চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল। গত ২ জুলাই ২০১৫ সালের এদিনে তিনি চাঁদপুর জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন । আজ ২ জুলাই চাঁদপুর জেলা প্রশাসক হিসেবে দু’বছরপূর্তি হয়েছে।
শনিবার (১ জুলাই) দুপুরে জেলা প্রশাসকের বাংলাতো প্রায় দু’ঘন্টা ব্যাপি গত দু’বছরে তিনি চাঁদপুর জেলা প্রশাসক হিসেবে কি কি কাজ করেছেন এবং কি কি কাজ এখনো অসম্পন্ন রয়েছে সে বিষয়ে একান্ত আলাপচারিতা হয় দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার সম্পাদক সোহেল রুশদীর সাথে।
এসব বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন দেশ সেরা চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো, আব্দুস সবুর মন্ডল।
সফলতা যেমনি বলেছেন তেমনি অপূর্ণতার কথা নির্ধিদায় স্বীকার করেছেন তিনি। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন চমৎকারভাবে। সদালাপি এ মানুষটি আইসিটিতে নাগরিক সেবায় দেশসেরা জেলা প্রশাসক হিসেবে এনে দিয়েছেন চাঁদপুরের সম্মান। চাঁদপুরকে নিয়ে সর্বদা স্বপ্ন দেখছেন। তাই অনেকেই তাকে ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ বলে ।
দুপুরে জেলা প্রশাসকের বাংলার কার্যালয়ে একান্ত আলাপচারিতায় জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোর্ষিত কর্মসূচী বাস্তবায়নে সর্বস্তরের জনগণকে সাথে নিয়ে কাজ করছি। জেলা প্রশাসক পদায়নের ৭ দিনের মধ্যে ৩ বৎসরের কর্মপরিকল্পনা জমা দেয়া হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং কেবিনেট নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এই ৩ বৎসরের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। এটি মূলত স্থানীয় অর্থায়নে এবং জনগণের সহযোগিতা।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা সকল বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তাদের যেই রুটিন দায়িত্ব আছে তার পাশাপাশি কিছু বাড়তি কাজ হাতে নিয়ে ছিলাম এবং এটি বৎসর হিসেবে র্টাগেট কিছু কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলাম। ইতিমধ্যে তার ২ বছর হয়ে গেছে। যথাযথ ভাবে ৩ বৎসরের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে, ২ বৎসরের অগ্রগতি সন্তোষজনক।’
উল্লেখ যোগ্য অগ্রগতির দৃশ্যমান :
সাংস্কৃতিক মাস, ক্রিড়া মাস, স্কাইপের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা, ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ক্যাম্প, ভূমির ক্ষেত্রে অটোমেশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা গ্রহণ, ওয়াইফাই জোন প্রতিষ্ঠা, ইলেক্ট্রোনিক্স হাজিরা প্রতিষ্ঠা, মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার বৃদ্ধি। এগুলো আমরা যথাযথ ভাবে পালন করেছি। সকল সরকারি বিভাগের কাজের সচ্ছতা আনতে সকল কর্মকতাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছি।
ইলিশ মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি :
১৫ এবং ১৬ সালে মা ইলিশ ও জাটকা ইলিশ রক্ষা করে যেই উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে তা জাতি উপলদ্ধি করতে পেরেছে। চাঁদপুরবাসী এবং জেলেরা ইলিশ নিয়ে এখন গর্ববোধ করে। এই কাজগুলো ৩ বৎসরের কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা নিরলশ ভাবে পরিশ্রম করে বাস্তবায়ন করেছি।
কৃষি :
কৃষি ক্ষেত্রে আমরা ২ ফসলি জমি ৩ ফসলিতে এবং ৩ ফসলি জমি ৪ ফসলিতে রূপান্তরিত করার ফলে প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।
শিক্ষা :
শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা প্রাইমারি শিক্ষার গুনগতমান বৃদ্ধি এবং জিপি-এর মানবৃদ্ধির জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে ছিলাম। টার্গেট অনুযায়ী আমরা শিক্ষার গুনগতমান বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। ৩ বৎসরের কর্ম পরিকল্পনার পুস্তিকা আমরা ছেপেছি। এবছর সমাপ্তির কার্যক্রম চলছে। আগামি ৭ দিনের মধ্যে ২ বছরের কর্ম পরিকল্পনার বাস্তবায়ন চিত্র প্রকাশ করবো।
অনলাইন :
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সেবা সহজিকরন পদ্ধতি গ্রহণ করেছি। ‘সিটিজেন চার্টার ডেক্স’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছি যা বাংলাদেশে আমারাই প্রথম তৈরি করেছি। এখানে ৬১টি দপ্তরের ৮০৪টি সেবা সংযোজন করেছি।
প্রশিক্ষণ :
আমরা অফিসের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষ করা হচ্ছে। বহুকাল ধরে যেই ভাবে কর্মকতারা কাজ করে এসেছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে আমরা তাদের উদ্ভোদ্ধ করছি।
ইলিশ রক্ষা :
চাঁদপুরের সাধারণ মানুষের সঙ্গে ২০১৫ সাল থেকে আলাপ আলোচনার মধ্যে আমি জানতে পারি চাঁদপুরের মানুষের যেই ভালোবাসা রয়েছে তা ইলিশকে নিয়ে। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়ার যেই মিলনস্থল সেই চাঁদপুরের ১০০ কিলোমিটার জুড়ে মা ইলিশ এবং জাটকা ইলিশ বড় হয়। এই মা ইলিশ এবং জাটকা রক্ষার জন্য আমরা সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক, ইউপি চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি এবং দলীয় লোকজনদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছি। জেলেদের সার্বিক সহযোগিতায় এবং মৎস মন্ত্রনালয়ের আর্থিক সহায়তায় আমরা গত দু’বছর মা ইলিশ ও জাটকা ইলিশ রক্ষা করতে পেরেছি। ফলে গোটা জাতি ইলিশের ব্যপকতা উপলদ্ধি করতে পেরেছে।
‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ জেলা ব্র্যান্ডিং স্বীকৃতি :
চাঁদপুরে চতুরঙ্গ নামের একটি সংগঠন রয়েছে যা আজ ১০ বৎসর যাবৎ সপ্তাহ ব্যাপি ইলিশ উৎসব করে আসছে। চাঁদপুরে প্রায় দেড় যুগ আগে ইলিশ চত্বর নামে একটি চত্বর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইলিশের মুড়াল রয়েছে সেখানে। চতুরঙ্গের এই আন্দোলন ও ইলিশ চত্বর এটি প্রমান করে ইলিশের দাবিদার যে চাঁদপুরবাসী, সেটা আজ নতুন নয়, দীর্ঘ দিনের।
এই দাবিকেই স্বীকৃতি সরুপ আনার জন্য বাংলাদেশে প্রথম চাঁদপুরকে ইলিশের নামে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ সিটি অব্ হিলশা নামে। এই ইলিশকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরবাসী যেন উন্নায়নের সোপানে উঠতে পারে সে জন্য ব্যপক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
ব্র্যান্ডিং ইসু বাংলাদেশের প্রত্যেকটা জেলায় গঠন করতে সরকার প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে আর্দেশ দিয়েছেন। নিজ নিজ জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গর্বের বিষয়কে উপস্থাপনার মাধ্যমে ব্র্যান্ডিং জেলা গড়ে তুলতে হবে।
ডিজিটাল সেবা :
২০১৬ সালে চাঁদপুরের ৮ উপজেলার ভূমি অফিস গুলোকে ডিজিটালের আওতায় নিয়ে এসেছি। সাধারণ মানুষের অনুযোগ অভিযোগ এখন অনলাইনের মাধ্যেমে দিতে পারছে। নাম জারি অনলাইনের মাধ্যমে করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রথম চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলার ভূমি অফিসের নামজারি এখন অনলাইনে করা হচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানে প্রধানমন্ত্রীর যেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সর্বস্তরের জনগন নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা স্কুল কলেজ গুলোকে সিসিটিভি, ওয়াইফাই ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনা করা হয়েছে।
