সম্পাদকীয়

দেশ মাছ-গোশতে স্বয়ংসম্পূর্ণতায় আমরা গর্বিত

বাংলাদেশ বিশ্বে একটি নদীমাতৃক ও কৃষিনির্ভর দেশ। ফলে প্রাণিজ সম্পদ ও কৃষিপণ্য আমাদের স্বনির্ভতার প্রতীক। এদেশের নদ-নদীতে প্রচুর মৎস্য সম্পদে ভরপুর। পাশাপাশি নদী বিধৌত ও নদীতীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে প্রচুর কৃষিপণ্য । কৃষির পাশাপাশি রয়েছে আমাদের গবাদি পশু,হাঁস-মুরগি,ছাগল,ভেড়া,মহিষ ও অন্যান্য প্রাণী ।
যা আমাদের জীবন ধারণের অন্যতম মাধ্যম। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে কৃষাণ-কৃষাণীরা গরু,ছাগল ,ভেড়া ও অন্যান্য প্রাণী প্রতিপালন করে থাকেন। এতে একদিকে তাদের আয় রোজগার বাড়ছে অন্যদিকে আমাদের আমিষের যোগান হচ্ছে । নদ-নদীর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের খ্যাত ইলিশ।

পৃথিবীর প্রায় ৭০ ভাগ ইলিশ আমাদের দেশের নদ-নদী ও সমুদ্র উপকূলীয় এরাকায় পাওয়া যাচ্ছ্। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ‘ মাছ ও গোশতে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ ।’ যা আমাদের গর্ব ও আনন্দের বিষয় ।

মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র ফেব্রæয়ারি মাসে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি এ সাফল্যের বিষয়টি উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেছেন,’ খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নিদের্শিকা অনুযায়ী একজন মানুষের দিনে অন্তত: ৬০ গ্রাম মাছ খাওয়া প্রয়োজন । আর একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ১১২০ গ্রাম মাংসের প্রয়োজন।’

তিনি আরো বলেছেন,’দেশে বর্তমান দৈনিক মাথাপিছু গোশতের প্রাপ্যতার ১২১ দশমিক ৭৪ গ্রাম ,যা চাহিদার তুলনায় বেশি । ফলে চাহিদা অনুযায়ী দেশের গোশত উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের মৎস্য খাত বর্তমানে জিডিপি ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপি ২৪ দশমিক ৪১ শতাংশ যোগান দিচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর বাংলাদেশ আজ মৎস্য ও গোশত উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ।

মৎস্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ সালে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ লাখ ৫৫ হাজার মে.টন । উৎপাদন হয়েছে ৪১ লাখ ৩৪ হাজার মে.টন। যা ২০০৮-০৯ অর্থ বছরের থেকে ৫৩ শতাংশ বেশি । আমাদের জনপ্রতি প্রতিদিন মাছের চাহিদা ৪৮ গ্রাম। বর্তমানে বেড়েছে ৫৫ গ্রাম। বছরে জনপ্রতি চাহিদা ২১ কেজি ৯০ গ্রাম । গ্রহণ করছে ১৯ কেজি ৩০ গ্রাম। ২০০৪ সালে মাছের উৎপাদন ৫৭ ভাগ ছিলো। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে আরো ১১ ভাগ বেড়েছে । ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৭১ লাখ ৩৫ হাজর মে.টন গোশত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৭১ লাখ ৩৫ হাজার মে.টন উৎপাদন হয়েছে ।

জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৬ সালের প্রতিবেন অনুযায়ী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ জলাশয় থেকে মৎস্য আহরণে বিশ্বে চতুর্থ এবং মাছ চাষে পঞ্চম স্থানে রয়েছে । কর্মসংস্থানেও মৎস্য সেক্টর অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১ কোটি ৮২ লাখ লোখ পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে মৎস্য সেক্টরে জীবিকা নির্বাহ করে চলছে।

সুতরাং মাছ ও গোশতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা বজায় রাখতে দেশের কৃষি ও মৎস্য খাতকে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আবশ্যক । পাশাপশি প্রাণী সম্পদ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও জরুরি ।

সম্পাদকীয়
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৪:০০ পিএম, ৬ এপ্রিল ২০১৮,শুক্রবাব
এজি

Share