চাঁদপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গোৎসব শুরু বুধবার : ২শ’ ২২ মন্ডপ

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা কাল ৯ অক্টোবর বুধবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। শুভ মহালয়ায় দেবীর আবাহন শেষে এখন মন্ডপে-মন্ডপে দেবী বরণের প্রস্তুতি চলছে। কৈলাশ থেকে মর্ত্যলোকে আসবেন দেবী দুর্গা। এ উৎসব ঘিরে,সারাদেশের মন্ডপে-মন্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রতিমা তৈরিতে মাটির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।এখন রং-তুলির আঁচড় শেষে প্রতিমা মন্ডপে নেওয়ার অপেক্ষায় সবাই। তাই ব্যস্ততায় দিন-রাত এক করে ফেলছেন প্রতিমাশিল্পীরা। দম ফেলার সময় নেই প্রতিমা শিল্পী ও আয়োজকদের।

এদিকে পূজায় মন্দিরে আগত দর্শনার্থীদের নজর কাড়তে, সাজসজ্জায় নানা উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন মন্দিরে এখন চলছে থিমভিত্তিক সাজসজ্জার কাজ। সারাদেশে বইছে উৎসবের আমেজ। সায়ংকালে ধূপের ধোঁয়া, ঢাক-ঢোল, উলুধ্বনি আর কাঁসর-মন্দিরার সঙ্গে ভক্তিমন্ত্রে মেতে উঠবে পূজামন্ডপ। কাল ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গোৎসব। এরপর মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী,মহানবমী ও দশমীতে ১৩ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে ৫ দিনব্যপি এ উৎসবের শেষ হবে। এ বছর দেবী দুর্গা মর্তে আগমন করবেন দোলায় আর ঘোড়ায় চড়েই তিনি ফিরে যাবেন স্বর্গলোকে। সরকারি হিসেবে সারাদেশে এ বছর ৩২ হাজার ৬শ ৬৬টি মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলায় ২শ ২২টি মন্ডপে এবার দুর্গাপূজা উদযাপন হবে বলে জানা গেছে ।

শিল্পীদের যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। তাদের নিখুঁত হাতের ছোঁয়ায় কৃত্রিম জীবন পাবেন দেবী দুর্গা,শিব, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুরসহ অন্যান্য প্রতিমা। এছাড়া কোনো কোনো প্রতিমায় আবার পরানো হচ্ছে শাড়ি, হাতের বালাসহ নানা গহনা। পাশাপাশি আলোক সজ্জা, প্যান্ডেল তৈরি, মন্ডপ ও তার আশপাশে সাজসজ্জার কাজসহ নানা কাজেও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন পূজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ফলে দুর্গোৎসব উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবম্বীদের মধ্যে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। কেউ কেউ কেনা কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

‘মহা চন্ডী’তে উল্লেখ আছে,ত্রেতা যুগে ভগবান রাজা রাম চন্দ্র দশানন রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে রত হন। পাপের বিনাশের লক্ষ্যে দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার কাছে শক্তি বৃদ্ধির আশায় শরৎ কালে তার পূজা করেছিলেন এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে দেবী সীতাকে উদ্ধার ও রাবণকে হত্যা করতে সক্ষম হন। সেই থেকে পৃথিবীতে প্রতি বছর শরৎকালে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গোৎসব পালন করে আসছেন।

২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এ বছরের শারদ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবী পক্ষের শুরুর তিথি এ মহালয়া।

হিন্দু শাস্ত্রমতে,মহালয়া তিথিতে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ দিন ভোরে চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়েই মর্ত্যলোকে দেবী দুর্গাকে এ আমন্ত্রণ জানানো হয়। আর এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। পূজাকে সামনে রেখে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনগুলো প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে। পূজা মন্ডপের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখা ও প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকার তার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। পূজার প্রস্তুতি নিয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাগণ বৈঠক করেছেন। এতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটিসহ বিভিন্ন অংশীজনরাও অংশ নিয়েছে।

