আজ জাতীয় চা দিবস। দেশে প্রথমবারের মতো দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় চা বোর্ডের উদ্যোগে দিবসটি উদযাপনে আয়োজন করা হয়েছে।
বুধবার বাংলাদেশ চা বোর্ড আয়োজিত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এবারের চা দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, চা শিল্পের প্রসার’।
১৯৫৭ সালের ৪ জুন প্রথম বাঙালি হিসেবে তৎকালীন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে চা শিল্পে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর ৪ জুন চা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
চা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শুক্রবার সকালে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও চা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া চা উৎপাদনকারী অঞ্চল চট্টগ্রাম, সিলেট ও পঞ্চগড়ে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘সুদীর্ঘ ১৮০ বছর ধরে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে চা শিল্প গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। দেশের সাধারণ মানুষের সামাজিকতা, সংস্কৃতি ও দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে চা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন চা বোর্ডের প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান। তিনি ৪ জুন ১৯৫৭ থেকে ২৩ অক্টোবর ১৯৫৮ পর্যন্ত চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে চা শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত চা শিল্পের পুনর্বাসনে অসামান্য অবদান রাখেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে ৪ জুন জাতীয় চা দিবস পালনের উদ্যোগ বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।’
পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক গৃহীত নানাবিধ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে দেশে চায়ের উৎপাদন গত ১০ বছরে প্রায় ৬০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে বাংলাদেশে সর্বাধিক ৯৬ দশমিক ০৭ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। চা রফতানির পুরাতন ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে সরকার এর উৎপাদনের পাশাপাশি বিপণনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছে। ফলে, ২০২০ সালে ১৯টি দেশে চা রফতানি করে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হয়েছে। আমরা চা আইন ২০১৬ প্রণয়ন করেছি।’
অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বঙ্গবন্ধু চা শিল্পে অনেক অবদান রেখেছেন। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের পর চা-বাগান পুনর্বাসনে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনের নির্দেশনা, চা শিল্প ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে স্বাধীনতাযুদ্ধের পর মালিকানাবিহীন ও পরিত্যক্ত চা-বাগান পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নেন। চা গবেষণা স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউটে পরিণত করেন বঙ্গবন্ধু। শ্রমিকদের বিনামূল্যে বাসস্থান, শিক্ষা ও রেশন প্রাপ্তিও নিশ্চিত করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী পঞ্চগড় সফর করে চা চাষের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেখানে এখন চা চাষ করে দরিদ্র মানুষের জীবন বদলে গেছে।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দিন বলেন, দেশে চা পান বাড়ছে। এরপরও চা রফতানিতে প্রণোদনা দেয়াবিষয়ক একটি সুপারিশ অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে চা শিল্প অনেক এগিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ২১টি উচ্চফলনশীল জাতের ক্লোন অবমুক্ত করা হয়েছে। চা দিবসে শুক্রবার খরাসহিষ্ণু ও উন্নত ফলনের আরও দুটি ক্লোন অবমুক্ত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের ১৬৭টি বাগানের ৬১ হাজার ৬৭৮ হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে সমতল ভূমিতে চা চাষ বাড়ছে, যেখানে কৃষকরাই জমির মালিক। গেল বছর সেখানে ১ কোটি ৩ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে ২৫ হাজার নারী-পুরুষের। আগামী ২০২৫ সালে সাড়ে ১২ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আশা করেন তিনি।
অনলাইন ডেস্ক,৪ জুন ২০২১