আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার সফল মাছ চাষি মো. শহিদুল ইসলামের খামারে দুর্বৃত্তদের প্রয়োগকৃত বিষে মরে গেছে প্রায় দেড়শ টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এতে তার প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ায় বর্তমানে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। কিভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে তুলবেন সেই চিন্তাই এখন তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। অন্যথায় তার পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
উপজেলার ইয়ারপুর ইউনিয়নের জিরাবো গ্রামের মৃত চাঁন মিয়া ১৯৯৮ সালে পারিবারিকভাবে নিজেদের বিলে এক লাখ টাকার মাছ চাষের মাধ্যমে খামার শুরু করেন। কালের বিবর্তনে চাঁন মিয়া পরোলোক গমন করায় তার পাঁচ ছেলে উত্তরাধিকার সূত্রে ওই মাছের খামারটি দেখাশুনা করে থাকেন। এরই মধ্যে তাদের মৎস্য খামারটির আয়তন বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে মাছের সংখ্যা ও বিনিয়োগের পরিমাণ। সর্বশেষ তাদের ৪০ বিঘার খামারটিতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অধিক পরিমাণ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছিল। কিন্তু তাদের এই সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে খামারটিতে বিষ প্রয়োগ করে। এতে খামারটিতে থাকা প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় দেড়শ টন মাছ মরে ভেসে ওঠে।
সরেজমিনে খামারটি ঘুরে দেখা যায় এখনও এর চারপাশসহ পুরো খামারেই মরা মাছ ভেসে রয়েছে। যদিও ইতোমধ্যে তারা লোকজন দিয়ে একশ টনের উপর মাছ সংগ্রহ করে তা মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন। তবুও ওই খামারের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাতাসে এখনও মরা মাছের গন্ধ ভেসে আসছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে পাঁচ ভাই মৎস্য খামারটির মালিকানায় থাকলেও গত ছয় বছর ধরে খামারটির সকল বিষয়ে তদারকি করে আসছেন তাদের ছোট ভাই মো. শহিদুল ইসলাম ব্যাপারী। তার দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এবং দিকনির্দেশনায় খামারটি আরও বেশি প্রসারিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় খামারটি মৎস উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় ২০১৬ সালে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপজেলা পর্যায়ে সফল মৎস্যচাষী হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমানের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন শহিদুল ইসমলাম।
মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, অল্প পুঁজি দিয়ে বাবার শুরু করা মৎস্য খামারটির মালিক এখন আমরা পাঁচ ভাই হলেও গত কয়েক বছর ধরে সকল বিষয়ে আমিই দেখাশুনা করে থাকি। প্রায় ৪০ বিঘা জায়গা জুড়ে খামার করে দীর্ঘদিন ধরে মাছের চাষ করে আসলেও গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে হঠাৎ খামারের মাছগুলো মরে পানিতে ভেসে উঠতে শুরু করে। এ সময় ৩০ থেকে ৪০ জন লোক নিয়ে প্রায় ৩০ টন মাছ অপসারণ করে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। এছাড়া এখন পর্যন্ত প্রায় দেড়শ টন মাছ মরে ভেসে ওঠায় আমাদের প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে প্রায় ২২ বছর ধরে মাছের চাষ করলেও বিগত দিনে এমন ঘটনা ঘটেনি। কেউ পূর্ব শত্রুতার জেরে পানিতে বিষ মিশিয়ে আমাদেরকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। এই খামারে ১০ বছর বয়সেরও বড় বড় মাছ ছিল যার সব মরে গেছে। দুর্বৃত্তরা শুধু মাছই মারেনি, তারা জেলেসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লোকের জীবিকায়ও বিষ দিয়েছে।
এ ঘটনায় আমরা আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়রি দায়ের করেছি। তবে যে বা যারা আমাদের স্বপ্নের খামারের পানিতে বিষ মিশিয়ে এত বড় ক্ষতি করলো আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি সরকারের কাছে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। অন্যথায় আমাদের পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা আমাদের একান্ত প্রয়োজন।
সাভার উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ বলেন, পুকুরে মাছ মরে ভেসে ওঠার খবর পেয়ে আমাদের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। প্রাথমিকভাবে পানি পরীক্ষা করে সমস্যা পাওয়া গেছে। এছাড়া অক্সিজেনের পরিমাণ কম এবং এ্যামেনিয়া ও পিএইচ এর পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে। যদিও পুকুরের মালিকরা অভিযোগ করেন বিষ প্রয়োগে তাদের মাছগুলো মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্তু পানিতে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা তা নিরুপণের কোনো যন্ত্রপাতি আমাদের মৎস অধিদফতরে নেই।
তিনি বলেন, সাধারণত পানিতে পিএইচ থাকার কথা সাড়ে ৭ থেকে সাড়ে ৮ সেখানে পাওয়া গেছে ৯ এর উপরে, এ্যামোনিয়া থাকার কথা .০৫ কিন্তু পাওয়া গেছে .৫ যা অনেক বেশি এবং অক্সিজেন প্রয়োজন সর্বনিম্ন ৫ সেখানে মাত্র ২ পাওয়া গেছে।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম আরা নিপা বলেন, খামারে মাছ মারা যাওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা বিষয়টি জানিয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছে যেটা পুলিশ তদন্ত করছে। পাশাপাশি আমরা তাদের নাম নোট করে রেখেছি। যদি সরকারিভাবে কোনো আর্থিক প্রণোদনা দেয়া যায় সে বিষয়ে আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ রিজাউল হক দিপু বলেন, এ বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়রি হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি।
বার্তা কক্ষ,১৭ আগস্ট ২০২০