চাঁদপুর টাইমস ডট কম:
যৌনপল্লির অধিকাংশের বয়স ১৮ বছরের নীচে। এমনকি ১০ বছরের শিশুকেও যৌনব্যবসায় বাধ্য করা হচ্ছে। এসব শিশুকে হয় অপহরণ অথবা চাকরির কথা বলে এই পল্লিতে বিক্রি করা হয়। এই শিশুদের সঙ্গে গ্রুপ সেক্স করে মানুষ নামের একদল বিকৃত রুচির যৌন নিপীড়ক। ইয়াবা আর মদের ‘কিটি পার্টি’তে তাদের ওপর চলে যৌন নির্যাতন। মর্কিন টেলিভিশন চ্যানেলটি তাদের ভিডিও প্রতিবেদন প্রচার করে গত ফেব্রুয়ারিতে। আর তা ইউটিউবে আপ করার পর এখন এ নিয়ে চলছে তোলপাড়। এরইমধ্যে ইউটিউবে ১২ লাখেরও বেশি ভিডিওটি সাবসক্রাইব হয়েছে। আর তাতে শনিবার পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১ হাজার ১শ ৮জন মন্তব্য করেছেন। আর তাদের মন্তব্যে বাংলাদেশের দৌলতদিয়া যৌনপল্লির এই নির্মম ও ভয়াবহ চিত্রে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে এক শিশু যৌনকর্মী (১৪) জানান, কিভাবে তাকে জোর করে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। এখন যে ফিরে যেতে চাইলেও আর পারছে না। তার ফিরে যাওয়ার আর কোন সুযোগ নাই। আরো একজন শিশু যৌনকর্মী জানান, খদ্দেররা তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। কখনো কখনো ১০ থেকে ১২ জন নরপশু একসঙ্গে এসে এই যৌন নির্যাতন চালায়। তাদের করার কিছুই থাকে না। যৌনপল্লির সর্দারনী স্বীকার করেন, অল্প বয়স্ক কন্যা শিশুদের এনে ওষুধ খাইয়ে মোটা করা হয়। তাদের যৌন ব্যবসার উপযোগী করা হয়। আর এসব ওষুধ সেখানেই কিনতে পাওয়া যায়। (বিস্তারিত প্রতিবেদনের নিচে দেয়া ভিডিওতে পাবেন)
মায়ের অন্ধকার জীবনে অচেনা পুরুষের ঔরসে অপ্রত্যাশিতভাবেই দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে ওদের জন্ম। জন্মের পর থেকে নানা প্রতিকুলতার মাঝে প্রকৃতির নিয়মেই ওদের একটু একটু করে বেড়ে ওঠা।
যখন ওদের স্কুলে যাওয়ার বয়স, মা তার শত কষ্টের মধ্যেও ভর্তি করাতে যান স্কুলে। কিন্তু নিয়মের বেড়া-জালে আটকে যায় ওদের স্কুলের খাতায় নাম লিপিবদ্ধ করা। কারণ ওদের নেই কোনো পিতৃ পরিচয়।
এরকম পিতৃপরিচয়হীন ১৮টি শিশুর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজের সন্তান হিসেবে পরিচয় দান করেছেন শেখ রাজীব নামে এক মানবাধিকারকর্মী। রাজিব বেসরকারি সংস্থা পায়াক্ট বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রকল্পের সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার। সম্প্রতি রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার তাপতুন নাসরীন যৌনপল্লী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ তথ্য প্রকাশ করেন। সে সময় উপস্থিত সকলে তার এ মহানুভবতার জন্য ভূয়সী প্রসংসা করেন।
দেশের বৃহত্তম দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর যৌনকর্মীদের বিভিন্ন বয়সের সহস্রাধিক শিশু রয়েছে। এদেরকে শিক্ষিত করতে এখানে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা কাজ করছে। এতে যে গুটিকয়েক শিক্ষিত হচ্ছে তাদেরই বা গন্তব্য কোথায় তা কেউ জানে না। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শিক্ষা, বিয়েসহ প্রায় সব জায়গাতেই মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজের নামের পাশাপাশি বাবা ও মায়ের নামের দরকার হয়। এ ক্ষেত্রে যৌনকর্মীর সন্তানদের নির্দিষ্ট কোনো পিতৃপরিচয় নেই। এতে তারা সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি আইনি জটিলতায় ভুগছে।
আলাপকালে শেখ রাজীব বলেন, ‘এসব ফুটফুটে শিশুদের পৃথিবীতে আসার পেছনে তাদের কোনো হাত ছিল না। স্বাভাবিক অন্যান্য শিশুদের মত তাদেরও শিক্ষাসহ সকল অধিকার রয়েছে। কিন্তু কোনো অধিকারের ছিটেফোঁটাও ওরা পাচ্ছে না। ওদের জন্য বেশি কিছু করার সামর্থ্য আমার নেই। তাই সমাজ আমাকে যাই বলুক আমি তা নিয়ে ভাবি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘পিতার পরিচয় না থাকায় এ সকল শিশুরা যেন অধিকার বঞ্চিত না হয়। ইতিমধ্যে কমপক্ষে দশজন এ ধরনের মেয়েকে নিজে পিতার পরিচয় দিয়ে বিয়ে দিয়েছি। তারা ভালো আছে।’
পরনে থাকা তাদের উপহার দেওয়া প্যান্ট-শার্ট দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘আমিও তাদের খোঁজ-খবর নিই। এ বিষয়টি নিয়ে আমার পরিবারসহ অনেক বন্ধু-বান্ধবই বিদ্রুপ করে থাকেন। কিন্তু ওসব আমি গায়ে মাখতে গেলে চলবে কেনো?’
ভিডিওটি দেখুন-