Tuesday, 02 June, 2015 10:31:53 PM
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :
উদ্ভাবনী শক্তি ও ধারণা এবং দেশের কিভাবে উন্নয়ন হবে, এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কাজ করার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগে বিসিএস প্রশাসন একাডেমি আয়োজিত ৯২তম ও ৯৩তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কোন এলাকার উন্নয়ন নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ওপর। রুটিন কাজ করাই যথেষ্ট নয়। মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করেন,তাদের উদ্ভাবনী শক্তি থাকতে হবে এবং তাদের সংশ্লিষ্ট এলাকায় খুঁজে বের করতে হবে। দেশের কিভাবে উন্নয়ন করা যেতে পারে, এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে তাদেরকে কাজ করতে হবে।
শেখ হাসিনা সিভিল সার্ভিসের সদস্যদের জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার স্থপতি হিসেবে উল্লেখ করে তাদের প্রশিক্ষণের শেষ দিনে নেয়া শপথ স্মরণ রেখে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ভাষণের উল্লেখ করে বলেন, এ ভাষণে জনগণের সেবা করা এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে জাতির স্বার্থকে স্থান দিয়ে নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গ ও সরকারি কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, জাতির পিতার এই মন্তব্যের মর্মার্থ বুঝতে পেরেছেন এবং জনগণের সমস্যা হৃদয় দিয়ে সমাধান করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
সরকারি কর্মচারীদের জনগণের সেবক বলে স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা যে যেখানেই কাজ করবেন, আপনাদের সামনে থাকবে শুধু বাংলাদেশ এবং এ দেশের মানুষ। আপনাদের প্রিয় মাতৃভূমির ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে হবে। জানতে হবে আমাদের পূর্বসূরীরা কি অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করে এ দেশকে স্বাধীন করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নবীন কর্মকর্তাদের সেবাধর্মী মানসিক কাঠামো গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ কোর্সগুলোর কারিকুলামে আরও বেশি ব্যবহারিক অনুশীলন সংযুক্ত করার কাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘বিসিএস প্রশাসন একাডেমি তাদের প্রশিক্ষণে এ সংক্রান্ত নতুন নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে বলে আমি আশা করি।’
দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় একটি উপযুক্ত বিনিয়োগ বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, এ কারণে সরকার প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি এর গুণগত মান বৃদ্ধি করতে আমি নির্দেশ দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রকৌশল ও কারিগরিসহ প্রতিটি খাতে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রয়োজন অনুসারে সরকার প্রশিক্ষণের মেয়াদ বৃদ্ধি করছে এবং প্রশিক্ষণের জট নিরসনে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, এ রোডম্যাপ অনুযায়ী চললে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সকল ব্যাকলগ দূর হবে।’
শ্রেণিকক্ষ ভিত্তিক প্রশিক্ষণের পরিবর্তে দায়িত্ব ভিত্তিক প্রায়োগিক প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ক্ষেত্রে ই-লার্নিং-এর ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে যা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণকেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে মোবাইল কোর্স পরিচালনা, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট ম্যানেজমেন্ট, মিউটেশন, পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনলাইন কোর্স প্রস্তুত করা হয়েছে। এ প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য কাউকে কর্মস্থল ত্যাগ করতে হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিসিএস প্রশাসন একাডেমি মোবাইল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জেলায় জেলায় টেকনিক্যাল অব টিম বিল্ডিং, অন-দ্য-জব ট্রেনিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে। প্রান্তিক পর্যায়ের সকল কর্মচারী এতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘এর ফলে প্রশাসন আরো গতিশীল ও জনমুখী হবে বলে আমার বিশ্বাস।’
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিলো এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। এ লক্ষ্য অর্জনে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে কাজে হাত দেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ধ্বংসস্তুপ থেকে দেশকে তুলে এনে একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন। তবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলে থেমে যায় বাংলাদেশের উন্নয়নের চাকা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর আমরা দেশের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন শুরু করি। খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশকে আমরা খাদ্য উদ্বৃত্তের বাংলাদেশে পরিণত করি। শিক্ষার হার, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, রফতানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পেতে থাকে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ প্রতিটি খাতে আমরা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হই।
শেখ হাসিনা বলেন, গত সাড়ে ৬ বছরে প্রতিটি ক্ষেত্রে অসামান্য উন্নয়নের সুবাদে আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছি। জিডিপি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৫১ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ১৩ শতাংশ থেকে ৬.৩ শতাংশে কমিয়ে এনেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তিনমাস জুড়ে বিএনপি’র হরতাল ও অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি না থাকলে চলতি বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ দাঁড়াতো। শিক্ষা খাতের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটি শিক্ষিত জাতি ছাড়া কোন দেশ উন্নত হতে পারে না।’
তিনি বলেন, দেশ যদি আরো অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা অর্জন করে তাহলে তাঁর সরকার সম্পূর্ণভাবে বিনা খরচায় শিক্ষার সুযোগ দেবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে আজ ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া। দেশের ৬৪টি জেলা, ৭টি বিভাগীয় কমিশনার অফিস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ ১৪টি মন্ত্রণালয় এবং ৩টি অধিদফতরে আমরা ইলেক্ট্রনিক ফাইলিং সিস্টেম বাস্তবায়ন করেছি। এ কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আপনারাই নেতৃত্ব দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের নেতৃত্বে মাঠ ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে ইনোভেশন টিম গড়ে তোলা হয়েছে। এ টিম জনগণকে স্বল্প সময়ে, কম ব্যয়ে এবং বিনা ভোগান্তিতে সেবা দিচ্ছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে এ-২-আই থেকে প্রদান করা হচ্ছে ইনোভেশন ফান্ড।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাজের গতি বাড়ানোর জন্য সরকার ‘জনপ্রশাসন পদক নীতিমালা’ প্রণয়ন করা হয়েছে। গত সাড়ে ৬ বছরে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে তার সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতো অধিক সংখ্যক পদোন্নতি অন্য কোন সরকারের সময় দেয়া হয়নি। পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে উপ-সচিব থেকে তদুর্ধ্ব ৩২৫টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে সবাইকে খুশি করা না গেলেও ভবিষ্যতে যাতে কেউ বঞ্চিত না হন সে বিষয়ে মনোযোগ দেয়া হবে।
শেখ হাসিনা নিজের বক্তব্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার সরকারের বিভিন্ন অর্জন তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ মামলায় বিজয় অর্জন, গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি এবং পার্বত্য শান্তি চুক্তির পাশাপাশি ভারতের পার্লামেন্টে স্থলসীমান্ত চুক্তির অনুমোদন তার সরকারের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সাফল্য। তিনি বলেন, আমরা দ্বিপক্ষীয় সকল সমস্যার সমাধান করেছি।’
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদিক এবং মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিসিএস প্রশাসনের রেক্টর সোহরাব হোসেন।
অনুষ্ঠানে রেকটর অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী জান্নাতুল ফেরদৌস ও সৈয়দ আশরাফুজ্জামান কোর্সের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে দুটি কোর্স সফলভাবে সমাপ্তকারী ১৫৯ জনের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন। এ ছাড়াও কোর্সে অসাধারণ নৈপূণ্য প্রদর্শনের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ৯২তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের রেক্টর অ্যাওয়ার্ড জান্নাতুল ফেরদৌস এবং ৯৩তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের রেক্টর অ্যাওয়ার্ড সৈয়দ আশরাফুজ্জামানকে প্রদান করেন।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।