কাল ৯ অক্টোবর সকাল ৮টা ৪৪ সেকেন্ডের মধ্যে মহাষষ্ঠী কল্পনারম্ভ শেষ করতে হবে। শায়ণকালে দেবীর অধিবাস ও আমন্ত্রণ। ১০ অক্টোবর সকাল ৭টা ৫৩ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের মধ্যে দেবীর মহাসপ্তমী পূজা শেষ করতে হবে। ১১ অক্টোবর সকাল ৬টা ৫২ মিনিটের মধ্যে মহাষ্টমী পূজা ও ৬ টা ৫২ মিনিটে আরম্ভ এরপরেই কুমারী পূজা। পরে ৭টা ৪১ মিনিটের মধ্যে সন্ধী পূজা শেষ করতে হবে। ওইদিনই সকাল ৭টা ৪১ মিনিট পর মহানবমী আরম্ভ ও ৯ টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে মহানবমীর বিহিত পূজা শেষ করতে হবে। ১২ অক্টোবর ৬টা ১২ মিনিটের মধ্যে মহানবমীর বিহিত অধিক পূজা শেষ করতে হবে। একই দিন সকাল ৭টা ৩৭ গতে পূর্বাহ্নের মধ্যে দশমী পূজা সমাপনান্তে বিসর্জন।

পূজার প্রস্তুতি এখন প্রায় সম্পন্ন। সারা দেশেই কেন্দ্রীয় ও প্রান্তিকপর্যায়ে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে পূজার। ইতোমধ্যে আমরা সারাদেশে নির্দেশনা দিয়েছি ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্য বজায় রেখে পূজা করার জন্য। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে পূজার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে। ইতোমধ্যে সরকারের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। সেখানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ আইজিপি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন,পূজাকে ঘিরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। এমনকি প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

এদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রাণের উৎসব সার্বজনীন শারদীয়া দুর্গোৎসব। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মঙ্গলবার ৮ অক্টোবর সকালে হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত পরিষদ অডিটোরিয়ামে সামাজিক সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চাঁদপুরের মান্যবর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

তিনি বলেন,‘আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির দেশ। আসন্ন শারদীয়া দুর্গোৎসব নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। এ বিষয়ে পূঁজা আয়োজকদের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে।পূঁজা উদযাপনে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী টিম সবাইকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুর রকিব ও মেজর মো.আরিফ হোসেন। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাপস শীল।

বক্তব্য দেন হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ এর খতিব ও পেশ ইমাম মুফতি আবদুর রউফ,হাজীগঞ্জ উপজেলা পূঁজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাবু রুহিদাস বণিক,মুফতি মাও. আব্দুর রউফ,অধ্যক্ষ মো.মিজানুর রহমান,হাজীগঞ্জ উপজেলা জামায়াত এর আমীর মো.কলিম উল্ল্যাহ,রাধাকান্ত দাস রাজু,স্বামী বিবেকানন্দ বিদ্যা সেবাশ্রম সেবাময়া নন্দ,ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান,ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রচার সম্পাদক মো.কামাল,হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাব এর সভাপতি হাসান মাহমুদসহ প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ-ফরিদগঞ্জ সার্কেল) পংকজ কুমার দে,উপজেলা সহকারী কমিশন(ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিফাত জাহান,থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহীউদ্দিন ফারুক,অধ্যক্ষ আবু ছাইদ,হাজীগঞ্জ মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান,উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি বাবু দীপক চন্দ্র দাস,প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান,উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো.আবু বকর ছিদ্দিক তপাদার ছিলেন,ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন,মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার সুনির্মল দেউড়ি,সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জাকির হোসেন,হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. ফারুক আহমেদ,বলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইকবাল হোসেন,ধড্ডা পপুলার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জ্যোৎস্না আক্তার,সুহিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.জয়নাল আবেদীন,জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ হাজীগঞ্জ উপজেলা নায়েবে আমীর মোজাম্মেল হোসেন মজুমদার পরান,পৌর আমীর আবুল হাসনাত সহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানগণ,রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

প্রত্যেকটি পূজামন্ডপে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন,‘সবার মধ্যে আস্থার মনোভাব রয়েছে। আশা করছি,শারদীয় দুর্গোৎসবে কোন সমস্যা হবে না। সারাদেশে সরকারি হিসেব মতে, ৩২ হাজার ৬ শ ৬৬টি মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হবে। চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলায় ২শ ২২ টি ও হাজীগঞ্জ উপজেলায় ২৯টি মন্ডপে এবার দুর্গাপূজা উদযাপন হবে বলে জানা গেছে ।

সম্পাদনা : আবদুল গনি
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
৮ অক্টোবর ২০২৪
এজি

Edit

Share