দেশে চালের উৎপাদন বাড়তে যাচ্ছে

এক বছরে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হারে চালের উৎপাদন বাড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশে। বিদায়ি বছরের (২০২২-২৩) চেয়ে নতুন বছরে (২০২৩-২৪) উৎপাদন বাড়তে পারে ১.৮ শতাংশ। মোট চালের উৎপাদনে চীন ও ভারতের পর তৃতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ১৫ জুন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) থেকে প্রকাশ করা গ্লোবাল ফুড আউটলুক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উৎপাদনের পরিমাণ পূর্বাভাসের তুলনায় কম হওয়ায় বিশ্বের অন্যতম চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ও পাকিস্তান এ বছর রপ্তানি কমাতে বাধ্য হয়েছে। ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডকেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম রপ্তানি করতে হবে। ভারত গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ৪০ লাখ টন চাল কম রপ্তানি করবে।

এমন পরিস্থিতিতে ১৬ অক্টোবর পালিত হচ্ছে বিশ্ব খাদ্য দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ওয়াটার ইজ লাইফ, ওয়াটার ইজ ফুড,লিভ নো ওয়ান বিহাইন্ড’।

গ্লোবাল ফুড আউটলুক প্রতিবেদনের তথ্য মতে,চীন চাল উৎপাদনে এখনো শীর্ষে রয়েছে। গত বছর দেশটিতে উৎপাদিত হয়েছে ১৪ কোটি ২৮ লাখ টন। আগামী বছরে (২০২৩-২৪) উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ১৪ কোটি ৩৪ লাখ টন।

উৎপাদন বৃদ্ধি হতে পারে ০.৪ শতাংশ। এরপর রয়েছে ভারত। গত বছর দেশটিতে উৎপাদিত হয়েছে ১৩ কোটি আট লাখ টন। আগামী বছরে উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ১৩ কোটি ১০ লাখ টন। উৎপাদন বৃদ্ধি হতে পারে ০.১ শতাংশ।

এর পরই রয়েছে বাংলাদেশ। বিদায়ি বছরে দেশটির উৎপাদন তিন কোটি ৮৩ লাখ টন। আগামি বছরে উৎপাদন দাঁড়াতে পারে তিন কোটি ৮৯ লাখ টনে। উৎপাদন বৃদ্ধি হতে পারে ১.৮ শতাংশ। একই সময়ে ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে উৎপাদন বাড়তে পারে ১ % । ভিয়েতনামে যা হতে পারে ০.৩ শতাংশ।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বাংলাদেশে গত অর্থবছরে প্রায় চার কোটি টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে বোরোতে ২ কোটি ১০ লাখ টন। এর মধ্যে মোটা চাল প্রায় ৬০ লাখ টন। আর সরু ও মাঝারি চালের পরিমাণ দেড় কোটি টন। ধারাবাহিকভাবে মাঝারি চালের উৎপাদন বাড়ছে। গত এক যুগে দেশের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত ধানের নতুন জাত থেকে বেশির ভাগই মাঝারি মানের চাল আসছে। বিশেষ করে বোরোতে দেশে বর্তমানে ৫০ জাতের ধানের চাষ হয়। এর মধ্যে মাঝারি জাতের বিআর-২৮ ও ব্রি-২৯ থেকে আসে ৪০ % চাল।

দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টিতে এখনো পিছিয়ে। প্রতি ১০টি পরিবারের মাত্র একটিতে পুষ্টির নিরাপত্তা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ জরিপে এ তথ্য প্রকাশিত হয়। তবে পুষ্টিতে অগ্রগতির প্রত্যাশা রয়েছে।

জাতীয় পুষ্টি সেবার ডেপুটি প্রগ্রাম ম্যানেজার ডা.সুপ্তা চৌধুরী জানান,দেশের পুষ্টিসংকটের মূল কারণ তিনটি। প্রথমত,করোনা পরিস্থিতির প্রভাব,দ্বিতীয়ত,রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি।

সুপ্তা চৌধুরী বলেন,‘পুষ্টির ক্ষেত্রে আমাদের কিছু অগ্রগতিও রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে খর্বকায় ও কম ওজনের শিশুর হার কমিয়ে আনা।’

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবারের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পুষ্টি সেবা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আমাদের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। কিন্তু পুষ্টিতে অনেকটা পিছিয়ে। এটি নিয়ে কাজ করছি। আশা করি, সামনে আরো অগ্রগতি আসবে।’

ওই কর্মকর্তা বলেন,‘আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাদ্যের ওপর জোর দেয়া। সেই লক্ষ্যে আমাদের ২০২৪ থেকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত কর্মসূচি নেয়া হবে।’

জাতীয় পুষ্টি সেবা ইনস্টিটিউটের লাইন ডিরেক্টর ডা.মিজানুর রহমান বলেন,‘আমরা একসময় ক্ষুধার্ত বাংলাদেশ ছিলাম। সেখান থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে। একসময় মানুষ তিন বেলা খাওয়ার চিন্তা করত। এখন আর তা করতে হয় না।’

১৭ অক্টৈাবর ২০২৩
এজি

Share