দেশের পরিবেশ রক্ষায় গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্যোগ

ভালো নেই পৃথিবী। ভালো নেই বিশ্ববাসী। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আর চাহিদা মেটানোর আকাঙ্ক্ষায় পরিবেশের ওপর চরম অবহেলায় আমরা যে স্বার্থপর পৃথিবী গড়ে তুলেছি, সেখানে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে জলবায়ুর প্রভাবজনিত নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। খরা-বন্যা,জলোচ্ছ্বাস,তীব্র দাবদাহ,অতিবৃষ্টি,দাবানল,বজ্রপাতসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেড়েই চলেছে বিশ্বব্যাপি প্রাণহানি আর ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ।

জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্যানুসারে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গত ৫০ বছরে অন্তত ২০ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে যার ৯০% উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ঘটেছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের নির্দোষ স্বীকার। বৈশ্বিক উষ্ণায়নে অবদান নগণ্য (বৈশ্বিক নির্গমনের ০.৪৭% এর কম) থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের অবকাঠামো উন্নয়ন,কৃষিশিল্পসহ সার্বিক অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি সমুদ্র স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে ৩০ বছরে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্র পৃষ্ঠের গড় উচ্চতা প্রতিবছর ৩.৮-৫.৮ মিমি বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে সমুদ্র স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে এই শতাব্দীর মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় ১২.৩৪%-১৭.৯৫% উপকূলীয় অঞ্চল সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। অনুসন্ধানে আরও দেখা যায় যে ৫.৮%-৯.১% ধান উৎপাদন হ্রাসের জন্য শুধু সমুদ্র স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি দায়ী হবে।

পরিবেশবিদদের মতে, প্রকৃতির ওপর মানুষের বিরূপ আচরণ বন্ধ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে জরুরিভাবে কার্যকর কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সিএফসি নির্গত হয়- এমন যন্ত্রপাতির ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে,সৌরশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির সন্ধান করতে হবে। বনভূমি ধ্বংস বন্ধ করে বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন বাড়াতে হবে।

দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে পাঁচ দশক ধরে সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায়ও নিয়েছে নানাবিধ উদ্যোগ। নোবেল বিজয়ী এ প্রতিষ্ঠানটির দারিদ্র্য বিমোচনের ১৮ সিদ্ধান্তের অন্যতম একটি সিদ্ধান্ত হচ্ছে চারা রোপণের মৌসুমে পরিবেশ রক্ষা এবং নিজস্ব সম্পদ তৈরিতে যতটা সম্ভব চারা রোপণ করা।

এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ২০২০ সালের জুন মাস থেকে গ্রামীণ ব্যাংক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু করে এবং ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.একেএম সাইফুল মজিদের নেতৃত্বে গ্রামীণ ব্যাংক সর্বপ্রথম দেশব্যাপি ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করে।

 

একই বছর শেখ রাসেল দিবসে ৯৪ লাখ গাছের চারা লাগানো হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে ৭ কোটি ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪ শ ৪১ টি ফলদ,বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। ২০২১-২০২২ সালে গ্রামীণ ব্যাংক দেশজুড়ে ১৮ কোটি ৮৭ লাখ ১৮ হাজার ৬৯টি গাছের চারা রোপণ করেছে। চলতি বছর দেশব্যাপি ২০ কোটি গাছের চারা লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে গ্রামীণ ব্যাংক। ২০২৩ এর ২০ জুন প্রধান কার্যালয় চত্বরে চারা রোপণের মাধ্যমে এ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্যোগে সারা দেশে ৩৪.৭১ কোটি গাছের চারা লাগানো হয়।

জাতীয় দিবসগুলোয় (যেমন: বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস,শেখ রাসেল দিবস প্রভৃতি) বিভিন্ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংক বরাবরই অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিকে। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা,এরিয়া ও জোনাল অফিস এবং সদস্যদের বাড়ির আঙিনায় বৃক্ষরোপণের এ উদ্যোগ চলমান রাখা হয়েছে পুরো বছরব্যাপি ।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও পরিবেশ রক্ষায় গ্রামীণ ব্যাংকের এক কোটিরও বেশি ঋণগ্রহীতাদের নিয়ে বৃক্ষরোপণের এই কর্মসূচি সামাজিক বনায়নের প্রতি আগ্রহের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি করছে জনসচেতনতা। গ্রামীণ ব্যাংক আশা করে, বৃক্ষরোপণের এ কর্মসূচি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির সম্ভাবনা কমিয়ে,ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উপহার দেবে সবুজের মধ্যে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়ার নতুন এক পৃথিবী। সূত্র : দৈনিক বাংলা ,১ অক্টোবর ‘ ২৩

লেখক:আঞ্জ আরা বেগম ,মিডিয়া প্রধান,গ্রামীণ ব্যাংক
১ অক্টোবর,২০২৩ চাঁদপুর টাইমস ,
এজি

Share