প্রতীকী ছবি
দেশের একটি খ্যাতিমান মসজিদ হচ্ছে- হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ। সেই সময়ের সেরা দুর্লভ উপকরণের সমন্বয়ে নির্মিত আজকের এ হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ। যা চাঁদপুর জেলার কেন্দ্রবিন্দুতে, ব্যবসা ও বাণিজ্যিকভাবে পরিচিতি নিয়ে হাজীগঞ্জ এর সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছে। এটি এখন হাজীগঞ্জের গৌরবেরও প্রতীক। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর কারণে সাধারণ মানুষের কাছে এ মসজিদটি দৃষ্টি কেড়েছে। দানবীর আলহাজ্ব আহমদ আলী পাটোয়ারী (রহ.) হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের ওয়াকীফ, প্রতিষ্ঠাতা, প্রথম মোতওয়াল্লী । মসজিদের প্রতিষ্ঠাকাল ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ।
প্রাথমিক অবস্থায় তাঁর নির্মিত একচালা খড়ের মসজিদটিকে খড়, ছনপাতা এবং গোলপাতা দিয়ে দোচালা মসজিদ তৈরি করেন। অত:পর দোচালা টিনের মসজিদ নির্মাণ করেন। দোচালা টিন থেকে পাকা মসজিদ নির্মাণ করতে গিয়ে তিনি লম্বা বহরবিশিষ্ট একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। প্রস্তের তুলনায় সেই পাকা মসজিদের দৈর্ঘ্য ছিল অনেক বেশি। সম্ভবত: প্রথম পর্যায়েই তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন যে, মসজিদটির প্রস্থ তিনি পর্যায়ক্রমে পূর্বদিকে বাড়াতে থাকবেন এবং এভাবে বর্ধিত করতে করতে সেটাকে সুবিশাল এক মসজিদে পরিণত করবেন। আর এটা বিস্ময়কর। তাঁর জীবদ্দশাতেই তিনি মেহরাব থেকে মিনার পর্যন্ত ২৮ হাজার বর্গফুটের এক সুবিশাল মসজিদ নির্মাণ করে দিয়েছেন।
পর্যায়ক্রমে তিন ধাপে প্রস্থ বাড়াতে গিয়ে পরিশেষে মসজিদটির দৈর্ঘ্যের চেয়ে প্রস্থ অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। এছাড়া এ বিশাল মসজিদের জন্য তিনি নির্মাণ করেছিলেন সু-উচ্চ মিনার, মিনারের পাদদেশে দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটক আর নিপুণ কারুকার্যময় মেহরাব নির্মাণ করেন। আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) প্রত্যন্ত অঞ্চল মফস্বল এলাকায় যে সময়ে এ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন সে সময় সারা পূর্ববাংলায় এক কোটি মুসলমানের বসবাস ছিল কিনা সন্দেহ। কাজেই মফস্বল এলাকায় কারা এতবড় মসজিদে নামাজ পড়বে সেটা নিয়েও অনেকে কটাক্ষ করতো। অথচ তিনি শুধু মসজিদের সুবিশাল আয়তন নির্মাণ করেই ক্ষান্ত হন নি-বরং এ মসজিদের নির্মাণ সামগ্রীতে যুগের সেরা দুর্লভ উপকরণের সমন্বয় ঘটিয়ে আরেক ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।
দুর্লভ সেই নির্মাণ উপকরণগুলো এবং মসজিদটির বিরল বৈশিষ্টসমূহের মধ্যে কয়েকটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে উপস্থাপিত হলো :
মসজিদ নির্মাণের জন্য স্বনির্মিত ইটের ব্যবহার :
