আজ ৮ ডিসেম্বর দেশের প্রথম নারী শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপির জন্মদিন। ১৯৬৫ সালের এ দিনে চাঁদপুর সদর উপজেলায় ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ এবং শিক্ষিকা রহিমা ওয়াদুদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রথম নারী সাবেক এ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মা রহিমা ওয়াদুদও ছিলেন একজন মানুষ গড়ার কারিগর। জ্ঞানের আলো বিলিয়েছেন দীর্ঘসময়। সেই শিক্ষিকার মেয়েই আজ দেশের প্রথম নারী শিক্ষামন্ত্রী।
তাঁর জন্মদিনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক কর্মী, সুধীজন, সাংবাদিকসহ অনেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দেশের প্রথম নারী শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর পরই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস সংস্কৃতিকে ‘হিমঘরে’ পাঠিয়েছেন। অবিশ্বাস্য এ ‘কৃতিত্ব’ দিয়েছেন সবাইকে।
মন্ত্রী শিক্ষাখাত পরিচালনায় শিক্ষা প্রশাসন আরো কার্যকর করা, কোচিং বাণিজ্যের দৌরাত্ম বন্ধ ও যুগোপযোগী কারিকুলাম প্রণয়নের জন্য কাজ করতে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্দোলনরত শিক্ষকদের দূয়ারে গিয়ে মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি নিজেও শিক্ষকের সন্তান। আমার মা দীর্ঘ ৪০ বছর শিক্ষকতা করেছেন। আমরা জানি কোন পেশার মানুষ কেমন আছে। যেসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি তাদের সমস্যা সম্পর্কেও অবগত আছি।
প্রশ্নফাঁসের মতো গলার কাঁটা বন্ধ করে মন্ত্রী সরকারের শিক্ষাখাতে অর্জনকে আবারো দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে সব মহলেই প্রশংসিত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম মেয়াদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ও সফলতার সঙ্গে সামলেছেন। সে দায়িত্ব নিয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
মেঘনা পাড়ের এ কন্যার বাবা ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর। আপোসহীন এ রাজনীতিক ১৯৪৯ সালে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে বঙ্গবন্ধু’র সঙ্গেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। সেই পরিবার থেকে উঠে আসা দীপু মনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মুক্ত বিশ্বকোষে এক নজরে ডা. দীপু মনি
ডা. দীপু মনি বাংলাদেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগের জয়লাভের পর বাংলাদেশে প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি নিয়োগ পান।
সামাজিক উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাঁর অনন্য অবদানের জন্য তিনি মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে ভূষিত হন।২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে তিনি পুনরায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ৬ জানুয়ারি ২০১৯ এ তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের অধীনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
দীপু মনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগের প্রথম কাউন্সিল-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াদুদের কন্যা। তিনি হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে এমপিএইচ ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমঝোতা ও দ্বন্দ্ব নিরসনের ওপর একটি কোর্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী ।
দীপু মনি চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়- প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তিনি কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রেরিয়াল অ্যাকশন গ্রুপের প্রথম নারী এবং দক্ষিণ এশীয় চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন। এছাড়া তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমুদ্র জয় করে। এতে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার এবং ভারতের সাথে প্রায় চার দশকের সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত অমীমাংসিত বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এ্যাডভোকেট তৌফীক নাওয়াজ দীপু মনির স্বামী। তিনি আন্তর্জাতিক একটি ল-ফার্মের প্রধান। তিনি উপমহাদেশের দু’ হাজার বছরের ঐতিহ্য মন্ডিত ধ্রুপদী সঙ্গীতের উৎস হিসেবে পরিচিত ‘আলাপ’ এর একজন শিল্পী। তাঁদের রয়েছে দু সন্তান। পুত্র তওকীর রাশাদ নাওয়াজ ও কন্যা তানি দীপাভলী নাওয়াজ।
গণতন্ত্র ও বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী এবং আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মরহুম এম.এ. ওয়াদুদের কন্যা তিনি। । তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট, ৮ ডিসেম্বর ২০২২
