শীর্ষ সংবাদ

চাঁদপুরসহ দেশের ১৩ নদীবন্দরে বসছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার

অবশেষে চাঁদপুরসহ দেশের পূর্ণাঙ্গ ও পুরাতন নদীবন্দরের ১৩টিতে বসানো হচ্ছে প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। বর্তমানে ৮টি নদীবন্দরে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পর্যবেক্ষণাগার রয়েছে।

একমাত্র নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর ছাড়া বাকি ১৩টি পূর্ণাঙ্গ নদীবন্দরে সম্প্রতি প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

জানা গেছে, এসব নদীবন্দরে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার না থাকায় নৌবন্দরগুলোতে চলাচলরত নৌযানসহ স্থানীয় অধিবাসী ও জেলেদের কালবৈশাখী, টর্নেডো, বজ্রপাতসহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সঠিক ও লিড-টাইম পূর্বাভাস প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে বিভিন্ন নৌযান এবং অনেক যাত্রীর প্রাণহানি ও মালামালের ক্ষতি হচ্ছে। তাই দুর্ঘটনারোধে সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।

জানা গেছে, এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৩টি পূর্ণাঙ্গ নদীবন্দরে পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্রে ও ডরমেটরি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজসহ পূর্বাভাস কেন্দ্রগুলোকে ঢাকা ঝড়সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং চালু করা হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘বাংলাদেশের ১৩টি নদীবন্দরে প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শক্তিশালীকরণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এই প্রকল্প ব্যয়ের পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশের যে ১৪টি পুরাতন ও পূর্ণাঙ্গ নৌবন্দরে আবহাওয়া অধিদফতরের পর্যবেক্ষণাগার নেই সেগুলো হচ্ছে, নরসিংদী সদর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা, লক্ষীপুরের রামগতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, চাঁদপুরের চাঁদপুর সদর, বরিশাল সদর, হিজলা, পিরোজপুরের কাউখালী, পটুয়াখালী সদর, মনপুরা, খুলনার কয়রা ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী।

এর পরিপ্রেক্ষিতে এসব নদীবন্দরের মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ১৩টি বন্দরে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতিসহ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তবে প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ সম্ভব না হওয়ায় একমাত্র নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর ছাড়া ‘১৩টি নদীবন্দরে প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মূল প্রকল্পটি গত ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছিল। প্রয়োজনীয বরাদ্দসহ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরকে অন্তর্ভুক্ত করে ডিপিপি পুনর্গঠন করতে হবে এই শর্তে একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ৫ হাজার ৩৯৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ডিপিপি পুনর্গঠন করে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে মূল প্রকল্পের অনুমোদন আদেশ জারি করা হয়।

সূত্র জানায়, বাস্তবায়ন পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণে ব্যয় বৃদ্ধি ও কতিপয় বিষয় সমন্বয়ের কারণে প্রকল্প ব্যয় ৮০৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল এক বছর বাড়িয়ে মোট ৬২ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি প্রথম বার সংশোধন করে।

পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণে দেরি এবং সরকারের সর্বশেষ সার্কুলার অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় বাড়ানো এবং অন্যান্য কতিপয় কাজের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে বাস্তবায়ন মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি দ্বিতীয় বার সংশোধন প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপির ওপর চলতি ২০১৮ সালের ২৭ মে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পিইসি সবার শর্ত প্রতিপালন করে পুনর্গঠিত আরডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। পুনর্গঠিত প্রস্তাবিত দ্তিীয় সংশোধিত ডিপিপির মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকাল প্রস্তাব করা হয় ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নৌপথে চলাচলকারী নৌযানগুলোকে কালবৈশাখী, ঘূর্ণিঝড়, বজ্রঝড় ও টর্নেডো সম্পর্কে সঠিক ও আগাম পূর্বাভাস প্রদানের মাধ্যমে নৌ-দুর্ঘটনারোধ করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে নৌযানগুলোতে যাত্রীদের প্রাণহানি এবং মালামালের ক্ষয়ক্ষতি কমবে। নদীবন্দর এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণ, জেলেদের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া যাবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়ার যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে নদীবন্দর এবং নৌপথে আবহাওয়ার নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস দেওয়ার মাধ্যমে আবহাওয়া অধিদফতরের সক্ষমতা বাড়বে।’

বার্তা কক্ষ

Share