সে সময়ে অত্র এলাকায় ইট তৈরির ব্যবস্থা ছিল না। কোনো ইটভাটা না থাকায় এ এলাকায় তৈরি ইট কেনার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাই আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) নিজ উদ্যোগে ইটখোলা বা ইটের ভাটা তৈরি করেছিলেন। সেখানে জাগ উত্তর পাশে কাজিরগাঁও মৌজায় নিজ মালিকানাধীন ভূমিতে খালের পাড়ে ইটের দেয়া পদ্ধতিতে মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হয়েছিল। হাজীগঞ্জে রেল লাইনের ডাটা তৈরি করে জাগ দেয়া পদ্ধতিতে ইট উৎপাদন করেন। জায়গাটি ইটখোলা নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল।
অসাধারণ নক্সায় সু-স্বজ্জিত মেহরাব :
আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) মেহরাবে ব্যবহারের জন্য ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাঁচ দ্বারা নির্মিত নানা বর্ণের ফুলের টব ও ঝাড় সংগ্রহ করেছিলেন। ঢাকার সুনিপূণ ওস্তাগার আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে সে সমস্ত কাচের সামগ্রী ব্যবহার করে মসজিদের মেহরাব সাজানো হয়েছিল। আব্দুর রহমান ওস্তাগার কাচের ঝাড় ও টবগুলো টুকরো করে কেটে সেগুলো দিয়ে মনোরম ফুল- পাতার নকশায় সজ্জিত করেছেন। হাজীগঞ্জ বড় মসজিদের মেহরাব। ফলে মেহরাবটি আজও তার সেই অতুলনীয় শিল্পচেতনার স্বাক্ষর বহন করে যাচ্ছে। সে সময়ে মফস্বল এলাকায় এধরনের কাজ ছিল অকল্পনীয়। ঐতিহ্যবাহী সেই দুর্লভ ও নিখুঁত কারুকার্যে সুসজ্জিত মেহরাব বর্তমান আমলেও অন্য কোনো মসজিদে খুব একটা দেখা যায় না ।
খুতবায় ব্যবহৃত লাঠি :
আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে নিজ পুকুর থেকে সাত পাতিল টাকা লাভ করেছিলেন। অতপর তিনি আল্লাহ্র কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনার্থে হজ্বের নিয়ত করে হজ্ব পালন করতে যান এবং আকবরি হজ্ব লাভ করেন। সে সময়ে তিনি ইরাকের বাগদাদ ও কুফা সফর করেন। সেখান থেকে তিনি ইমাম সাহেবের খুতবার সময় ব্যবহৃত কারুকার্যখচিত সুদর্শন লাঠিখানা সঙ্গে নিয়ে আসেন। বিরল কারুকার্যখচিত সেই লাঠিখানা এখনও বড় মসজিদের ইমাম সাহেব খোতবার সময় ব্যবহার করে আসছেন ।
ফ্লোরে মার্বেল পাথরের ব্যবহার :
যে সময়ে এ এলাকায় মানুষের বাড়ি নির্মিত হত স্রেফ কাদামাটি দিয়ে, সে সময়ে পাকা ভিটি তৈরি করে মেঝেতে মার্বেল পাথর বসানোর বিষয়টি ছিল সাধারণ মানুষের চিন্তার বাইরে। অত্যন্ত সৌখিন ও উদার মনের অধিকারী আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) তাঁর নির্মিত মসজিদের প্রথম অংশের প্রায় ১ হাজার ২০ হাত ফ্লোরের জন্য কলিকাতা থেকে জাহাজে করে মর্মর পাথর বা মার্বেল পাথর এনেছিলেন। ওস্তাগার আব্দুর রহমান রাজের মাধ্যমে মসজিদের প্রায় ২ হাজার বর্গহাতের মেঝেতে এ বিরল পাথর বসানোর কাজ সুসম্পন্ন করেছিলেন। সেই মর্মর পাথর এক নজর দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে ভীড় জমাত। যে আমলে পাকা ফ্লোর দুষ্প্রাপ্য ছিল, সে সময়ে হাজীগঞ্জের মানুষ সেই মর্মর পাথরে নির্মিত মসজিদের মেঝেতে নামাজ আদায় করেছেন। তাছাড়া কলিকাতা থেকে মসজিদের ছাদের জন্য রেলের স্লিপারের ন্যায় ইংরেজী এইচ আকারের লোহার বিম আনা হয়েছিল প্রয়োজনীয় পরিমানে।
বড় বড় ফুলের ঝাড় :
আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) আল্লাহ্ ঘর বেহেস্তের বাগানকে সত্যিকারার্থে বাগানের মত সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। এজন্য তিনি যেমনিভাবে মেহরাবকে সাজিয়েছেন তেমনিভাবে পুরো মসজিদকে সাজানোর জন্য সুদূর কলিকাতা থেকে কাচের বড় বড় ঝাড়বাতি এনে মসজিদকে মনোরম আলোয় আলোকিত করেছিলেন। এ ঝাড়বাতিগুলোও সে সময় ব্যাপক ভাবে বৃহত্তর অঞ্চলের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
খুতবার আজানের মঞ্চ :
জৈনপুরের হুজুরদের আমলে হাজীগঞ্জ বড় মসজিদে মেহরাব এবং মিম্বরের মাঝে মদীনা শরীফের ন্যায় কিছুটা দূরত্ব ছিল মসজিদের মেহরাব নিজ জায়গাতেই সুন্দরভাবে সাজানো ছিল। তবে খুতবার জন্য প্রথম অংশের পূর্ব দেয়ালের পিছনে সাত স্তরবিশিষ্ট মিম্বর নির্মিত হয়েছিল এবং খুতবার আজানের জন্য সেখানে লোহা কাঠের উপর বিভিন্ন প্রকারের নকশা খচিত একটি মনোরম দর্শনীয় মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। মঞ্চে উঠে মোয়াজ্জিন সাহেব খুতবার আজান দিতেন এবং ইমাম সাহেব সাত স্তরবিশিষ্ট মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। খুতবা শেষ হলে ইমাম সাহেব মূল মসজিদের কারুকার্যখচিত মেহরাবে গিয়ে জুময়ার ও ঈদের নামাজের ইমামতি করতেন। মনোরম নকশায় সজ্জিত কাঠের তৈরি খুতবার উঁচু মঞ্চটিও মানুষের মাঝে আকর্ষণ সৃষ্টি করেছিল ।
মাইকের ব্যবস্থা :
এতদঞ্চলে সে সময় আজান কিংবা যে কোনো প্রচারের কার্যক্রম মুখেই চালানো হতো। মাঝে মাঝে কোনো বিষয় প্রচারের জন্য বাজারে টিন পিটিয়ে মুখে প্রচার করা হতো। তা’ছাড়া পাতলা টিন দিয়ে বোঙ্গা বানিয়ে তা দিয়ে প্রচার করা হত। এ’রকম সময়ে আলহাজ্ব আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) সর্বদা নতুন চিন্তার বাস্তবায়নে তৎপর ছিলেন এবং নতুন প্রযুক্তির খোঁজ করতেন। আজানের আওয়াজ বৃদ্ধি করে কিভাবে তা দূরে পৌঁছানো যায়, সেই ইচ্ছার বাস্তবায়নের জন্য তিনি এ অঞ্চলে সর্বপ্রথম মাইকে আজান দেয়ার ব্যবস্থা চালু করেন। তাঁর এমন আয়োজনে বিস্মিত হয়ে সাধারণ মানুষ ভাবত, ‘মানুষ ছাড়া পাখা নিজে নিজে কিভাবে বাতাস দেয়?’ আর এই স্বয়ংক্রিয় পাখার বাতাসের আকর্ষণে মুসল্লিগণ মসজিদে এসে জামাতের নামাজ আদায়ের জন্য অধিক আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। প্রথম দিন মাইকে আজানের উচ্চ আওয়াজ শুনে লোকেরা দলে দলে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের দিকে ছুটে এসেছিল। কে আজান দিল? এত আওয়াজ কিভাবে হলো? সেদিন মানুষের মনে ছিল নানা কৌতুহল। শেষ পর্যন্ত তারা মসজিদ প্রাঙ্গণে এসে দেখেছিলো এ অতুলনীয় ব্যবস্থা। মোতাওয়াল্লী আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) এভাবে নতুন প্রযুক্তির সংযোজন ঘটিয়ে চমক সৃষ্টি করেছিলেন ।
জেনারেটর স্থাপন:
