জাতীয়

দেশে ১ কোটি ৩১ লাখ গরু-মহিষ-ছাগল কোরবানির উপযোগী

কোরবানি ঈদের বাকি আছে মাত্র তিন সপ্তাহ। তবে এরই মধ্যে গরু বিক্রি নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। দেশে এখন কোরবানির উপযোগী ১ কোটি ৩১ লাখ গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়া রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গরু ৪০ লাখ,মহিষ ১৫ লাখ ও ছাগল-ভেড়া ৭৬ লাখ ।

যা দেশের চাহিদা সম্পূর্ণভাবে পূরণ করতে সক্ষম বলে মনে করছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা,খামারি ও ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় দেশের জোগানস্বল্পতা রয়েছে উল্লেখ করে ব্যবসায়ীদের ভারত থেকে গরু আমদানির অনুমতি দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। এতে লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন দেশি খামারি ও মৌসুমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়,কোরবানি ঈদ ঘিরে প্রতিবছরই বাড়ছে ভারতীয় গরুর ওপর নির্ভরশীলতা। এত দিন অবৈধ পথে ভারতীয় গরু এলেও এরই মধ্যে বিজিবির পক্ষ থেকে বৈধ পথে গরু আনার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

বছরের পর বছর ভারতীয় গরুর ওপর এ নির্ভরশীলতা বিপাকে ফেলেছে বাংলাদেশকে। দেশের অভ্যন্তরে গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও অন্যদিকে ভারতীয় গরু আমদানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্টরা জানায়,কোরবানি ঈদ সামনে রেখে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বেপারিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পশুর দরদাম শুরু করছেন। কিনছেনও অনেকে। তবে গোখাদ্যের দাম বাড়ায় পশু লালন-পালনে এবার খরচ আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। সে কারণে গতবারের তুলনায় এবার পশুর দামও কিছুটা বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছেন খামারিরা। আর ব্যবসায়ীরা জানান,এত বছর দেশে গরুর চাহিদার ৭০% জোগান দিতেন দেশীয় খামারিরা,বাকি ৩০% আসত ভারত থেকে।

বর্তমানে দেশে গরুর খামারির সংখ্যা বাড়ছে। তা ছাড়া অনেকে কোরবানি ঈদ টার্গেট করে সীমিত পুঁজি খাটিয়ে লাভের আশায় দু’-একটি করে গরু কিনে লালন-পালন করেন।

সব মিলিয়ে দেশে এখন যে পরিমাণ পশু আছে,তা কোরবানির চাহিদা পূরণে সক্ষম বলে মনে করেন তারা। অন্যদিকে ভারতীয় গরুর মূল্য কম ও দেশে লালন-পালনের খরচ বৃদ্ধিতে দু’দেশের গরুর মধ্যে দামের তফাত তৈরি করবে বলেও মনে করেন তারা।

বেশ ক’জন খামারি জানান,আসন্ন ঈদ সামনে রেখে কেউ কেউ গরু মোটাতাজা করছেন তারা। পশুখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং বর্ষা মৌসুমে পানিতে মাঠ ডুবে যাওয়ায় গোখাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। এ জন্য ব্যয়ও বেড়েছে। তার পরও তারা লাভের আশায় কষ্ট করে পশু পালন করছেন। কিন্তু তাদের শঙ্কা ঈদ উপলক্ষে ভারত থেকে গরু আমদানি হলে লাভ তো দূরের কথা,লোকসানের মুখে পড়বেন তারা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে,দেশে গবাদিপশুর সংখ্যা প্রতিবছর ৫.৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। আগামী ২০২১ সাল নাগাদ জাতীয় উৎপাদন থেকে দেশের পুরো চাহিদা মেটাতে হলে উৎপাদন ন্যূনপক্ষে বছরে গড়ে শতকরা ৬ থেকে ৯ ভাগ হারে বাড়াতে হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে,বর্তমানে দেশে খামারের সংখ্যা সোয়া পাঁচ লাখ। দেশে এখন গরু আছে ২ কোটি ৩০ লাখ। এর একটি বড় অংশ গাভী ও কম বয়সী। জবাই উপযোগী গরু আছে ৪০ লাখ, ছাগল আছে ২ কোটি ৬০ লাখ, ভেড়া আছে ৩৪ লাখ ও মহিষ আছে ১৫ লাখ।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ড.মো.মেহেদী হাসান বলেন,‘দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদিত পশু দিয়েই কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো সম্ভব। তবে অন্যান্য দেশ থেকে অবৈধভাবে পশু আমদানি বন্ধ করলে দেশীয় খামারিরা লাভবান হবেন।

কোরবানির জন্য গরুর চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকে। চাহিদা অনুযায়ী দেশের খামারগুলোয় পর্যাপ্তসংখ্যক গরু আছে। তাই ভারত থেকে গরু আমদানির প্রয়োজন নেই বলেও মনে করেন।’

এদিকে সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে গরু আসতে বাধা নেই বলে চলতি মাসের শুরুতে জানান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। বিজিবি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,‘পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে ভারত থেকে গরু আসায় অসুবিধা হবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন,‘দেশে কোরবানি ঈদের সময় গরু আসা বন্ধ করে দিলে অসুবিধা হবে। কারণ এত সংখ্যক গরু উৎপাদন করা যাবে না। তাতে সবার অসুবিধা হবে।’(দৈনিক আমাদের সময়)

নিউজ ডেস্ক
আপডেট,বাংলাদেশ সময় ৩:৫০ পিএম,১১ আগস্ট ২০১৭,শুক্রবার
এজি

Share