। দ্রুতগতিতে এ সম্পত্তি সুরক্ষায় সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রয়োজন শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন। বোর্ড পরীক্ষায় যাতে শিক্ষার্থীদের ফল বিপর্যয় না হয় তার দিকে বিশেষ নজর দেয়ার দাবি জানান তারা।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিরি সভাপতি আব্দুল মান্নান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সম্মলিত চেষ্টার মাধ্যমে ভালো ফলাফল অর্জন সম্ভব। সে ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সু-শিক্ষা প্রদানও ভালো ফলাফল অর্জনে আন্তরিক সহযোগিতা করা।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুুল মোতালেব চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘বিদ্যালয়ে সহ শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে স্কাউট, বির্তক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রতি বছরে বিশাল আকারে বর্ণাঢ্য একটি বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে খন্ডকালীনসহ ১৫ জন শিক্ষক রয়েছে। তবে একজন করে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও একজন কম্পিউটার শিক্ষক প্রয়োজন। এছাড়া খন্ডকালীনসহ ৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি রয়েছে।

তিনি আরো জানান, ‘বিদ্যালয়ের যে বিশাল সম্পদ রয়েছে তা সংরক্ষণ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ফাঁকি দেয়া রোধে জরুরী ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা প্রয়োজন। এছাড়া আধুনিক ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর পাঠদানের জন্য রয়েছে মাল্টি মিডিয়া শ্রেণিকক্ষ। তবে শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব, ফুলের বাগান স্থায়ীকরণ, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি।’

তবে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত টিউটরিয়াল ও শ্রেণি পরীক্ষার মূলায়ন করা হয়। শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল অর্জনে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিবেদক- আতাউর রহমান সোহাগ
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১: ৪০ পিএম, ১২ আগস্ট ২০১৭, শনিবার
ডিএইচ

Share