৮৯ ইউনিয়নে ডিজিটালের আওয়াতায় আসে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন :
৮৯টি ইউনিয়ন পরিষদকে আমরা ডিজিটালের আওতায় যাতে আসে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি। ইউনিয়ন পরিষদের ৩টিকে সেবাকে জাতে অনলাইনে করা যায় সেরকম একটা সফটওয়্যার আমরা ইনিস্টল করেছি।
অনলাইন সেবা :
জেলা প্রশাসকের ৮টি সেবা অনলাইনে নিশ্চিত করেছি। এই কাজগুলো সাধারণত আমরা নিজস্ব উদ্যোগে হচ্ছে। ডিজিটাল বিনির্মানে যে সমস্ত উদ্যোগ রয়েছে ই-নথি ব্যবস্থাপনা, মোবাইলকোর্ট পরিচালনা, ওয়েব র্পোটাল, ফেসবুকের মাধ্যেমে নাগরিক সেবা প্রদান, ফেসবুক টেলিভিশন। ব্র্যান্ডিং কার্যক্রমকে উন্নয়নের প্লাটর্ফম হিসেবে দেখছি আমরা।
স্বাস্থ্য সেবা :
আমরা স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা, মাদক র্নিমূল করা, বাল্য বিবাহ বন্ধ করা, উপজেলার যেই ইতিহাস ঐতিহ্য গুলো আছে তাতে নতুন ভাবে ইনোভেশন সংযোজন করার কাজ করে যাচ্ছি।
জেলা প্রশাসকের চলমান ও অসম্পন্ন কাজ :
কাজেই অসম্পূর্ণ রয়েছে, সকল নাগরিকদের ডাটাবেস নিশ্চিত করা, বাল্যবিবাহ রোধে সফটওয়্যার তৈরি করে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যেমে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা, মাতৃমৃত্যু বন্ধে সফটওয়্যার তৈরি করা। মাদক নিমূল করা। রাস্তা ঘাট প্রসস্থ করা ধির গতিতে আগাচ্ছে। আর একটি বিষয় হচ্ছে চাঁদপুর ফাউন্ডেশনকে নতুন ভাবে তৈরি করা।
আমরা চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে টুরিজম র্স্পট তৈরির কাজ চলছে। ত্রিনদী মোহনারকে বিভিন্ন আঙ্গিকে সাঝানোর পরিকল্পনা চলছে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যেমে চাঁদপুরকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার প্রয়াস গ্রহণ করেছি।
চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজের অনুমতি :
২০১৬ সালে চাঁদপুরে একটি মেডিকেল কলেজ একটি র্পুণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অনুমতি আমরা পেয়েছি। আর এই দু’টি কাজ এখন ২টি আলাদা মন্ত্রনালয়ে রয়েছে।
জেলা প্রশাসকের কৃতজ্ঞতা :
২০১৫ সালের ২ জুলাই আমি চাঁদপুরে যোগদান করি। প্রথম সভাতে সবার সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে যেই আনন্দবোধ করেছিলাম সেই আনন্দ ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে। আমি সেদিন যেই সমস্ত সপ্নের কথা বলেছিলাম ২০১৫ সালের ৩ জুলাইয়ে চাঁদপুরের দৈনিক পত্রিকায় রয়েছে।
আমি চাঁদপুরবাসীকে অনুরোধ করবো সেই পত্রিকা গুলো দেখার জন্য। যদি আমি সেই সপ্ন গুলো পূরণ করে থাকি তাহলে আমি মনে করবো তা আমি আপনাদের সহযোগিতায় পূরণ করেছি আর যেই সপ্ন গুলো আমি এখনও পূরণ করতে পারিনি। সেগুলো যদি আমাকে মনে করিয়ে দেন তাহলে আমি যে ক’দিন আছি আমি সেই অপুর্ণ সপ্ন গুলো পুরণ করার চেষ্টা করবো।
চাঁদপুর ফাউন্ডেশন যাতে জনকল্যাণে নিয়োজিত করা যায় এবং সকল মত বর্ণের মানুষের যাতে প্লাটর্ফম গড়ে উঠে সেই প্রচেষ্টা আমি যে কদিন আছি চালিয়ে যাবো।
বর্তমানে আমরা জেলা প্রশাসন মানুষের জন্য কাজ করছি। সোনার বাংলা গড়ার লক্ষে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন এবং জনকল্যাণে কাজ করছি। পাশাপাশি চাঁদপুরবাসীর সহযোগিতা না থাকলে এর কিছুই হতো না।
আমি আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বস্তরের জনগনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
আপডেট,বাংলাদেশ সময় ১ : ৪৫ এএম, ১ জুলাই ২০১৭,রোববার
এইউ