জাতীয়

দেশে প্রতিবছর আর্সেনিকে মারা যায় ৪৩ হাজার মানুষ

দেশে প্রতিবছর আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে ৪৩ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। আর ঝুঁকিতে আছে দেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ। শুধু রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার অভাবে দিনে দিনে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে আর্সেনিক, সমস্যা সমাধানে গত ২০ বছরেও হয়নি কোনো অগ্রগতি।

বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এ তথ্য জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

‘স্বজনপ্রীতি এবং অবহেলা: বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের খাবার পানিতে আর্সেনিক প্রতিরোধে ব্যর্থ প্রচেষ্টা’ শিরোনামের প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, আর্সেনিক সমস্যা ছাড়াও আরো কয়েক কোটি মানুষ ক্যান্সার, ত্বকের ক্ষয়, হৃদরোগ ও ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছে বলেও জানানো হয়।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই সমস্যা সমাধানে গত কয়েক বছরে দেশ জুড়ে কয়েক লাখ নলকূপের অর্সেনিক মাত্রা পরীক্ষা করা হয়েছে। বসানো হয়েছে আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপ। তারপরও দেশের প্রধান স্বাস্থ্যগত সমস্যা হিসেবে আর্সেনিক রয়েই গেছে।

সরকারি হিসাব মতে, ২০০০-০৩ সালের মধ্যে গ্রামগুলোতে ৫ লাখের মত নলকূপে আর্সেনিক পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। তখন আর্সেনিক মুক্ত নলকুপগুলোকে সবুজ ও আর্সেনিকযুক্তগুলোকে লাল রং দেয়া হয়েছিল। ২০০৩ সালের আগে বাংলাদেশের ২ কোটির মত মানুষ আর্সেনিক মেশানো পানি পান করতো। কিন্তু সম্প্রতি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এখনো বাংলাদেশের ২ কোটি মানুষ অনিরাপদ বা আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে।

সংস্থার মতে কিছু রাজনৈতিক নেতা তাদের সমর্থকদের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করলেও গ্রামগুলোর অসংখ্য মানুষ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ওইসব প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে আর্সেনিক পরীক্ষা বা এটি তদারকি করার কার্যক্রমে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছে এইচআরডব্লিউ।

এ বিষয়ে বেশ গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোও। ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এইচআরডব্লিও’র গবেষক রিচার্ড পেয়ার্সহাউস মনে করেন, ‘গ্রামাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে আর্সেনিক মেশানো পানি পান থেকে বিরত রাখতে বাংলাদেশ সরকার কোনো মৌলিক ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি। যদিও সরকার এমন ভাব করছে যেন তারা এই সঙ্কটের সিংহভাগই সমাধান করে ফেলেছেন। কিন্তু এই সমস্যার সমাধানে সরকার যদি তৎপর না হয় এবং আন্তর্জাতিক দাতারা যদি এতে সহায়তা করতে ব্যর্থ হয় তবে দেশটির লাখ লাখ মানুষ আর্সেনিক সংক্রান্ত রোগে মারা যাবে।’

নব্বই দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশ ও ভারতের আর্সেনিক সমস্যাটি প্রথম নজরে আসে। ১৯৯৫ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রথমবারের মত উঠে এসেছিল এই ইস্যুটি। এর সমাধানে ১৯৯৯ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছে বাংলাদেশ সরকার, এনজিও ও আন্তর্জাতিক দাতা দেশগুলো। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ১৩ হাজার নলকূপ বসানোর জন্য ছয় বছরে (২০০৪ থেকে ২০১০) মোটা অঙ্কের তহবিল দিয়েছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক।

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া ব্যাপক আর্সেনিক সঙ্কট মোকাবেলা করছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, হাজার হাজার বছর আগে হিমালয়ের আর্সেনিক সমৃদ্ধ শিলাগুলো গলে প্রাকৃতিক রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় নিম্নাঞ্চল সঞ্চিত হয়েছিল। (বাংলামেইল)

: আপডেট ৩:৪৬ পিএম, ৬ মার্চ ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ

Share