হাজীগঞ্জ শাহরাস্তি (চাঁদপুর-৫) নির্বাচনী আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জি. মমিনুল হকের হাতেই থাকছে ধানের শীষ প্রতীক এ নিয়ে তেমন কোনো সন্দেহ দেখা না গেলেও ধোঁয়াশা এখনও রয়ে গেছে কার হাতে উঠছে নৌকার মনোনয়ন।
এ দুই উপজেলার প্রায় ৪ লক্ষ ভোটারের কে হবেন আগামি দিনের সাংসদ এরই মধ্যে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের তৃনমূল নেতাকর্মীদের মাঝে জল্পনা কল্পনা গত কয়েক মাস ধরে চলছে। এরই মধ্যে এ আসনের রাজনীতি মাঠে অনেক সমীকরণ দেখা যায়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি (চাঁদপুর-৫) খুরবই গুরুত্বপূর্ন একটি মুহুর্তে ভোটের মাঠের হিসাব কশছেন বড় দুটি দলের প্রার্থীরা। তবে আসনে আওয়ামীলীগের ভরসা উন্নয়ন এবং বিএনপির মনে করছেন এটি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের নির্বাচন। তারা ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে ভোটারদের কাছে আওয়ামীলীগ সরকারের বিগত দিনের দলের নেতাকর্মীদের উপর মামলা হামলা নির্যাতনের কথা জানিয়ে ভোট ব্যাংক তৈরি করবেন। আর আওয়ামীলীগ উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে ভোট আদায় করবেন ভোটারদের কাছ থেকে এমনটিই জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতারা।
এ নির্বাচেন একদিকে আছেন আওয়ামীলীগের তিন বারের বিজয়ী প্রার্থী মহান মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি। অপরদিকে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি নির্বাচনী এলাকার প্রধান সমন্বয়ক আলহাজ্ব লায়ন ইঞ্জি. মমিনুল হক।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পরে বিএনপি এই আসনে তাদের দলীয় কার্যক্রম গঠনমূলক ভাবে চালিয়ে আসছে। নিজেদের মধ্যে মাঝে মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি দেখা দিলেও বর্তমানে কোন গ্রুপিং ছাড়াই এই দু’উপজেলার সকল নেতাকর্মী ইঞ্জি. মমিনুল হকের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ভাবে রাজনীতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাবেন বলে জানা যায়। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের মূখে প্রার্থী ইঞ্জি. মমিনুল হকের নাম আলোচনা শুনা যাচ্ছে সব চেয়ে বেশি। তারা বলছেন শেষ পর্যন্ত এই নেতার হাতেই উঠবে ধানের শীষ প্রতীক।
এ দুটি নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীরা সেন্ট্রাল বিএনপি মমিনুল হক এর হাতে ধানের শীষ প্রতীক তুলে দিয়ে এই আসনটি পূনরুদ্ধার করবেন বলে আশা করছি। নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষনার পর থেকেই সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুর-৫ আসনেও শুরু হয়ে গেছে ভোটের আমেজ। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিএনপিতে কোন শংকা না থাকায় দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের প্রিয় নেতাকে বিজয়ী করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারন বিএনপির জন্য এ আসনটি উদ্ধার করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে। অতীতের পরিসংখ্যানে দেখা যায় এখানে আওয়ামীলীগ-বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। খুব অল্প সংখ্যক ভোটের ব্যবধানে আওয়ামীলীগ-বিএনপির প্রার্থী পাশ করে থাকেন।
এ আসনটিতে পূর্বে বিএনপি থেকে কয়েকবার নির্বাচিত হয়েছেন এম এ মতিন। এবার বয়সের ভারে অনেকটাই নিশ্চিত তিনি নির্বাচনের মাঠে দৌড়ানোর মত সেই আমেজ নেই। তবে তার হাল ধরার লক্ষে গত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি লায়ন ইঞ্জি. মমিনুল হক। তাই একাদশ নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্ধিতার লক্ষে তৃনমূল নেতাকর্মীদের এক করে এখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়াও এ আসন থেকে আরো কয়েক জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন ফরম সগ্রহ করলেও তাদের সাথে মাঠ পর্যায়ের বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে তেমন কোন চিনা পরিচিতি নেই বলে জানা জায়।
এদিকে এবার ক্ষমতায়সীন দলের প্রধান প্রার্থী বর্তমান সাংসদ মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম তার মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আওয়ামীলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সম্পূর্ন আশাবাদী। তিনি গত ১০ বছর হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি উপজেলা ব্যাপক উন্নয়ন মূলক কাজ করেছেন। নিজেকে সকল সময় দূর্নীতি থেকে দূরে রেখে সরকারী সকল কাজ জনগনের দৌরগোড়ায় পৌছে দিয়েছেন। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এমন নেতাকর্মীদের কখনো প্রশ্রয় দেননি বর্তমান সাংসদ।
অবশ্য আওয়ামীলীগে রয়েছে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ দু’উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর-৫ আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, মহিলা সংরক্ষিত আসনের বর্তমান এমপি এ্যাড. নুরজাহান বেগম মুক্তা, পাওয়ার সেলের ডিজি ইঞ্জি. মোহাম্মদ হোসাইন আহমেদ, ইঞ্জি. সফিকুর রহমান, আওয়ামীলীগ নেতা সফিকুল আলম ফিরোজ, অধ্যাপক এ কে এম ফজলুল হক, ঢাকা কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি সফিকুল আলম ফিরোজ, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সহ-সম্পাদক মোস্তফা কামাল, হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব অধ্যাপক আব্দুর রশিদ মজুমদার, হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হেলালউদ্দিন মিয়াজীসহ প্রায় এক ডজন প্রার্থী।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা দাবি করেন এই আসনটি আওয়ামীলীগের দূর্গ। আওয়ামীলীগ ৩ বার সরকার গঠন করে হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে ব্যাপক উন্নয়ন হওয়াতে সকল নেতাকর্মীরা আশাবাদী এবারও নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হবে। এই সংসদীয় আসনে নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুয়ায়ী মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩শ’ ৮৭ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৮ হাজার ১শ’ ৮৪ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৯৫ হাজার ২শ’ ৩ জন। ভোটের পরিসংখ্যান যাই হোক না কেন দু’দলের নমিনেশন প্রাপ্তি নেতাদের নিয়েই চলছে ভোটের মাঠের হিসেব নিকাশ।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. মাইনুদ্দিন বলেন, মেজর রফিকুল ইসলাম হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে যে উন্নয়ন করেছেন সেই উন্নয়নের চিত্র অত্র এলাকার জনগন চিরদিন মনে রাখবে। এমন কোন ক্ষেত্র বাকী নেই যে তিনি উন্নয়ন করেননি। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে থেকে তাদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামীলীগকে সু-শৃঙ্খল রেখেছেন এবং উনার মনোনয়ন নিশ্চিত। এই আসনটি আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেব।
পৌর বিএনপির আহবায়ক আবুল বাশার মৃধা বলেন, আমাদের মধ্যে এখন আর কোন বিরোধ নেই। আমরা আশাকরি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ইঞ্জি. মমিনুল হক মাঠে আসবেন এবং তাকে নির্বাচিত করতে আমারা সবাই এক হয়ে কাজ করবো।
প্রতিবেদক:জহিরুল ইসলাম জয়