নাজনিন আক্তার হ্যাপি আর মাহফুজা আক্তার হ্যাপি। একজন চিত্রনায়িকা অন্যজন গৃহপরিচারিকা। এই দু’জনকে নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে যা হলো তা এককথায় অনভিপ্রেত। বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে পাঁচ মাসেরও বেশি হলো। রুবেল হোসেনের হ্যাপিকে প্রায় সবাই ভুলতেই বসেছিল।
নতুন করে আবার হ্যাপিকে টেনে আনলেন পেসার শাহাদাত হোসেন। না, এই হ্যাপি রুপালি জগতের কেউ নয়, নির্যাতিত শ্রেণীর প্রতিনিধি। এই হ্যাপির শরীরে আঘাতের চিহ্ন সবাইকে ছুঁয়ে গেছে। কাঁদিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে। ক্রিকেটারদের সঙ্গে যাদের সখ্য সেই ক্রীড়া সাংবাদিকরাও শাস্তি দাবি করেছেন শাহাদাতের!
দেখার ছিল, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এমন একটা স্পর্শকাতর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত দেয়? হ্যাপির মামলার সুরাহা না হওয়া অবধি সব ধরণের ক্রিকেট থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে শাহাদাতকে। জতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তিনি ফিরতে পারবেন না, মামলা উঠে না যাওয়া পর্যন্ত। বিসিবি’র এই সাহসি সিদ্ধান্ত সর্বমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সস্ত্রীক পলাতক শাহাদাত বোর্ড সভাপতি নাজুমল হাসানের দ্বারস্থ হয়েছিলেন হ্যাপিকান্ডের সমাধান খুঁজতে। ক্রিকেটারদের বড় অভিভাবক হয়েও কতটা নাখোশ হলে তিনি শাহাদাতকে সাক্ষাৎ দেননি সেটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার পড়ে না।
ক্রিকেট পরাশক্তিদের একের পর এক হারিয়ে বিশ্বক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত শক্তি হওয়ার পথে বাংলাদেশ। ২৮ সেপ্টেম্বর দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসছে অস্ট্রেলিয়া। ঠিক তার আগে শাহাদাতের গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতনের ঘটনা বিশ্ব গণমাধ্যমে উঠে এলো। যেটা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে। নাম প্রকাশ না করে অনেক ক্রিকেটারই শাহাদাতের ন্যাক্কারজনক ঘটনার ধিক্কার জানিয়েছেন। যাদেরকে রোল মডেল ভেবে অভিভাবকরা তাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহী করে তুলছে, সেই তাদেরই একজনের এমন ঘটনা কাঁটার মতো বিঁধছে!
বিশ্বকাপের আগে চিত্রনায়িকা নাজনিন আক্তার হ্যাপি পেসার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা ঠুঁকে দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। এর জেরে রুবেলকে জেলও খাটতে হয়েছিল। বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের ‘হটকেক’- পরিণত হয়েছিল রুবেল-হ্যাপীর বিষয়টি। রুবেল বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন কি না, এনিয়েও তৈরি হয় সংশয়।
শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াইয়ে জিতে বিশ্বকাপ খেলেন রুবেল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। ম্যাচের শেষ ওভারে স্টুয়ার্ট ব্রড এবং জেমস অ্যান্ডারসনকে ইয়র্কার দিয়ে বোল্ড করার দৃশ্য এত তাড়াতাড়ি সবার ভুলে যাওয়ার কথা কথা নয়।
প্রশ্ন উঠতে পারে রুবেল বিসিবি’র সহায়তা পেলে শাহাদাত কেন পাবেন না? একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, নায়িকা হ্যাপী একেক সময় একেকরকম কথা বলেছেন। রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার পরও তিনি বলেছেন, তাকে ছাড়া বাঁচবেন না। নিজেই আবার মামলা তুলে নিয়েছেন। অনেক সময় নিজেই ফেসবুকে আত্মহত্যার স্ট্যাটাস দিয়ে খবরে এসেছেন। এটা ঠিক, হ্যাপী যতটা না নায়িকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তার চেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছেন রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা করে।
কিন্তু শাহাদাত আর তার স্ত্রী মিলে যে হ্যাপীকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করেছেন সেই হ্যাপী একটি শিশু। গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতো শাহাদাতের বাসায়। সে নিজেই জবানবন্দি দিয়েছে, শাহাদাত এবং তার স্ত্রী প্রায়ই তাকে মারধর করতো। হ্যাপির ভাষায়, ‘ভাইয়া (শাহাদাত) আমাকে মারার জন্য বাজার থেকে বেত কিনে নিয়ে আসতো। গাড়ির ভেতরও বেত রাখতেন মারার জন্য।’ এই ভয়েই গত ৬ সেপ্টেম্বর শাহাদাতের বাসা থেকে পালিয়েছিলো সে।
থানায় গিয়ে শাহাদাত সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন তার বাসার গৃহপরিচারিকা মাহফুজা আক্তার হ্যাপীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওই রাতে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করায়। স্থানীয় এক ব্যক্তি স্বপ্রনোদিত হয়ে শিশু নির্যাতনের দায়ে শাহাদাতের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সে থেকে ফেরারি আসামী হয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন শাহাদাত এবং তার স্ত্রী। পুলিশ তাদের খুঁজছে। এটা ঠিক, নিজেকে নির্দোষ ভাবলে এভাবে আত্মগোপনে থাকতেন না শাহাদাত!
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আরেকবার ক্রিকেটারদের এই বার্তা দিয়ে দিল যে, শাহাদাতের মতো গুরুতর অভিযোগ কারও বিরুদ্ধে উঠলে তাদের কিছু করার নেই। এমন সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য ‘বিশেষ’ ধন্যবাদ পেতেই পারে বিসিবি।
চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক: ।। আপডেট ০২:৩১ পিএম ২৯ অক্টোবর, ২০১৫ বৃহস্পতিবার
প্রতিনিধি/ডিএইচ