♦ বিশ্বের মধ্যে ৬০ শতাংশ উৎপাদিত
♦ বৈদেশিক আয় ৩০০ কোটি টাকা
♦ জিডিপিতে অবদান ১.১৫ শতাংশ
ইলিশ মাছে বাংলাদেশে বিপ্লব হয়েছে। দেশজ মাছ উৎপাদনে (জিডিপি) ইলিশের অবদান ১ দশমিক ১৫ শতাংশ। দেশে মোট মাছের ১২ শতাংশই ইলিশ। এর অর্থমূল্য আনুমানিক সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। আর ইলিশ রপ্তানির মাধ্যমে আসে ১৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা।
ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ইলিশের ৬০ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। যেখানে ভারতে উৎপাদন হয় ২০ শতাংশ, মিয়ানমারে ১৫ শতাংশ এবং আরব সাগর, প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোতে বাকি ৫ শতাংশ। মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, প্রতিবছরই বাড়ছে ইলিশের উৎপাদন। মাত্র দেড় দশকের ব্যবধানে এ উৎপাদন ছাড়িয়ে গেছে ২ লাখ টনের ঘর।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৮৬-৮৭ সালে দেশে ইলিশ উৎপাদন হতো ১ লাখ ৯৫ হাজার টন। ২০০২-০৩ অর্থবছরে ১ লাখ ৯১ হাজার টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার টনে। বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর আগে দেশের ২১টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত।
বর্তমানে ১২৫টি উপজেলার নদ-নদীতে এই মাছ পাওয়া যাচ্ছে। পদ্মার শাখা নদী মহানন্দা থেকে শুরু করে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেদির হাওরেও এ বছর ইলিশ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮১ লাখ ৮৪ হাজার ইউএস ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪২ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি। আর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় তা ২৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে এই খাতের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
মত্স্য অধিদফতরের পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দফতরের উপ-পরিচালক ছালেহ আহমেদ বলেন, ইলিশ মাছে সাফল্য বাংলাদেশের অর্জন। আমরা এ মাছের সমস্যা-সম্ভাবনা চিহ্নিত করেছি। এ ছাড়া মত্স্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের ধারা টিকিয়ে রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ইলিশ মাছ চাষে বাংলাদেশের বিপ্লব হয়েছে।
গত তিন দশকে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ২৫ গুণ। এ ছাড়াও বাংলাদেশের পরিবেশ মিঠা পানির মাছ চাষের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রতিবেদনে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ রয়েছে চতুর্থ স্থানে। উৎপাদিত মাছের ৭৫ শতাংশই এখন বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করছেন মাছ চাষিরা।
বর্তমান সরকার ২০১৯ সালের মধ্যে দেশকে মাছ চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে বর্তমান ৩৮ লাখ টন থেকে বাড়িয়ে ৪২ লাখ টন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্যে মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও মত্স্য অধিদফতর যৌথভাবে কাজ করছে।