সেকালে এলাকার মানুষ মোমবাতি, চেরাগ আর হারিকেনের সাহায্যে আলোর ব্যবস্থা করতেন। আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) মসজিদে মোমবাতি- চেরাগ-হারিকেনের পাশাপাশি আধুনিক ও উন্নতমানের ‘হ্যাজাক লাইটের’ ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। কিন্তু এ ব্যবস্থাও তাঁর নিকট অপর্যাপ্ত মনে হয়েছিল। তাই কিভাবে মসজিদকে আরও অধিক আলোকিত করা যায় তার অনুসন্ধানে তিনি তৎপর ছিলেন। ফলে এক পর্যায়ে কলিকাতা থেকে জেনারেটর আমদানী করলেন। সে আমলে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা দিয়ে আলো জ্বালিয়ে মসজিদ আলোকিত করার বিষয়টিও ছিল এ এলাকার সকলের জন্য বিস্ময়কর।
বৈদ্যুতিক আলো :
সে আমলে সন্ধার পর বাজার ও দোকান-পাট থাকত জনশূন্য। কারণ তখন মানুষ ছিল কম আর সন্ধার পর বাজারে চলাচল করার মত পর্যাপ্ত আলো থাকত না। আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) বাজারের উন্নতিকল্পে মোমবাতি- চেরাগ-হারিকেনের পরিবর্তে জেনারেটর দ্বারা বৈদ্যুতিক আলো উৎপাদন করে দোকানে দোকানে সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। এভাবে সন্ধার পরও হাজীগঞ্জ বাজার আলোকিত করে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেন।
বৈদ্যুতিক পাখা :
সেকালে গরমের সময় তালের পাখায় বাতাস করাই ছিল সাধারণ মানুষের একমাত্র অবলম্বন। আর অফিস-আদালতে চালের নিচে বাঁশ বা কাঠ, দঁড়ি এবং ত্রিপল বা মোটা কাপড়ের সাহায্যে তৈরি করা তথা দড়ি টানা পাখা। বাতাস দেওয়ার পদ্ধতি হিসেবে চালু ছিল। সেই টানা পাখায় প্রায় সকল অফিসের বড় কর্মকর্তাদের বাতাস করার ব্যবস্থা হিসেবে প্রচলিতছিল।আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) সে সময় মুসল্লিদের আরাম আয়েশের জন্য ভারত থেকে বৈদ্যুতিক পাখা আমদানী করে মসজিদে বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা চালু করেছিলেন ।
সাইরেন :
এখন থেকে আট দশক আগে রমযান মাসে সূর্যাস্তে রোজা ভেঙ্গে ইফতারী করা এবং শেষ রাতে সুবহে সাদেকের পূর্বে সেহরি খাওয়ার সময় নিয়ে এ এলাকার মানুষের মধ্যে বেশির ভাগ সময় সংশয় কাজ করত। কেননা অধিকাংশ লোক ইফতারির সঠিক সময় ও সেহরীর শেষ সময় সম্পর্কে তেমন একটা অবগত হওয়ার তেমন একটা ব্যবস্থা ছিল না। আর সেকালে লোকজনের কাছে ঘড়ি বা রেডিও ছিল না বললেই চলে। উপরন্ত এই এলাকায় মুসলমানের সংখ্যাও ছিল কম। বড় মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ও মোতাওয়াল্লী সাহেব এ কঠিন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে হজ্বব্রত পালন শেষে সৌদী আরব থেকে ‘সাইরেন’ কিনে নিয়ে এসেছিলেন। সেহরী ও ইফতারের সময় সাইকেলের চাকায় চাকায় উটের রগের বেল্ট দিয়ে, হাতে সাইরানের চাকা ঘুরিয়ে বাজানো হতো সেই সাইরেন। এর বদৌলতে মুসলমান রোজাদারগণ ইফতার ও সেহরী খাওয়ার যথাযথ সময় বুঝতে পারতেন। তখন বহু দূর দূরান্তে থেকে উক্ত সাইরেনের আওয়াজ শুনা যেত এ সাইরেন বাজানোর ব্যবস্থাও ব্যাপক এলাকার মানুষের মাঝে চমক সৃষ্টি করেছিল।
মসজিদের সুউচ্চ মিনার :
