দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ কি বেড়েছে নাকি কমেছে? করোনার পিক টাইম কি পেরিয়ে এসেছি? আগের তুলনায় ল্যাবরেটরিতে কম সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা হলেও শনাক্তের হার বেশি কেন? এমন নানা প্রশ্ন এখন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে। রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, আগের তুলনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরও বেড়েছে।
গত সপ্তাহেও নমুনা সংগ্রহ ও অধিক সংখ্যক পরীক্ষা করা হলেও শনাক্তের হার ২২ থেকে ২৩শতাংশ ছিল। কিন্তু গতকাল শনাক্তের হার ২৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ফলে শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা কমলেও সংক্রমণ কমেছে তা বলার সুযোগ নেই। এজন্য সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে ধরে নিয়েই প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম আরও জোরদার করার পরামর্শ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
গত ৬ জুলাই থেকে রোববার ১২ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি আরটি পিসিআর ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে তিন হাজার ২০১ জন, তিন হাজার ২৭ জন, তিন হাজার ৪৮৯ জন, তিন হাজার ২০১ জন, তিন হাজার ৩৬০ জন, দুই হাজার ৯২৯, দুই হাজার ৬৮৬ এবং দুই হাজার ৬৬৬ জন। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম হলেও পরীক্ষাকৃত নমুনার শনাক্তের হার আগের তুলনায় অনেকাংশে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কম হলেও শনাক্তের সংখ্যা বিবেচনায় সংক্রমণের হার বেশি। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে শনাক্তের হার ২২ থেকে ২৩ শতাংশ থাকলেও এ সপ্তাহে শনাক্তের হার ২৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
কী কারণে শনাক্ত বেশি হচ্ছে জানতে চাইলে এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো একক কারণে নয়; একাধিক কারণে শনাক্ত বেশি হচ্ছে। আগে সামান্য উপসর্গ নিয়েও মানুষ পরীক্ষার জন্য ছুটে যেত। এখন প্রচার-প্রচারণার কারণে অনেকেই পরীক্ষা করতে না এসে চিকিৎসকের পরামর্শে ঘরে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষার ফি আরোপ করায় অনেকেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। এ কারণে নমুনা পরীক্ষা কম হচ্ছে। শুধুমাত্র যারা উপসর্গ দেখে নিশ্চিত আক্রান্ত বলে নিজেকে মনে করছেন তারা পরীক্ষা করানোর ফলে শনাক্তের হার বেশি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগের তুলনায় অপ্রয়োজনীয় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমে গেছে। তাই নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমেছে। পরীক্ষার ফি ধার্য করার পরও অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন সন্দেহে পরীক্ষা করাতে আসছেন বলে শনাক্তের হার বেশি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। গতকাল ১২ জুলাই পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে মোট ৯ লাখ ৪০ হাজার ৫২৪টি নমুনা পরীক্ষায় করোনায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৫ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৩৫২ জনের।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও পাঁচ হাজার ৫৮০ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৬১৪ জনে।
ঢাকা ব্যুরো চীফ ,১৩ জুলাই ২০২০