ফরিদগঞ্জে দোকান লুট করেছে আওয়ামী লীগ, দায় চাপিয়েছে বিএনপির ওপর

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে বেশ কিছু দোকানপাটে লুটতরাজ হয়। অধিকাংশ স্থানে এর দায় দেয়া হয়েছে বিএনপিকে। ৫ আগস্ট গভীর রাতে উপজেলার গৃদাকিলিন্দিয়া বাজারে মেসার্স মুনিয়া ট্রেডার্সের বেশ কিছু মালামাল লুট হয়ে যায়। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন দোকানের মালিক মিজান। দীর্ঘ দুই মাস পর তিনি জানতে পারেন তার দোকানের মালামাল কারা লুট করেছে এবং কোথায় রেখেছে।

ঘটনার বিবরনে যানা যায়, উপজেলার ১৬নং রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের গৃদকালিন্দিয়া বাজারে স’মিল চৌরাস্তা এলাকায় মিজানের হার্ডওয়ারের দোকান। তার পাশের দোকান ইয়াসিন নকশা ঘর। যার মালিক ইয়াছিনুর রহমান। ইয়াছিনের বাবা মো. রফিক একজন মুক্তিযোদ্ধা। দুই দোকানীই সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ইয়াছিন নকশা ঘরের মিস্ত্রি মিজান, যার বাড়ি চট্টগ্রাম। মিজান আর ইয়াছিন মিলে মুনিয়া মিজানের দোকান লুট করে। লুট করা সেই মালামাল তারা ইয়াছিন নকশা ঘরেই রাখে। মিস্ত্রি মিজান ইয়াছিনের অজান্তে ঘটনাটি ভিডিও করে রাখে।

৬ আগস্ট মিস্ত্রি মিজান চট্টগ্রাম চলে যায়। কারণ ৬ আগস্ট থেকে ইয়াছিন দোকান বন্ধ রাখে অনির্দিষ্ট কালের জন্য। মিস্ত্রি মিজান চট্টগ্রাম গিয়ে ইয়াছিনের কাছে টাকা দাবী করে। ইয়াছিন টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মিস্ত্রি মিজান গোপনে ধারণ করা ভিডিও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী এবং মুনিয়া মিজানের কাছে পাঠিয়ে দেয়। মুনিয়া মিজান বিষয়টি সাবেক চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন খাঁনকে জানালে তিনি পাশের ব্যবসায়ী এবং সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে ইয়াছিন নকশা ঘরে তল্লাশি করে মুনিয়া মিজানের দোকানের মালামাল উদ্ধার করে।

মুনিয়া ট্রেডার্সের লুট হওয়ার পর আওয়ামী পরিবারে এবং সাধারণ মানুষের মাঝে গুঞ্জন ওঠে এই কাজটি বিএনপির লোকেরা করতে পারে। খোদ মিজানও এতোদিন তাই মনে করতেন। বিষয়টি নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গের মতো হয়ে গেলো। আওয়ামী লীগ নেতার দোকান থেকে মালামাল লুট করলো মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামী লীগের ছেলে। আসল ঘটনা প্রকাশের পর এলাকায় ছি ছি রব উঠে।

মালামাল লুট করা ইয়াছিন বলেন, মিজান ভাই ৫ আগস্ট বিকালে আমাকে মুঠো ফোনে কল দিয়ে বলেন তার দোকান পুঁড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তুই কিছু মালামাল তোর দোকানে সরিয়ে রাখ। তাই আমি এ কাজ করেছি।

মুনিয়া মিজান বলেন, আমি ইয়াছিনকে মাল সরানোর কথা বলিনি। এটা মিথ্যা কথা। মিস্ত্রি মিজান আমাকে ভিডিও না পাঠালে আমি বলতেই পারতাম না আমার পাশের দোকানদার এমন কাজ করেছে। আমি কল্পনাও করিনি সে এ কাজটি করবে!

রূপসা উত্তর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি মো. মাসুদ আলম বলেন, আওয়ামী লীগ দোকান লুট করে সেই দায় বিএনপির উপর চাপিয়েছে। অবশেষে সত্য বেরিয়ে এসেছে। এই ঘটনায় প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ কতটা নিকৃষ্ট একটি দল। আওয়ামী লীগ চোরের দল, লুটতরাজের দল।

রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন খাঁন বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমি জানতে পেরেছি মিজানের দোকান লুট হওয়া মালামাল পাশের দোকান ইয়াছিন নকশা ঘরে রয়েছে। আমি পাশের দোকনদারদের এবং সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে তল্লাশি করে মালামাল উদ্ধার করি। আমি এর অধিকতর তদন্ত করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ১১ অক্টোবর ২০২৪

Share