হাজীগঞ্জ এর ব্র্যান্ড – হাজীগঞ্জ বড় মসজিদের নবনির্মিত মিনারটি সে সময়ে পাক ভারত উপমহাদেশের মধ্যে মসজিদের সবচেয়ে উঁচু মিনার হিসেবে প্রচলিত ছিল। আজান দিলে সেই আজান বহু দূর থেকে শোনা যেত। এছাড়া এ মিনারটি হাজীগঞ্জের তথা মসজিদের প্রতীক হিসেবেও চিহ্নিত হয়ে আসছে। হাজীগঞ্জকে চিনতে মসজিদের গম্বুজ মিনার খচিত ছবিই যথেষ্ট। এ’ মসজিদ এর মিনারটি হাজীগঞ্জ এর পরিচিতি বহন করে। এটি হাজীগঞ্জ এর ‘ব্যান্ড’। তাঁর এমন আয়োজনে বিস্মিত হয়ে সাধারণ মানুষ ভাবত, ‘ মানুষ ছাড়া পাখা নিজে নিজে কিভাবে বাতাস দেয়। ’ আর এ স্বয়ংক্রিয় পাখার বাতাসের আকর্ষণে মুসল্লিগণ মসজিদে এসে জামাতের নামাজ আদায়ের জন্য অধিক আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন।
উল্লেখ্য যে, আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) মসজিদ নির্মাণ সমাপ্তি কালীন সময়ে মসজিদের পূর্ব সীমানায় যে সুউচ্চ মিনার নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। মিনারা নির্মাণ কালে আহমাদ আলী পাটওয়ারী চরম ভাবে সমালোচিত হন। আলোচনা সমালোচনা তুঙ্গে। মিনারাটিকে অপ্রয়োজনীয় হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। নানা ধরনের অপকথা বলা হয়েছিল। সে গুলো নাই বললাম তীব্র আলোচনা সমালোচনার মুখে জরুরি ভিত্তিতে মিনারার কাজ শেষ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। নির্মাণকাজ চালাতে গিয়ে চরম আর্থিক সংকট দেখা দেয়ায় তিনি আবারও নিজ মালিকানাধীন ছয় কানি জমি বিক্রি করে মিনারার কাজ সম্পন্ন করেছিলেন।
অথচ কাজ সমাপ্তির পর সুউচ্চ এ মিনার থেকে মাইক আজানের ধ্বনিতে বহু দূর দূরান্তের মানুষ মুগ্ধ এবং অভিভূত হয়েছিল। সে সময় মসজিদের মিনারার দু’পাশে দোতলার দক্ষিণ পাশের কামরা থেকে সম্মানিত মোয়াজ্জিন আজান দিতেন। সে যুগে এ উঁচু মিনারটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। আশ্চার্যের বিষয় হলো এ সুউচ্চ মিনার তৈরিতে কোনো ইঞ্জিনিয়ারের সাহায্য না নিয়ে আহমাদ আলী পাটওয়ারী রহ. সাহেবের পরামর্শ এবং দিক নির্দেশনা আর ওস্তাগারের বুদ্ধিমত্তা মোতাবেক মিনারার কাজ সম্পন্ন করা হয়।
নির্মাণ কালে আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) নিজে নকশা ও পরিকল্পনা প্রনয়ণ করেছিলেন। সুনিপুণ ওস্তাগার আব্দুর রহমান রাজ তার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন। মিনারের ভিতর দিয়ে সিঁড়ির মাধ্যমে উপরে উঠার ব্যবস্থা করা রয়েছে। মিনারার চূড়ায় কামরাঙ্গা আকৃতির একটি ফানুস নির্মিত হয়েছে। মিনারটির গঠনপ্রকৃতি দেখে এখনও যেকোনো ইঞ্জিনিয়ারের চিন্তা জগৎকে প্রসারিত করে। এ মিনারের পাদদেশে দু’পাশে দু’টি স্তম্ভের অভ্যন্তরে দুটি ছোট কামরাও রয়েছে। বিশেষ করে এ বিশাল ও সুউচ্চ মিনারের নীচ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদে ঢোকার প্রধান ফটক বা শাহী গেট। আর সেই প্রধান শাহী গেইট বা ফটকটিও বিরল কারুকার্যখচিত,অত্যন্ত মনোরম ও দৃষ্টিনন্দনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে -আলহামদুলিল্লাহ ।
তথ্য সূত্র : অধ্যক্ষ ড.মো.আলমগীর কবির পাটওয়ারীর সম্পাদনায় আহমাদ আলী পাটওয়ারী রহ. ওয়াকফ এস্টেট এবং হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্স এর‘ ‘স্মারক গ্রন্থ ’। পর্ব-৬ । সম্পাদনায়-সাপ্তাহিক হাজীগঞ্জ এর ভার-প্রাপ্ত সম্পাদক আবদুল গনি। ১৫ এপ্রিল ২০২৫, চাঁদপুর।
চাঁদপুর টাইমস
১২ এপ্রিল ২০২৫
এজি