আন্তর্জাতিক

আজ আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস

আজ  ১৩ অক্টোবর মঙ্গলবার বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস। এবার দিবসের মূল প্রতিপাদ্য  ‘দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে সুশাসন, নিশ্চিত করবে টেকসই উন্নয়ন’ (Diaster Risk  Governance)। দিবসটিতে রাজধানীর ওসমানী উদ্যানে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২০ এর অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।

চলতি বছর করোনা মহামারীর পাশাপাশি একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশ। বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, এরপর মার্চ ও এপ্রিলে গ্রীষ্মের তীব্র তাপপ্রবাহ, জুন মাস থেকে শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি যা গত কয়েকবছরের তুলনায় অনেক বেশি। এরপর কয়েক দফায় বন্যা, সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। আর এখন বৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ বাংলাদেশের মানুষ। এদিকে বেশ কয়েক দফা ভূমিকম্পও অনুভূত হয়েছে, তবে মাত্রা ছিল কম।

এদিকে, এবারের শীতে ২০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি এ ২৬ দিনের তাপমাত্রা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২২ দিনই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায়। সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। চলতি বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৭ এপ্রিল।

ওইদিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া আরও দুদিন তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ৮ ও ৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয় রাজশাহীতে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, এবার আষাঢ়ের বৃষ্টি গতবারের তুলনায় কিছুটা বেশি হয়েছে। গত দু বছরের বর্ষা মৌসুমের তুলনামূলক চিত্র বলছে, ঢাকাসহ দেশের মধ্য অঞ্চলের পাশাপাশি উত্তর আর দক্ষিণ পশ্চিমের জেলাগুলোয় বৃষ্টির মাত্রা বেশি ছিল।

এ ভারী বৃষ্টির পর শুরু হয় বন্যা। এতে কয়েক দফায় দেশের ৩৯ জেলা কমবেশি বন্যা কবলিত হয়। সরকারি হিসাবে পানিতে ডুবে মারা যায়  ৪১ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েক লাখ পরিবার। সর্বশেষ চলতি অক্টোবর মাসের শুরুতেও দেশের কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

এদিকে মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে প্রাথমিক ক্ষতির পরিমাণ  ১১ শ কোটি টাকা বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। সাত জেলায় মারা যান ১৬ জন।

এসব দুর্যোগের বিষয়ে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে। উষ্ণায়নের কারণে প্রকৃতির পরিবর্তন হয়েই চলেছে। এ কারণে তাপমাত্রা কখনও বেশি অনুভূত হচ্ছে আবার কখনও শীতের তীব্রতা বেশি। একইভাবে বৃষ্টির পরিমাণেরও হেরফের হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বর্তমান অবস্থার মূল কারণ। আগামীতেও এখানে নানা ধরনের আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখা যাবে। ঋতুর ক্ষেত্রেও আসছে পরিবর্তন। আগের মতো আর ছয় ঋতু বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যায় না।’

এ দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানান, চলতি অর্থবছরে ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়া ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ চলমান আছে। ৬৪ জেলায় ৬৬টি ত্রাণ গুদাম নির্মাণ করছি, কাজ শেষের দিকে। এগুলো হয়ে গেলে ত্রাণ সহায়তা আরও দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। দুর্যোগ কবলিত এলাকায়, মানুষকে উদ্ধার, গবাদিপশু উদ্ধার, ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য প্রতিবন্ধী বান্ধব ৬০টি মাল্টিপারপাস রেসকিউ বোট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সেন্টার নির্মাণের জন্য জমি পেয়েছি। এছাড়া ভূমিকম্প সহনীয় রাষ্ট্র গড়তে জাপানের সহায়তায় কাজ শুরু হয়েছে। বজ্রপাতের জন্যও নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। একই সঙ্গে দুযোর্গপ্রবণ এলাকায় আরও এক হাজার আশ্রয়কেন্দ্র, এক হাজার মুজিব কিল্লা এবং এক হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ডিপিপি করা হয়েছে। এছাড়া যেকোনও দুর্যোগে উদ্ধার কাজের জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। এজন্য আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।

বার্তা কক্ষ,১৩  অক্টোবর ২০২০

এজি

Share